শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নয়াপল্টন রণক্ষেত্র

সহিংসতা প্রত্যাশিত নয়
নতুনধারা
  ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকমীের্দর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘষের্ গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুরো পল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, দলীয় ফরম কিনতে আসা নেতাকমীের্দর চাপে নয়াপল্টনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ বিএনপির নেতাকমীের্দর সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং বাকবিতÐার একপযাের্য় ব্যাপক সংঘষের্র সূত্রপাত ঘটে। সংঘষর্ চলাকালে পুলিশ বিএনপির নেতাকমীের্দর লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড, কঁাদানে গ্যাস ও প্যালেট বুলেট নিক্ষেপ করে; পাশাপাশি বিএনপির নেতাকমীর্রাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুলিশের দুটিসহ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পথচারীদের কয়েকটি গাড়ি এবং মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ নেতাকমীর্রা। সংঘষের্র ঘটনায় উভয়পক্ষেই আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে পল্টনে সংঘষের্র খবর দ্রæত ছড়িয়ে পড়লে গোটা রাজধানী জুড়েও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন আসন্ন। সারা দেশের মানুষ যেখানে আশা করছে, এবারের নিবার্চন হবে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও সবর্জনগ্রাহ্য। এ অবস্থায় বিএনপি কাযার্লয়ের সামনে দলীয় নেতাকমীের্দর সঙ্গে পুলিশের এই সংঘষর্ কোনো অশুভ বাতার্বহ কিনা, সে বিষয়টিও সারা দেশে আলোচিত হচ্ছে। সংঘষের্র ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। বুধবারের এই সংঘষর্ ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় তিনটি মামলা দায়েরের পাশাপাশি ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরো ৩০ জনকে শনাক্ত করেছে ডিএমপি। বুধবার দুপুরে সংঘষের্র পর পরই পুলিশের গাড়িয়ে আগুন ধরাতে উদ্যত এক যুবকের ছবিসহ সংঘষের্র কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়। সংঘষের্র ঘটনার পর বিএনপি এবং পুলিশ একে অপরকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দিয়েছে। বিএনপির দাবি, বিনা উসকানিতে পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। এই আক্রমণে সরকারের নিদের্শ আছে বলেও দলটি অভিযোগ তোলে। অপরদিকে পুলিশ দাবি করেছে, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করে তারা একটি ইস্যু তৈরি করার জন্যই পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। অপরদিকে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকমীের্দর সংঘষের্র ঘটনায় দলটির নেতা মিজার্ আব্বাসকে দায়ী করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিবার্চন বানচাল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে তারা এই হামলা করেছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির ‘সন্ত্রাসী’ চেহারা আবারও প্রকাশ পেল বলে তিনি মন্তব্য করেন। এটা ঠিক যে, পল্টনে সংঘষের্র প্রকৃত ঘটনা সঠিক তদন্তে উঠে আসবে; কিন্তু সংঘষর্ বা সহিংস ঘটনা কারো প্রত্যাশা হতে পারে না।

‘পুলিশ রাষ্ট্রের কমর্চারী, পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না’ পুলিশের ঊধ্বর্তন কমর্কতার্র এমন বক্তব্য প্রত্যেকেরই আমলে নেয়া কতবর্্য হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্, যা অস্বীকারের উপায় নেই। পল্টন এলাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বিএনপির নেতাকমীের্দর সুশৃঙ্খল হতে অনুরোধ করে, এটাই স্বাভাবিক। অপরদিকে বিএনপি কমীর্রা পুলিশের অনুরোধ মেনে চললে এমন একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সহজেই এড়ানো যেত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে উভয়পক্ষেরই জরুরি ছিল শান্তিপূণর্ অবস্থানে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জোর দেয়া। বাস্তবতা হলো, এমনটি ঘটেনি বলেই জাতিকে একটি সংঘষের্র ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হলো। এতে কার লাভ হলো, কার কী ক্ষতি হলো, তার চেয়ে বড় বিষয়Ñ রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হলো; যা প্রত্যাশিত নয়।

সবোর্পরি বলতে চাই, রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক, যে কোনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, তা মোকাবেলা করতে হবে অত্যন্ত শান্তিপূণর্ভাবে। মনে রাখা দরকার, সহিংস ঘটনা দেশ ও জনগণের জন্য শুভপ্রদ হতে পারে না। ফলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কমর্পরিকল্পনা নিধার্রণ করবে, এমন প্রত্যাশা সবার। সংঘষর্, সহিংসতা ও কোনো ধরনের নাশকতার পুনরাবৃত্তি কারো কাম্য নয়। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসোপানে হঁাটছে, এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে রাজনীতিও হতে হবে সহনশীল; তা ছাড়া রাজনীতির গুণগত পরিবতর্নও ঘটাতে হবে। অপরদিকে পুলিশ যেন কাউকে প্রতিপক্ষ না ভাবেÑ তা নিশ্চিত করতে হবে তাদেরই। শান্তিপূণর্ পরিবেশের মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাক- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22633 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1