মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতি ও নিবার্চন

জনগণের স্বাথের্, দেশের কল্যাণে স্বচ্ছতার মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করা হলে, জাতীয় নিবার্চনে জনগণ বিপুলভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং পছন্দমতো প্রাথীের্ক ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নিবার্চন করবে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চনে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের মূল কাজ হবে সৎ ও যোগ্য প্রাথীের্ক নিবার্চনে মনোনয়ন দেয়া।
মোহাম্মদ আবু নোমান
  ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

রাজনীতিতে মতভেদ থাকবে, প্রতিদ্ব›িদ্বতা থাকবে, বিরোধিতা থাকবে; কিন্তু প্রতিহিংসা বা সংঘাত মেনে নেয়া যায় না। নিবার্চন এলেই একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে নিবার্চনের চ্যালেঞ্জে দেশ যেন একটি অস্থির অবস্থায় পড়ে যায়। সবর্ত্রই উদ্বেগ, আতঙ্ক ও ভয়ভীতি বিরাজ করে। এমন হওয়াটা সত্যিই দুভাের্গ্যর। আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চন যদি বিতকির্ত হয়, তাহলে দেশ ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেশবাসীর।

স্বাধীনতার পর থেকে ১০টি জাতীয় সংসদ নিবার্চন হয়েছে বাংলাদেশে। এখন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন শুরুর পথে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন। অতীতেও জাতির কাক্সিক্ষত স্বচ্ছ নিবার্চন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ইসির নিবার্চনের পুনঃতফসিল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিধার্রণ করলে এমন কি ক্ষতি হতো? কারণ, সামনের নিবার্চনের সুষ্ঠুতা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। প্রতিটি জাতীয় নিবার্চনই দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ হলেও সামনের একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন অতীতের যে কোনো নিবার্চনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূণর্। এখন নিবার্চন কমিশনসহ সব অংশীজনের দায়িত্ব নিবার্চনের অনুক‚ল পরিবেশ নিশ্চিত করা। নিবার্চন আসবে এবং সবাই যার যার ইশতেহার প্রকাশ করবেন। দলগুলো জনগণের কাছে দেশের কল্যাণে নানা অঙ্গীকার ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে। সবর্সাধারণের কাছে যাদের ইশতেহার পছন্দ হবে, তাদের ভোট দেবেন। পরবতীর্ সময়ে যারা বিজয়ী হবেন তারা সরকার গঠন করবেন। আর বিরোধী দল সংসদ গিয়ে সরকারের কমর্কাÐের ওপর নজরদারি রাখবে। রাজনীতি মানেই দেশকে সামনে নিয়ে যাওয়া, মানুষের জন্য কথা বলা। যখন কোনো সরকার নিবাির্চত হয়, তখন যারা বিরোধী থাকে, তারা সরকারের ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনা করতে পারে। আলোচনা-সমালোচনা থাকবে শুধুমাত্র দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে। এ জন্য অতি জরুরি একটি গতিশীল সংসদের।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারি দল ও বিরোধী দল পরিপূরক সত্তা। গণতন্ত্রে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার কোনো স্থান নেই। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা সবর্দাই অনিবাযর্। যার মূল কারণ ছাড় দেয়ার মানসিকতা কারোরই নেই। জনগণের সেবার নামে জনগণকে জিম্মি করাই যেন বতর্মান রাজনীতির মূল লক্ষ্য। এই মানসিকতার পরিবতর্ন না হলে রাজনীতিতে কখনোই স্থিতিশীলতা আসবে না। দেশ রক্ষা ও দেশের উন্নয়নের স্বাথের্ সব রাজনীতিবিদের ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, রাজনীতিকদের কোনো অবিবেচক সিদ্ধান্ত বা ভুলের কারণে যদি দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়ে, নিবার্চন ভুÐুল হয়ে যায়, তাহলে দেশ অগণতান্ত্রিক অপশক্তির কবলে পড়তে পারে, ভয়ঙ্কর বিপযর্য় নেমে আসতে পারে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিও বেশির ভাগ দল শ্রদ্ধাশীল নয়। এ কারণেই আমাদের রাজনীতি ও নিবার্চন দিন দিন সংঘাতপূণর্ হয়ে উঠছে। প্রায়ই রাজনীতিকরা প্রতিপক্ষকে উৎখাত, নিশ্চিহ্ন বা নিমূর্ল করার হুমকি দেন। সুস্থধারার রাজনীতিতে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়। সাথর্ক নিবার্চনের জন্য দরকার সব দলের ও সব মতের লোকের অংশগ্রহণ। এ ব্যাপারে নিবার্চন কমিশনের ভ‚মিকাই মুখ্য, তবে সরকারকে অবশ্যই সহায়ক হতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার ঝামেলা দূর করতে হবে।

তফসিল ঘোষণা মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া নয়। ইসিকে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যুক্তিসম্মত সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। রাজনৈতিক দলকেও সদিচ্ছা ও সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর নিবার্চনী পরিবেশ ও নিয়ম বজায় থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। নিবার্চন কমিশনের কথা ও কাজে মিল থাকতে হবে। কিন্তু এই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার অবস্থান নিবার্চন কমিশন রক্ষা করতে পারবে কিনা এটাই সচেতন মহলের শঙ্কা ও প্রশ্ন? সরকার নিবার্চনের ক্ষেত্রে সহায়ক শক্তি মাত্র, মুখ্য শক্তি নিবার্চন কমিশন। কিন্তু আমাদের দেশে ঘটে থাকে এর সম্পূণর্ উল্টো। নিবার্চন কমিশনের ওপর এখনো জনগণের আস্থা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চন নিশ্চিত করতে ইসিকে নিরপেক্ষ ও জোরালো ভূমিকা নিয়ে কাজ করতে হবে। এটা ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জের। কারণ বিগত নিবার্চনের নেতিবাচক অস্বস্তি নতুনভাবে সবর্সাধারণ গ্রহণ করবে না। বিরোধী দলের লোকদের বিরুদ্ধে অকারণে মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। গতবারের মতো জোড়াতালি দেয়া নিবার্চন করা যাবে না। এ জন্য ইসিকে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।

