বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার গঠনে শেখ হাসিনার রেকডর্ সৃষ্টি

শেখ হাসিনা যেমন উন্নয়নের রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন, রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে। রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন জেলহত্যা মামলার বিচার করেও। তেমনি বারবার মন্ত্রিসভা গঠন করেও চমক দেখিয়ে রেকডর্ সৃষ্টি করে চলেছেন।
ড. মো. হুমায়ুন কবীর
  ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আমাদের এই বাংলাদেশে ভালো যত নজির, উদাহরণ, রেকডর্Ñ সব আওয়ামী লীগ তথা এর নেতানেত্রীদের সৃষ্টি। ভাবতে ভালো লাগে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতিরজনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাদার অব হিউম্যানিটি, দেশরতœ, জননেত্রী শেখ হাসিনা চতুথর্বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ৭ জানুয়ারি, ২০১৯ তারিখে। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এটি একটি অনন্য ইতিহাস, নজির এবং রেকডর্ হয়ে থাকবে।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রথম সরকার মাত্র সাড়ে তিনবছর দায়িত্বপালনের পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির মাধ্যমে তার অবসান ঘটে। তারপর ১৯৮২ সাল পযর্ন্ত ষড়যন্ত্রকারী, সামরিক এবং খুনিদের দ্বারা গঠিত কোনো সরকারই তাদের মেয়াদ পূণর্ করতে পারেনি। তারপর ১৯৮২ সাল থেকে ৯০ সালের শেষাবধি প্রায় ৯ বছরাধিক এরশাদের স্বৈরশাসন চলতে থাকে। ১৯৯১ সাল থেকে গণতান্ত্রিক ধারা সূচিত হলে বিএনপি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পযর্ন্ত পূণর্ দুই মেয়াদে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার পরিচালনা করেন। তবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারিতে বিএনপি এককভাবে একটি নিবার্চন করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটি সরকার গঠন করেছিল যার মেয়াদ ছিল মাত্র দুই সপ্তাহ। সেই হিসাবে বেগম খালেদা জিয়াকে তিন মেয়াদের বা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করা হয়ে থাকে।

কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার গঠনের বিষয়টি অতীতের সব রেকডের্ক ছাপিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন। তিনি ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১ এবং ২০০১ সালের সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হয়েও যেমন রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন, ঠিক তেমনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পযর্ন্ত প্রথম মেয়াদে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ পযর্ন্ত দ্বিতীয় মেয়াদে এবং ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পযর্ন্ত তৃতীয় মেয়াদে এবং ২০১৯ সাল থেকে পরবতীর্ পঁাচ বছরের জন্য টানা তৃতীয় মেয়াদে এবং মোট সবোর্চ্চ চারবার সরকার গঠন করে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন রেকডর্ সৃষ্টি করলেন শেখ হাসিনা।

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পযর্ন্ত শেখ হাসিনার প্রথম পঁাচ বছরের মেয়াদে তিনি ঐকমত্যের সরকার গঠন করেন। সেটিও ছিল ইতিহাস। কারণ এমন সরকার গঠনের নজির বিশ^ গণতান্ত্রিক ইতিহাসে বিরল। তখন জাসদের আ স ম আব্দুর রব, জাতীয় পাটির্র আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে মন্ত্রিসভায় নিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালের মহাজোটের সরকারে জাসদের হাসানুল হক ইনু, ওয়াকার্সর্ পাটির্র রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পাটির্র জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু, সালমা ইসলাম প্রমুখকে মন্ত্রিসভায় অন্তভুর্ক্ত করা হয়।

এরপর ২০১৪ সালে শুরু হওয়া সরকারে বিরোধী দল থেকেও সরকারে মন্ত্রী নিয়েছিলেন। যেমন- জাতীয় পাটির্ (জেপি)’র আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদের হাসানুল হক ইনু, ওয়াকার্সর্ পাটির্র রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পাটির্র ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখকে মন্ত্রিসভায় অন্তভুর্ক্ত করা হয়। সেই সঙ্গে জাতীয় পাটির্র চেয়ারম্যান হোসেইন মুহম্মদ এরশাদকে করা হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। আবার জাতীয় পাটির্র সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। প্রকারান্তরে এগুলো সবই রেকডর্ এবং ইতিহাস। কারণ এরকম নজির গণতন্ত্রে খুবই কম। আর এগুলো সবই শেখ হাসিনার সৃষ্টি।

আমরা এবারে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৯টি আসনে জয়লাভ করে রেকডর্ করেছে। পূবের্ ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভার ছিল। এবারে ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। যেখানে তারুণ্যকে দেয়া হয়েছে অন্যরকম গুরুত্ব। কারণ নিবার্চনের মনোনয়নেও এবার তারুণ্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। মোট ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ২৪ পূণর্মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ উপমন্ত্রী দিয়ে সাজানো হয়েছে যারা ৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে শপথ নিলেন। সেখানে অধিকতর যোগ্য ও আগামীর পরিকল্পনামাফিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযোগীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে মমের্ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভাতে সবসময়ই একেকটি চমক থাকে। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। কারণ প্রতিবার মন্ত্রিসভা গঠনের সময় এমন এমন বিষয় তিনি সামনে নিয়ে আসেন তা আগে কারো মাথাতেই কখনো আসেনি। কারণ, দেখা গেছে, ১৯৯৬ সালের অভিজ্ঞতার পর ২০০৯ সালের সরকারে সম্পূণর্ নতুন একঝঁাক মন্ত্রী নিয়ে সরকার গঠন করে শেষদিকে এসে জোটের শরিক এবং আগে বাদপড়া কিছু জ্যেষ্ঠ নেতাদের পুনরায় মন্ত্রিসভায় অন্তভুর্ক্ত করেন। ২০১৪ সালেও তাদের মন্ত্রিসভায় নিয়েই সরকার পরিচালনা করেন।

তবে এই মেয়াদে কিছু নেতাকে দলে সময় দেয়ার জন্য সরকার ও সংসদে দায়িত্ব দেয়া হয়নি বলে দলীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে। তা ছাড়া এবার আওয়ামী লীগ ছাড়া জোটের অন্য কোনো দল থেকে এখনো কাউকে মন্ত্রিপরিষদে রাখা হয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন সেই সময় এখানো শেষ হয়ে যায়নি। যেহেতু শেখ হাসিনা সবসময়ই চমক দিয়ে রেকডর্ সৃষ্টি করেন, এবারেও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম হবে না।

শেখ হাসিনা যেমন উন্নয়নের রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন, রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে। রেকডর্ সৃষ্টি করেছেন জেলহত্যা মামলার বিচার করেও। তেমনি বারবার মন্ত্রিসভা গঠন করেও চমক দেখিয়ে রেকডর্ সৃষ্টি করে চলেছেন।

বঙ্গবন্ধু যেমন নিজের জীবন দিয়ে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার হিসেবে দিয়ে গেছেন। কাজেই তার সুযোগ্য কন্যা যিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনিমাের্ণ চমক ও রেকডর্ সৃষ্টি করে যাবেন এবং সেটিই চলমান থাকুক, তাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

ড. মো. হুমায়ুন কবীর : ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ^বিদ্যালয়

শনফযঁসধুঁহ০৮@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<31947 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1