বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাত বছরে দ্বিগুণ বেকার

কমর্সংস্থানের সুযোগ তৈরি করুন
নতুনধারা
  ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জনবহুল বাংলাদেশে বেকারত্ব অন্যতম একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জরিপে দেশের বেকারত্বের যে চিত্র উঠে আসে তাও অত্যন্ত উদ্বেগের। সরকারের দেয়া বেকারত্বের তথ্যের সঙ্গে বেসরকারি জরিপের তথ্যের অমিলও চোখে পড়ার মতো। সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে বেকারত্ব নিরসনের কথা বলা হলেও, বাস্তবতার সঙ্গে তা অসঙ্গতিপূণর্ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। যদিও অস্বীকার করা যাবে না যে, বেকারত্ব নিরসনে সরকারের ভ‚মিকা নেই। এরপরও দেশের ক্রমবধর্মান জনসংখ্যার তুলনায় আশানুরূপ কমর্সংস্থানের সুযোগ যে সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি, তাও বলতে হবে। দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, এমন তথ্য রয়েছে আমাদের সামনে। তবে জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি কমর্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে কতটুকু ভ‚মিকা রাখতে পারছে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে- বলছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে রোববার গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, আন্তজাির্তক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কমর্সংস্থানবিষয়ক এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, গত সাত বছরে দেশে তরুণ বেকারের হার বেড়েছে দ্বিগুণ। তা ছাড়া এ হার ঊধ্বর্মুখী। বেকারত্ব নিয়ে আইএলও প্রকাশিত এই তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।

আইএলও জানিয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্বের হার দ্বিতীয় সবোর্চ্চ। ওপরে আছে শুধু পাকিস্তান। বলাই বাহুল্য, উচ্চশিক্ষা যে এখন কমর্সংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এরও প্রতিফলন রয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীষর্ক এ প্রতিবেদনে ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পযর্ন্ত এই অঞ্চলের ২৮টি দেশের বেকারত্ব, তরুণদের কমর্সংস্থান, নিষ্ক্রিয় তরুণের হার, আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কমর্সংস্থান, কমর্সন্তুষ্টি ইত্যাদির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন মতে, ২০০০ সালের তরুণ বেকারত্ব ২০১৭ সালে অথার্ৎ ৭ বছরে এসে দ্বিগুণ হয়ে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দঁাড়িয়েছে। আর উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সবোর্চ্চ। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের তরুণদের বড় একটি অংশ নিষ্ক্রিয়। এরা কোনো ধরনের শিক্ষায় যুক্ত নন, প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন না, আবার কাজও খুঁজছেন না। এমন তরুণের হার ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। মেয়েদের মধ্যে এই হার বেশি, ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি। বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই চিন্তা জাগানিয়া।

সরকারের দিকনিদের্শনায়, দেশে শিক্ষার বিস্তার ঘটছেÑ আর এ সুসংবাদের বিপরীতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কমর্সংস্থানের তীব্র সংকটের বিষয়টি অবশ্যই পীড়াদায়ক। এর আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ অথর্বছরের শ্রমশক্তি জরিপেও বেকারত্বের হতাশাব্যঞ্জক চিত্র উঠে এসেছিল। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অথর্বছরে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার; যা বছরের ব্যবধানে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার হয়েছে। এমন নয় যে দেশে নতুন নতুন কমর্সংস্থান হচ্ছে না। সবের্শষ জনশক্তি জরিপের তথ্য অনুসারে গত অথর্বছরেও ১৩ লাখ মানুষের নতুন কমর্সংস্থান হয়েছে। এরপরও উচ্চশিক্ষিত বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার অথর্ দঁাড়ায় দেশে যে পরিমাণে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি হচ্ছে, সে তুলনায় উপযোগী পযার্প্ত ক্ষেত্র নেই।

আমরা মনে করি, আইএলওর জরিপসহ বিবিএসের জরিপ সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। আর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের বেকারত্ব নিরসনে দক্ষ শ্রমিক যেমন বিদেশে রপ্তানি করা জরুরি, তেমনইভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়ার বাঞ্ছনীয়। বিনিয়োগ বাড়লে দেশে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন হবে, যার মাধ্যমে কমর্সংস্থানেরও সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। জানা যায়, আমাদের শ্রমবাজারের ৮৫ শতাংশ এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক- এই বিষয়টির দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। বেকারত্বের অবসান ঘটানো না গেলে দিন দিন সামাজিক অসহিষ্ণুতাও বাড়ছে। ফলে দেশে নানামাত্রিক অপরাধপ্রবণতাও বাড়তে থাকবে। এ প্রবণতা কিছুতেই স্বস্তিকর হতে পারে না।

সবোর্পরি বলতে চাই, দেশের বেকারত্বের সাবির্ক পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে সরকারের কতর্ব্য হওয়া দরকার এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দেয়া। যেহেতু বেকারের হার ক্রমেই বাড়ছে এমন তথ্য সামনে এসেছে, তখন বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। দেশের নীতিনিধার্রকরা বেকারত্ব নিরসনে দ্রæত কাযর্কর উদ্যোগ নিক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<23064 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1