শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় সংসদ নিবার্চন এর ফল কী হতে পারে?

সবের্শষ যে দায়িত্বটা এখন তারা পালন করতে পারে তা হচ্ছে নিবার্চন প্রক্রিয়া ও নিবার্চন রায়কে অগ্রাহ্য করা। হয়তো নিবার্চনের সময় এমন একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, যা নিবার্চনের রায় আন্তজাির্তক পযাের্য় স্বীকৃতি দিতে রাজি হবে না। এখন প্রায় নিশ্চিত বাংলাদেশের বতর্মান প্রধানমন্ত্রী যিনি দক্ষতা, যোগ্যতা ও দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে দেশ শাসন করেছেন, তার ক্ষমতায় আসা সময়ের ব্যাপার। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন হোক- সেই প্রত্যাশা সবার।
ডা. এস এ মালেক
  ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বিএনপি প্রথম থেকেই সংলাপের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। তাদের ধারণা ছিল বড় বড় জনসভা করেও বেশ কিছুটা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে চাপ প্রয়োগ করে সংলাপে আসতে সরকারকে বাধ্য করবে। এরূপ কথা-বাতার্ অনেকবার বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশি ক‚টনীতিকদের সঙ্গে দেন-দরবার করে, দেশের বাইরে লবিস্ট পাঠিয়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করছিল। তাই বিএনপি তার মূল দাবিগুলো অথার্ৎ, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশতর্ মুক্তি, সংসদকে অকাযর্কর ও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনেই নিবার্চন, রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহার ও নতুন করে নিবার্চন কমিশন গঠন এসব দাবি তারা করে আসছে। এই দাবির প্রশ্নে আপস করবে না বলেছিল।

কৌশলগত কারণে সরকারি দলের পক্ষে বলা হয়েছে সংলাপে বসার কোনো প্রয়োজন নেই। শতর্ আরোপ করে সংলাপ হয় না। যা না কি সবসময় বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে। সরকার ভালো করেই জানতেন হয়তো একটা সময় সংলাপে বসা প্রয়োজন হবে। এদিকে বিএনপি যে ধরনের আন্দোলন করার চিন্তাভাবনা করেছিল, আশা করেছিল সরকারের পতন ঘটবে ও তাদের মতো করে নিবার্চন অনুষ্ঠিত করবে। তাদের মতো করে অন্তবর্তীর্কালীন সরকার গঠন করবে। বেগম জিয়া অথার্ৎ বিএনপির দলপ্রধান বেগম জিয়া ও পুত্র তারেক রহমান জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করার বিধি-নিষেধ সৃষ্টি হওয়ায় এবং বিকল্প কোনো নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি বারবার প্রমাণ করেছে আন্দোলন করার মতো শক্তি তাদের নেই। হুমকি যতই দিক না কেন একটা পযাের্য় যখন বুঝতে পেরেছে নেতৃত্বের সঙ্কটের কারণেই তাদের আন্দোলন ডানা বেঁধে উঠছে না। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম ও বি. চৌধুরীর বিকল্পধারা এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এই তিনটি ক্ষুদ্র দল সরকার বিরোধিতায় নেমে ক‚ল-কিনারা না পেয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত ও ডানপন্থি দল বিএনপির স্মরণাপন্ন হয়েছে। এভাবেই ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। বিএনপির ধারণা হচ্ছে ড. কামালের মতো ব্যক্তিকে যদি ঐক্যফ্রন্টের নেতা করা যায় তাহলে বেগম জিয়ার শূন্যস্থান পূরণ হবে। তাই ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ড. কামালের মাধ্যমে সংলাপে বসার জন্য সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি