মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

শিশু নিযার্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই

নতুনধারা
  ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের নানা স্থানে নারী ও শিশু ধষর্ণ এবং ধষের্ণর পর হত্যার মমাির্ন্তক সব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে বেশ কয়েকটি শিশু নিযার্তন ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় দুই বছরের এক শিশুকে ধষের্ণর পর তিনতলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা, দুই শিশুকে লিপস্টিকের লোভ দেখিয়ে ধষের্ণর চেষ্টা ও পরে হত্যা, অন্যদিকে সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণির একজন ছাত্রীকে ধষের্ণর পর পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বছর কয়েক আগে পত্রপত্রিকায় আর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে ৪ নিষ্পাপ শিশুদের মরদেহ বালুর নিচ থেকে উঠানোর দৃশ্য ছিল অসহনীয়। এ দৃশ্য দেখে সবারই দু’চোখ দিয়ে অশ্রæবন্যা বইতে শুরু করেছিল নিশ্চিত। হায় মানুষ! তুই কত নিষ্ঠুর, পাষÐ। আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়ে তোর দ্বারা এমন নিকৃষ্ট কাজ করা কীভাবে সম্ভব?

শিশুদের প্রতি ¯েœহ ভালোবাসার বিষয়ে ইসলামে অত্যন্ত তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। শিশুদের প্রতি যেন কোনোভাবেই কঠোরতা প্রদশর্ন করা না হয় এবং দারিদ্র্যের ভয়ে তাদের যেন হত্যা করা না হয়, সে বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আর দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমিই তাদের এবং তোমাদেরও রিজিক দিই। তাদের হত্যা করা নিশ্চয় মহাপাপ’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৩১)। এ আয়াতে শিশুদের হত্যার বিষয়ে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। শিশুদের যদি সঠিক শিক্ষা এবং উপযুক্ত সুবিধার মাধ্যমে তাদের পূণর্ মানসিক ও নৈতিক বৃদ্ধিপ্রাপ্তিতে সাহায্য করা হয়, তাহলে তারা সমাজের সত্যিকার উপযোগী ও কাযর্কর সদস্যে পরিণত হবে। অথচ আজ প্রতিনিয়ত শিশুরা নিযার্তনের শিকার হচ্ছে। এমনকি মাতৃগভের্ও আজ শিশু নিরাপদ নয়। এমন সব নজিরবিহীন ও নিলর্জ্জ ঘটনা আজ ঘটে চলেছে, যা শুনলে হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়।

সমাজে আজ শিশুর প্রতি নৃশংসতা এমন এক পযাের্য় পেঁৗছেছে, যার ফলে আজকাল সচেতন মহলে শিশুহত্যা প্রতিরোধের আহŸান জোরদার হচ্ছে। অথচ ইসলাম চৌদ্দশত বছর পূবের্ই শিশু হত্যাকে বারণ করেছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) যুদ্ধক্ষেত্রেও কোনো শিশুকে হত্যা করতে বারণ করেছেন। রণাঙ্গনে ভুলক্রমে কোনো ইহুদি শিশু মারা গেলে হুজুর পাক (সা.) সাহাবিদের প্রতি অনেক অসন্তষ্ট হন। কারণ শিশুরা নিষ্পাপ, মাসুম। তাদের কোনো গোনাহ নেই। অথচ আজ সেই পবিত্র ও মানব দরদি রসুলের উম্মত হওয়ার দাবি করে মানুষ এমন ঘৃণ্য ও অমানবিক কাযর্ক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে, যা বিশ্ব মানবতাকেই ক্ষত-বিক্ষত করছে। আমরা জানি, এ বিশ্বের জন্য আশীবার্দস্বরূপ পরম দয়ালু আল্লাহ্তালা মহানবীকে (সা.) প্রেরণ করেছেন। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। মানুষকে মানুষ হিসেবে কীভাবে সম্মান করতে হয় তা তিনি শিখিয়েছেন এবং সমাজে শিশু ও নারীদের স্থান কোনপযাের্য়, তাও তিনি নিজ আমল দ্বারা দেখিয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠা করেছেন।