নিবার্চনসংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহিঞ্চু হতে হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন সুনিশ্চিত করতে হলে তার পূবর্শতর্গুলো সরকার ও বিরোধী দলকে মেনে চলতে হবে। সমঝোতা ছাড়া গণতন্ত্র সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একথাও ঠিক যে, নিবার্চনের সবটাই কমিশনের দায়িত্ব নয়। নিবার্চন কমিশনকে কাযর্কর করতে হলে সরকার ও বিরোধী দলকে সমঝোতার ভিত্তিতেই তা করতে হবে।

প্রত্যেক নিবার্চনকমীের্ক তাদের দক্ষতা, নিরপেক্ষতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিমিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ দেয়াসহ তাদের নিরপেক্ষতা, দক্ষতা, একাগ্রতার সঙ্গে, সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা রোধে দেশের সব নাগরিকের সাবির্ক সহযোগিতা প্রয়োজন। জনগণের মধ্যে ব্যাপক কৌত‚হল রয়েছে সামনের নিবার্চন নিয়ে। বারবার নিবার্চন ব্যবস্থার পরিবতর্ন আনা হলেও সবর্সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য কাক্সিক্ষত স্বচ্ছ নিবার্চন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। স্বচ্ছতার প্রশ্নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নিবার্চন বজর্ন করার ইতিহাস দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে একাধিকবার। নিবার্চন ব্যবস্থার অসঙ্গতি, অস্বচ্ছতা, পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণকে বারবার কলঙ্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আমাদের অতীতের নিবার্চন। একটি সুষ্ঠু নিবার্চন সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই সব দলের স্বতঃস্ফূতর্ অংশগ্রহণ একান্ত কাম্য।

নিবার্চন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে নিবার্চন কমিশনকে আজ্ঞাবাহী হলে চলবে না। কারো ইশারা-ইঙ্গিতের ‘পুতুল’ হলে চলবে না। সব দলকে সমান সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। নিবার্চনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য নিবার্চন কমিশনকে আরো বেশি শক্তিশালী ও স্বাধীনভাবে কাজ পরিচালনা করতে হবে। নিবার্চন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে থাকতে হবে। গত মৌসুমে জনগণ তাদের পছন্দের প্রাথীের্দর ভোট দিতে পারেনি। আর যাতে সেই ধরনের ঘটনা না ঘটে। নিবার্চনের সময় ভোটকেন্দ্রে প্রাথীর্র পক্ষের এজেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু নিবার্চনের বড় বাধা। বরাবরই ক্ষমতাসীন দল নিজেদের মজির্মাফিক এর সুবিধা নিয়ে থাকে বলে অভিযোগ ওঠে। গ্রামাঞ্চলে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী ও কমীর্রা অন্য দলের এজেন্টদের ওপর শারীরিক নিযার্তন করতেও দ্বিধা করে না। কেন্দ্রের আশপাশে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা এ সময়ে যাতে অঘটন ঘটাতে না পারে, এ জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে কঠোর পাহারা নিশ্চিত করতে হবে।

পুলিশের বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে হয়রানি, গায়েবি মামলা, নিবার্চনকে সামনে রেখে অহেতুক গ্রেপ্তার বাণিজ্য করে প্যানিক সৃষ্টি না করতে পারে সেদিকে নিবার্চন কমিশনকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে মানুষের দৃষ্টি বাইরে, জনগণের সমথর্ন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে নিবার্চনে জয়ী হওয়া বা ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নেই। মানুষ নিবার্চন চায় এবং যোগ্য প্রাথীর্ ও দলকে ভোট দিতে চায়।

বাংলাদেশ বতর্মান বিশ্বে এক সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের এই সম্মানজনক অবস্থান ধরে রাখতে হলে অবশ্যই দূরদশীর্, বিচক্ষণ, দৃঢ়চেতা, সাহসী ও রাজনীতিতে অভিজ্ঞ নেতৃত্বের প্রয়োজন। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ রক্ষা, ভোটারদের নিরাপত্তা বিধান এবং কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় না দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ, গণনা ও নিরপেক্ষ মানসিকতা না হলে নিবার্চন সুষ্ঠু হতে পারে না। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে দলীয় সরকারের অধীনেই নিবার্চন হয়। আমাদের দেশে সমস্যা হলো, আমরা দল, সরকার ও দেশকে আলাদা করে দেখার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। নিয়ম হচ্ছে, দল দলের জায়গায় থাকবে, সরকার সরকারের জায়গায়; দল ও সরকারের ঊধ্বের্ থাকতে হবে দেশপ্রেম। দল ও সরকার যদি এক হয়ে যায়, তাহলে নিবার্চন কমিশনের অবস্থাতো ‘...পুতুলের কী দোষ’!

জনগণের স্বাথের্, দেশের কল্যাণে স্বচ্ছতার মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করা হলে, জাতীয় নিবার্চনে জনগণ বিপুলভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং পছন্দমতো প্রাথীের্ক ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নিবার্চন করবে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চনে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের মূল কাজ হবে সৎ ও যোগ্য প্রাথীের্ক নিবার্চনে মনোনয়ন দেয়া।

সব মিলিয়ে দেশের জনসাধারণের একটাই আশা, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সফল হবে।

মোহাম্মদ আবু নোমান: কলাম লেখক

ধনঁহড়সধহ১৯৭২@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22543 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1