বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নকল ও ভেজাল ওষুধবিরোধী নজরদারি বাড়াতে হবে

মাহমুদুল হক আনসারী চট্টগ্রাম
  ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

এটা অত্যন্ত ভয়াবহ ব্যাপার যে জীবনরক্ষাকারী ওষুধও এখন ভেজাল ও মানহীন। এসব ওষুধ খেলে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তো দূরের কথা উল্টো পাশ্বর্প্রতিক্রিয়ায় জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে। নকল ও ভেজাল ওষুধ নিয়ে কম কথা হয়নি। কিন্তু এর বিপরীতে ব্যবস্থা নেয়ার ঘটনা সন্তোষজনক নয়। রোগব্যাধি হলে ওষুধ খেয়ে জীবন রক্ষা করে মানুষ। কিন্তু সেই ওষুধেও ভেজাল থাকাটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মানহীন ও ভেজাল ওষুধ খেয়ে রোগ সারার বদলে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, দেশে ওষুধের উৎপাদন থেকে বিপণন পযর্ন্ত কোনো স্তরেই সরকারি পরীক্ষাগারে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। বিপণনের পর অধিদপ্তরের কমর্কতার্রা বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠান। তখন ওষুধের মান জানা যায়। এর আগ পযর্ন্ত পরীক্ষাহীন, মান না জানা ওষুধই ব্যবহার করে মানুষ। এভাবেই ওষুধ কোম্পানিগুলো এ দেশের মানুষকে রীতিমতো গিনিপিগে পরিণত করেছে। এক হিসাবে দেখা যায়, প্রতিবছর ১২ হাজার আইটেমের ওষুধ বাজারে আসছে। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের যে লোকবল ও যন্ত্রপাতি রয়েছে তাতে তারা মাত্র সাড়ে তিন হাজার আইটেম ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। বাকি ৭০ শতাংশ ওষুধের মান যাচাইহীন অবস্থায় রয়ে যায়। দুঃখজনক হচ্ছে, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-র মতে, ওষুধ উদ্ভাবনকারী ছাড়া জেনেরিক বা বগর্নামে ওষুধ প্রস্তুতি করাই হচ্ছে নকল ওষুধ। তৃতীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বগর্নামে ওষুধ প্রস্তুতি চলছে। ফলে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। অনেক কোম্পানি জেনেশুনে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূণর্ এ অনৈতিক কমর্কাÐের সঙ্গে জড়িত। অথচ বাংলাদেশে ওষুধ একটি বিকাশমান শিল্প। ১২৭টি দেশে আমাদের তৈরি ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতেও ওষুধশিল্প বড় ভ‚মিকা রাখছে। শুধু তাই নয়, জীবন রক্ষাকারী মূল্যবান অনেক ওষুধও এখন আমাদের দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। সাবির্ক বিবেচনায় শুধু জনস্বাথর্ই নয়, কোম্পানিগুলোর নিজ স্বাথের্ও ওষুধের মান ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পবের্ সংরক্ষিত আসনের সদস্য লুৎফ তাহেরের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ভেজাল ওষুধ বন্ধে সরকারের কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস (জিএমপি) গাইডলাইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় এবং ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের দায়ে ৮৬টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক এবং ১৯টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়। এ ছাড়া ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ৬১টি পদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল ও ১৪টি পদের রেজিস্ট্রেশন সাময়িক বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রী তখন সংসদে জানান। মনে রাখা দরকার ওষুধ কোনো সাধারণ পণ্য নয়। জীবন রক্ষার জন্য ওষুধের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেটি জোর নজরদারিতে রাখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে সরকারের অজর্ন কম নয়। কিন্তু স্বাথাের্ন্বষী মহলের কারণে সেটি ভেস্তে যাক এটি কাম্য হতে পারে না। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এ বিষয়ে জনগণ সরকারের কঠোর অবস্থান দেখতে চায়। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির এমআরদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জীবন বঁাচাতে ওষুধ ও ডাক্তার। এসব নিয়ে কোনো অবস্থায় কোনো অন্যায় কমর্কাÐকে প্রশ্রয় দেয়া সমুচিত নয়। তাই বতর্মান সরকারের সফলতার সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হলে ওষুধের ভেজাল প্রতিরোধ করতে হবে। মান নিয়ন্ত্রণ ও ভেজালবিরোধী নজরদারি জোরদার করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<31821 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1