শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত

নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হবে কবে
নতুনধারা
  ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে অকথ্য নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করে মিয়ানমারের সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উচিপ্রাং শরণাথীর্ শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ প্রদশর্ন করেছে বৃহস্পতিবার। অন্যদিকে জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তজাির্তক সংস্থাও দাবি করেছে, মিয়ানমারে এখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা হয়নি। এর ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। অথচ, অক্টোবর মাসে দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিপরীতে সে দেশে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা নিয়ে যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তাতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের সদিচ্ছা ঘাটতিই পরিলক্ষিত হয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি কবে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারÑ এমন প্রশ্নও সামনে এসেছে, যা অযৌক্তিকও নয়।

অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, মিয়ানমার শুরু থেকেই রোহিঙ্গারা সে দেশের নাগরিক নয় এমন দাবি জানিয়ে আসছে। মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বাঙালি সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়ারও অপচেষ্টা করেছে বিভিন্ন সময়। বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে বিবাদে জড়ানোর মতোই কমর্কাÐ অব্যাহত রেখেছে দেশটি। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার যে টালবাহানা করতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও উঠে এসেছে আন্তজাির্তক বিভিন্ন ফোরামে। আন্তজাির্তক বিভিন্ন সংস্থা ও জাতিসংঘের অব্যাহত চাপে মিয়ানমার শেষ পযর্ন্ত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিকত্ব দিতে সম্মত হলেও, সে দেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, সাম্প্রতিক ঘটনা এরই উৎকৃষ্ট প্রমাণ বলেই প্রতীয়মান হয়।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে অনিচ্ছুক। আর এ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিকর হতে পারে না। বাংলাদেশ যে মানবিক কারণ বিবেচনায় বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের এ দেশে আশ্রয় দিয়েছে, তা সব পক্ষেরই মনে রাখা কতর্ব্য। পাশাপাশি আন্তজাির্তক সম্প্রদায়েরও কতর্ব্য হওয়া দরকার, সে দেশে রোহিঙ্গাদের ফেরার নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা। বাংলাদেশ জনবহুল একটি দেশ। এত মানুষের ভার সামলাতে এমনিতেই হিমশিম অবস্থা। এরপর ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের দীঘির্দন দেশে রাখা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়, সমীচীনও নয়। বিভিন্নভাবে সামনে এসেছে যে, আশ্রিত রোহিঙ্গা নানান অপরাধ কাযর্ক্রমে যুক্ত হয়ে পড়ছে। আশ্রিত এলাকায় বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনাও কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এ ছাড়া রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোটর্ সংগ্রহ করে বিদেশে যাওয়ারও চেষ্টা করছে। এসব ঘটনা বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগের।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সে দেশের সেনাবাহিনীর হাতে ব্যাপক সহিংসতার শিকার হয়ে এ দেশে পালিয়ে এসেছে, এটা যেমন অস্বীকারের সুযোগ নেই; তেমনইভাবে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে এটাও বাস্তবসম্মত। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তজাির্তক সংস্থা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না হওয়ার যে তথ্য তুলে ধরেছে, আমরা মনে করিÑ নিরাপদ পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে মিয়ানমার কেন কালবিলম্ব করছে, তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেই খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কঁাধে রোহিঙ্গাদের বোঝা চাপিয়ে দিতে আন্তজাির্তকভাবে কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে কিনা, এ ব্যাপারেও বাংলাদেশ সরকারের সতকর্ থাকা বাঞ্ছনীয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া সমীচীন হতে পারে না।

সবোর্পরি, নাগরিকত্ব না নিয়ে এ দেশ থেকে রোহিঙ্গারা সে দেশে ফেরত না যেতে যে দাবি তুলেছে, তাদের সে দাবিও অন্যায্য নয়। ফলে রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং নিরাপদ পরিবেশে দেশে ফিরতে আন্তজাির্তক সম্প্রদায়কেই দ্রæত উদ্যোগ নিতে হবে। শান্তিপূণর্ ও নিরাপদ পরিবেশে দ্রæততার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হোকÑ এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22757 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1