একটি শিশু যখন জন্ম নেয়, তখন সে নিষ্পাপ থাকে। মানুষ সাধারণত শিশুদের ভালোবাসে এবং আদর করতে চায় আর শিশুদের ভালোবাসার প্রতি ইসলাম অনেক জোর দেয়। আসলে শিশু একটি বীজের মতো। আমরা যত বেশি এর পরিচযার্ করব, এর ফুল ও ফল তত ভালো হবে। আমরা জানি, নবী করিম (সা.) শিশুদের অত্যন্ত ¯েœহ করতেন ও ভালোবাসতেন, তাদের কাছে টেনে চুমু খেতেন, তাদের জন্য সবর্দা কল্যাণ ও মঙ্গলের দোয়া করতেন। এমনকি নামাজের সময় দুষ্টামি করলেও তাদের কিছু বলতেন না। একটি হাদিসে বণির্ত আছে, মহানবী (সা.) একবার হাসানকে (তার দৌহিত্র শিশু) চুমু খেলেন। তখন নবী করিমের (সা.)-সঙ্গে ছিলেন হযরত আকরা ইবনে হাবিস (রা.)। তিনি বিরক্তি ভরে বললেন, ‘আমার ১০টি সন্তান রয়েছে, আমি কাউকে কোনোদিন চুমু খাইনি।’ এ কথা শুনে নবী করিম (সা.) তার দিকে তাকিয়ে করুণা ভরে বললেন, যে দয়া করে না সে দয়া পায় না’ (বোখারি)। অপর একটি হাদিসে আনসারদের দেখতে গিয়ে বণির্ত হয়েছে, মহানবী (সা.) তাদের শিশুকে সালাম দিতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন, তাদের জন্য সবর্দা দোয়া করতেন (নাসাঈ)। অথচ ইসলামের এই সমুহান শিক্ষার বিপরীতে আজ অনেক লোককে দেখা যায়, তারা শিশুর শিশুসুলভ আচরণ কিছুতেই মেনে নিতে চান না। কারণে-অকারণে তাদের গায়ে হাত তুলতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। অথচ শিশুদের গায়ে হাত উঠানোকে ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

অবহেলিত শিশুদের প্রতি সমাজের সচেতন মানুষের সম্মিলিত সহানুভ‚তি একান্ত প্রয়োজন। ওদের প্রতি সামান্য সহানুভ‚তির ফলে আমরা খুব সহজে পৃথিবীকে স্বগর্রাজ্যে পরিণত করতে পারি। কেননা, যে শিশুটি আজ অবহেলিত, হয়তো সেই শিশুই একদিন সমাজ ও দেশের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই তাকে যদি প্রথম থেকেই আমরা সবাই নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসি, তাহলে হয়তো সে দেশের জন্য গবের্র কারণ হবে। আল্লাহর প্রেরিত প্রত্যেক নবী-রাসুলই শিশুদের আদর করতেন, ভালোবাসতেন, মূল্যায়ন করতেন তাদের মনমানসিকতার। বাইবেলে মথি অধ্যায়ে বণির্ত রয়েছে, একদা একদল ছিন্নমূল শিশু হযরত ঈসার (আ.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে সাহাবীগণ আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) বিরক্তি প্রকাশ করবেন ভেবে শিশুদের বাধা দিলেন। এ অবস্থা দশর্ন করে হযরত ঈসা (আ.) বললেন, ‘ওদের আমার নিকট আসতে দাও। বঁাধা দিও না। কেননা, খোদার রাজ্য ওদের ন্যায় লোকদেরই’। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মুস্তফা (সা.) বলেছেন, ‘শিশুরা বেহেশতের পতঙ্গ।’ যে ব্যক্তি শিশুদের প্রতি রহমতের বাহু প্রসারিত করে না, সে আমার সাথে নয়’।

আল্লাহপাকের এই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে নিমর্মভাবে হত্যা করতেও মানুষ আজ দ্বিধা করছে না। সমাজে বিশৃঙ্খলা করার কোনো শিক্ষা ইসলামে পাওয়া যায় না। ইসলাম আমাদের উচ্ছৃঙ্খল জীবন পরিহার করে বিনয়ী এবং ন¤্র হয়ে চলার শিক্ষা দেয়। যদি কেউ কষ্ট দিতে চায়, ইসলামের শিক্ষা হলো তার জন্যও তুমি শান্তির দোয়া করো। যেমন বলা হয়েছে, ‘আর রহমান আল্লাহর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্র হয়ে চলে এবং অজ্ঞরা যখন তাদের সম্বোধন করে, তখন তারা বলে সালাম’ (সুরা আল ফোরকান, আয়াত: ৬৩)। সব ধমর্ই চায় শান্তি, সব মানুষ চায় শান্তি অথচ আজ প্রতিটি মানুষ চরম অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। মানুষ যতদিন মানুষকে না ভালোবাসবে, ততদিন পৃথিবী অশান্তই থাকবে, পৃথিবী স্বগর্রাজ্যে পরিণত তখনই হতে পারে, যখন মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে। সেই সঙ্গে সরকারকেও শিশু নিযার্তনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করতে হবে। আসুন, সবার প্রতি ভালোবাসার ডানা প্রসারিত করি আর বিশ্বের সব শিশুর প্রতি মমতাশীল হই।

মাহমুদ আহমদ

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<31949 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1