প্রস্তাব পেশ করা হয়। এবার সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিক সংলাপে রাজি হন। দ্বিতীয় বৈঠকে ড. কামাল প্রথম বৈঠকের প্রতিপাদ্য ছিল ৭ দফা (বিএনপি) প্রদত্ত, দ্বিতীয় বৈঠকে যে ৪ দফা দেয়া হয়েছে তা ৭ দফারই বিকল্পরূপ। দুই বৈঠকেই আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু কিছু বিষয়ে সমঝোতা হলেও মূল বিষয়ে সমঝোতা হয়নি। একই সুযোগে সরকার প্রয়োজনীয় সব দল যারা নিবার্চনে অংশ নেবে তাদের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে। এরশাদের জাতীয় পাটির্, বামজোট ও বিকল্পধারাসহ মোট ২৫টি দল সংলাপে অংশ নেয়। প্রথম থেকে সংলাপে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বেগম খালেদা জিয়াকেই মুক্ত করা ছিল তাদের মূল দাবি। তাদের দ্বিতীয় দাবি ছিল সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে অন্তবর্তীর্কালীন সরকার গঠন। সরকারি দল প্রথম থেকেই বলে আসছে সংবিধান বহিভ‚র্ত কোনো কাজ করবে না। আলোচনার পরেও সরকার এই অবস্থা থেকে সরতে রাজি নয়। এটা বুঝতে পেরে বিএনপি আবার আন্দোলনের হুমকি দেন। কয়েকটা বড় জনসভাও করেছে। এসব শুধু বিএনপির জনসভা নয়। ঐক্যফ্রন্টের জনসভা। ড. কামাল কিন্তু সম্পূণর্ আশাবাদ হতে পারেননি। তিনি ক্ষুদ্রভাবে সংলাপ চালাবেন, প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী তাতে খুশি হয়েছেন। ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের তফসিল প্রধান নিবার্চন কমিশনার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রদত্ত ভাষণে ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরেও সংলাপ হবে কিনা কে জানে? এখন বিরোধী দলের কাছে এটা পরিষ্কার নিবার্চন কমিশন ঘোষিত সঠিক সময়েই নিবার্চন হতে যাচ্ছে। দেশব্যাপী অনেক বিএনপি প্রাথীর্ প্রচারকাযর্ চালাচ্ছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কোনো ক্ষমতা নেই যে তাদের দাবিয়ে রাখবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি তাদের বড় কথা নয়। মুখে যাই বলুক না কেন তারা ভালো করেই জানেন, ক্রিমিনাল অফেন্স মামলায় খালেদা জিয়া আদালত কতৃর্ক দÐিত। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নিবার্চনে যাবে না বিএনপি এরূপ শতাের্রাপ কোনো যুক্তিপূণর্ ও আইনগত দাবি হতে পারে না। বিএনপিকে অবশ্যই নিবার্চনে যেতে হবে। নেতাদের ইচ্ছা যাই হোক না কেন বিএনপির সাধারণ কমীর্রা এখন নিবার্চনমুখী। নেতৃত্বের একাংশ যারা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেককে দলীয় নেতৃত্ব থেকে অপসারণ করতে চান, তারা এ সুযোগ ছাড়বেন না। বিএনপির নেতৃত্ব তাই এখন আর একক সংঘবদ্ধ কোনো এক নেতার নিদেের্শ চলছে না। এসব বুঝে-শুনেই বোধহয় কারাগার থেকে নিবার্চনের নিদের্শ দিয়েছে। তাই সব দল নিয়ে নিবার্চন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখন আর বিদেশি প্রভুদের চাপ প্রয়োগ করে শতর্ আদায়ের এবং নিবার্চন বয়কট করাও সম্ভব নয়। মনে হয় সঠিক বাস্তবতা উপলব্ধি করে সঠিক নিদের্শ দিয়েছেন। এটা নিশ্চিত বিএনপি পূবর্ থেকেই জানতো যে ক্ষমতাসীন দলকে নিবার্চনে পরাজিত করে সম্ভব নয়। দেশরতœ শেখ হাসিনা সুষ্ঠুভাবে সরকার পরিচালনা করে অথর্নীতি এমন একপযাের্য় পৌঁছে দিয়েছেন, যার সফলতায় বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ। বতর্মান আওয়ামী লীগে নেতৃত্বে জাতির জনকের কন্যা শক্ত ভিত্তির ওপর দলকে সুসংহত করেছেন। