বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসবাদ সূচকে এগিয়ে দেশ

এ ধারা অব্যাহত থাকুক
নতুনধারা
  ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে (জিটিআই) বাংলাদেশের চার ধাপ উন্নতি ঘটেছে- যখন আন্তজাির্তক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে, তখন বিষয়টিকে স্বস্তিকরই বলা যেতে পারে। গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের গড় সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থা ২০১৭ সালের চেয়ে খারাপ হলেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে চলেছে। ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের (আইইপি) তৈরি এ সূচকে ৫ দশমিক ৬৯৭ স্কোর নিয়ে চার ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২৫তম স্থানে। বিশ্বের ১৬৩ দেশের মধ্যে এ জরিপ করেছে সংস্থাটি। গোটা বিশ্ব যেখানে ক্রমেই সন্ত্রাসবাদে প্রকম্পিত হচ্ছে, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের পর দেশ, সেখানে সন্ত্রাসবাদ সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।

বিশ্বজুড়ে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অন্যতম হুমকি এই সন্ত্রাসবাদ। লক্ষ করা যায়, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ঐতিহাসিকভাবেই সহিংসতাকে তাদের রাজনৈতিক, অথৈর্নতিক ও জাতিগত অধিকার রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এ কারণে বলা হয়ে থাকে, ‘কারও চোখে যিনি সন্ত্রাসবাদী, আরেকজনের চোখে তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা।’ অবশ্য মুসলিম জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে অন্য যে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের একটি মৌলিক পাথর্ক্য আছে। অন্যান্য সংগঠন দৃশ্যত রাজনৈতিক অধিকার, অথৈর্নতিক মুক্তি, সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্তি¡ক পরিচয় সংরক্ষণের জন্য লড়াই করে থাকে। অপর পক্ষে মুসলিম জঙ্গিবাদীদের লড়াইয়ের পেছনে মূলত ধমীর্য় উদ্দেশ্য বিদ্যমান। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, যার শীষের্ থাকবে একজন খলিফার নেতৃত্বে বিশ্ববিস্তৃত ইসলামী খেলাফত। বিশ্বে এখন সবাির্ধক আলোচিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হচ্ছে ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ (আইসিস) সংক্ষেপে ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস)। ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর থেকে ক্ষয়িষ্ণু আল কায়দার জায়গা দখল করে নিয়েছে আইএস। আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘বোকো হারাম।’ বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশেও তৎকালীন সরকারের শাসনামলে ‘বাংলা ভাই’ নামে সন্ত্রাসী দলের উত্থান ঘটেছিল। এরপর একে একে ইসলামী নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী গ্রæপের আত্মপ্রকাশ ঘটতে থাকে। এরা দেশের মুক্তচিন্তার লেখক কবি সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এমনকি পুলিশের ওপরও হামলা চালায়। এদের আত্মঘাতী কমর্কাÐও দেশের মানুষের অজানা নয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা ঘটেছিল গুলশানের হলি আটির্জান বেকারিতে। ভয়াবহ এ হামলার পর আইএসের সঙ্গে বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের যোগসূত্রের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বস্তুত সরকার তথা প্রশাসনের কঠোরতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহŸানে দেশের সাধারণ মানুষও সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানে কঠোর হয়। গত কয়েক বছর ধরে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আস্তানা শনাক্ত করে সফল অভিযান পরিচালনা করায় মূলত সন্ত্রাসীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধসহ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কারণেই সন্ত্রাসবাদ সূচকে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন। তবে, তারা এটাও বলেছেন, কোণঠাসা হয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা একটু সুযোগ পেলে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। ফলে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ সূচকে চার ধাপ উন্নতি আশাব্যঞ্জক হলেও, আমাদের আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, যতদিন পযর্ন্ত সন্ত্রাসীদের নিমূর্ল করা না যাবে, ততদিন আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা সমীচীন হতে পারে না।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রকাশিত বৈশ্বিক এ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কারও উন্নতি ঘটেছে। তবে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। আর ‘গেøাবাল টেররিজম ইনডেক্স-২০১৮’ শিরোনামের এই সূচকে ৯ দশমিক ৭৪৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় এক নম্বরে আছে ইরাক। অথার্ৎ মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসপ্রবণ।

সবোর্পরি বলতে চাই, যেহেতু ২০১৮ সালে চার ধাপ উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশের, সুতরাং এ ধারা অব্যাহত রাখতে কাযর্কর উদ্যোগও বলবৎ রাখতে হবে। আমাদের প্রিয় জন্মভ‚মি সন্ত্রাসবাদের আঘাতে রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত হবে তা কিছুতেই হতে দেয়া উচিত নয়। এছাড়া ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিপূণর্ ও বসবাস উপযোগী দেশ গঠন করতে চাইলে যেকোনো অপশক্তিকে ন্যূনতম ছাড় দেয়া চলবে না। সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাক, এ ব্যাপারে সরকার তথা প্রশাসন সবসময় সতকর্ ও সজাগ থাক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<31950 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1