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় বিদেশিদের মতে ৭০ শতাংশ, এর সঙ্গে যদি আওয়ামী লীগ সমথর্কদের যোগ করা হয়, তাহলে অনায়াসেই যে তিনি নিবার্চনে বিজয়ী হবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তা ছাড়া বহু আগে থেকে যেভাবে মাঠে নেমে কাজ করছে আওয়ামী লীগের নেতারা আর যে বাকি সময় আছে তাতে সরকারি দলের জনসমথর্ন বেড়ে গিয়ে ৭৫% পেঁৗছে যাবে। তাই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগের নিবার্চনে বিজয় এখন সময়ের ব্যাপার, তা এখন প্রমাণ হতে যাচ্ছে। প্রয়োজন এখন শুধু সঠিকভাবে মনোনয়ন দেয়া ও নিবার্চন বিধ্বংসী শক্তির প্রতিরোধ করা। এই দুটি কাজ করতে পারলে আগামী নিবার্চনের আকৃতি ও প্রকৃতি হবে প্রায় ‘৫৪ বা ’৭০-এর নিবার্চনের মতো। ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে বিরোধী দল আর নেতৃত্বে ড. কামাল যিনি শত প্রতিরোধের মুখেও বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু এবং জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করেন। ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে যে কারণেই তিনি আসুক না কেন স্বাধীনতা অজর্নকারী দল ও তার নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থাকার বিষয়টি অগ্রাহ্য করা যাবে না। এ কথাও ঠিকÑ শান্তিপূণর্ রাজনীতি ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ড. কামাল ঐক্যফ্রন্টে বৃহত্তম শরিক বিএনপি যদি নিবার্চনের কোনো পযাের্য় সহিংস সঙ্কট সৃষ্টি করে নিবার্চন বানচাল করতে চায়, তখন তারা দেশের মাটিতে ড. কামালকে পাবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা নিবার্চনী মাঠ দখল করে আছে ও স্বাধীনতার পক্ষের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন নিবার্চন অনুষ্ঠিত দেখতে চায়, তাতে করে বিএনপির যে সাধারণ ভোট ছিল অথার্ৎ ৩০% তা নিচে নেমে ২০-২৫% দঁাড়ায় কিনা কে জানে। দুটি জিনিসের ওপর বিএনপিনিভর্র করে ছিল। ২১ আগস্টের মতো বা তার থেকে খারাপ কিছু ঘটিয়ে শেখ হাসিনাকে অপসারণ করে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে বিএনপির প্রতি বিপ্লবী রাজনৈতিক ধারা নিবার্চন অথবা নিবার্চনী অবস্থায় তারা ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়। তাদের সেই প্রক্রিয়া ছিল যা ড. কামালের নেতৃত্বে ১০ জনের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে অন্তবর্তীর্কালীন সরকার গঠন, ২. অপকৌশলেই ব্যথর্ হয়েছে তাই নিবার্চনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

সবের্শষ যে দায়িত্বটা এখন তারা পালন করতে পারে তা হচ্ছে নিবার্চন প্রক্রিয়া ও নিবার্চন রায়কে অগ্রাহ্য করা। হয়তো নিবার্চনের সময় এমন একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, যা নিবার্চনের রায় আন্তজাির্তক পযাের্য় স্বীকৃতি দিতে রাজি হবে না। এখন প্রায় নিশ্চিত বাংলাদেশের বতর্মান প্রধানমন্ত্রী যিনি দক্ষতা, যোগ্যতা ও দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে দেশ শাসন করেছেন, তার ক্ষমতায় আসা সময়ের ব্যাপার। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন হোক- সেই প্রত্যাশা সবার।

ডা. এস এ মালেক: রাজনীতি ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22753 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1