বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদীয় গণতন্ত্র ও বিরোধী দল

মোহাম্মদ আবু নোমান ঢাকা
  ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

প্রতিপক্ষ কুপোকাত হলে ও ফঁাসে আটকালে কার না আনন্দ হয়? নিবার্চনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ ও তার সুহৃদরা শুধু আনন্দেই নয়, পরমানন্দের প্লাবনে ভাসছেন। চারদিকে অভিনন্দনের বান ডেকেছে। অনেকেই গঁাটের পয়সা খরচ করে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তা জানান দিচ্ছেন। হেন করে উল্টাবেন, তেন করে ফিরাবেন বলে শব্দের বোমা ফাটাচ্ছেন। প্রধান নিবার্চন কমিশনার, সেনা-র‌্যাব-পুলিশ সব প্রধানরাই বলেছেনÑ নিবার্চন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাদের মতে, নিবার্চনী কমর্কাÐে জনগণের কাছে তাদের অথার্ৎ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশের ভাবমযার্দা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা জনগণের আস্থাভাজন হয়েছেন। অত্যন্ত সফল নিবার্চন হয়েছে বলে নিবার্চন কমিশন ফ‚তিের্ত ও পরমানন্দে ‘পিঠা উৎসব’ উদযাপন করেছে। যদিও তখনো বিরোধী জোট থেকে নিবার্চনে অনিয়মের অভিযোগ এনে স্মারকলিপি দেয়া হয়। নিবার্চন নিয়ে সরকারি ঘরানার লোকদের প্রশংসা, বন্দনা, কীতর্ন, বিশেষ সাফল্য ও চাটুবাক্যবানের সুগন্ধের সৌরভের অন্ত-প্রান্ত নেই। কিন্তু সরকারি দলের নেতাকমীের্দর ভুলে গেলে চলবে না, নিবার্চনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সবর্সাধারণের কাছে ভুলত্রæটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী নিবার্চনী ইশতেহার প্রকাশের সময় দেশ শাসনে তার দলের নেতাকমীর্ ও সরকারের ভুলভ্রান্তির জন্য অকপটে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আগামীতে আরও সুন্দরভাবে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ পরিচালনার জন্য দেশবাসীর সাহায্য-সহযোগিতা চেয়েছেন। এতে শেখ হাসিনা কি ছোট হয়ে গিয়েছিলেন? না; তিনি কোনোভাবেই ছোট হয়ে যাননি। দেশের মানুষ তার কথাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিল। শেখ হাসিনার উদারতাকে দুবর্লতা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তার কারিশমা, রাজনৈতিক দক্ষতা, পটুতা, কৌশল সবকিছু সময়ের পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীণর্ হয়েছে।

মানুষ ভুলত্রæটির ঊধের্ নয়। মানুষের সবচেয়ে বড়গুণ আত্মসমালোচনা করা। ভুল করে তা স্বীকার করা ও সংশোধিত হওয়ার চেষ্টা করা সবার জন্যই সঙ্গত। শুদ্ধ, শোধিত হওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এ ধরনের ভুল স্বীকার আমাদের সংস্কৃতিতে বিরল। বিগত দিনে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের এবং দলের নেতাদের ভুলত্রæটি হতেই পারে। এমনই এক আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ও কমতি অনুভব বা উপলব্ধি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেছেন। এটি একটি ইতিবাচক বিষয়। শেখ হাসিনা দলের নেতাকমীের্দর পক্ষ থেকেও ক্ষমা চেয়েছেন। দলের নেতাকমীের্দর জ্ঞান করতে হবে; এতদিন ক্ষমতার দাপটে জনগণের চাওয়া-পাওয়া, কান্না-বেদনা কতটুকু দেখেছেন ও শুনেছেন? দলের নেতাকমীের্দর তাÐবতা, পুলিশ, প্রশাসনকে গোলাম বানিয়ে নিজেদের স্বাথির্সদ্ধি আদায়ে তামাশাও মাত্র(!) বাকি ছিল কী?। প্রধানমন্ত্রী আজ জনগণের ‘পিঠে হাত বুলিয়ে’ ভুলত্রæটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আর বিপরীতে নেতা, কমীর্, সমথর্করা যদি জনগণের ‘বুকে লাথি মারেন’ তাহলে সেটা হবে প্রধানমন্ত্রীর উদারতা ও মহানুভবতার সঙ্গেই তামাশা করা।

ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে, দেশে আওয়ামী লীগের বাইরে একটি সাবর্জনীন গণতান্ত্রিক বিরোধী দলের চাহিদা প্রবল। এ জন্য কোনো রকম অলীক কল্পনা, কামনা ও খোয়াব না দেখে, মাটির ওপর দঁাড়িয়ে তারা যেন পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেন এবং প্রতিপক্ষের শক্তিকে যেন খাটো, নগণ্য, তুচ্ছ করে ঠুনকো না ভাবেন। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন নিয়ে যেসব অভিযোগ রয়েছে, তাও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ আছে কী? গত ১০ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় নেই বিএনপি। তাই বলে ভোটের মাঠে বিএনপির কদর কমেছে কী?

গত কয়েক দশক (দুই পরাশক্তি!) আওয়ামী লীগ আর বিএনপি দেশের রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় পঁাচ দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমাদের দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হয়নি, বরং ক্রমেই তা আরও অধিক সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের আশু কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে কেন্দ্র করে স্বচ্ছতার যে প্রত্যাশা ছিল এর ব্যাঘাত অনেক ক্ষেত্রেই ঘটেছে, এই অভিযোগও কম উবর্র ও পুষ্ট নয়। গণতন্ত্রচচার্র নামে গণতন্ত্রকেই অধর্চন্দ্র দেয়ার অভিযোগই জোরালো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে অতি জরুরিভাবে নিজ দলের কিছু দুষ্ট, নীতিহীন, এমপি, নেতাকমীের্দর লাগাম টেনে ধরতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে, এক কলস ভালো দুধ নষ্ট করতে এক ফেঁাটা নোংরাই যথেষ্ট। এক ঝুড়ি সুমিষ্ট আমের মধ্যে একটি নষ্ট আমকে বেছে না ফেললে পুরো ঝুড়িই পচে যায়। জনগণকে যেন আগামীতে বলতে ও বুঝতে না হয়, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার কথায় বিশ্বাস করে, ক্ষমতায় বসিয়ে আমরাই ভুল করেছিলাম! প্রধানমন্ত্রী একজন কমর্ঠ, প্রাণবন্ত, দেশপ্রেমিক এবং আদশর্বান। তার কমীর্-সমথর্কদেরও ভুলত্রæটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় প্রধানমন্ত্রীর ভুলত্রæটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ হাস্যরসে পরিণত হবে।

রাষ্ট্র, সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের ঐকতানের নিবার্চনের ফলাফলে সরকারি দলের সমথর্করা পযর্ন্ত বিব্রত হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি যারা আওয়ামী লীগের বিজয়কে অবধারিত বলে মনে করেছেন কিংবা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হোক, সে প্রত্যাশা করেছেন, তারাও এই প্রশ্ন তুলেছেন, জেতার জন্য এত কিছুর দরকার ছিল কী? নিবার্চন কেবল ফলাফলের ব্যাপার ও কোনো দলের বিজয়ই মুখ্য নয়। একটা দেশে জাতীয় নিবার্চনের ফলাফলের দীঘের্ময়াদি প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখার জন্য পযাের্লাচনা করা জরুরি। বিতকির্ত নিবার্চনে একই দল বারবার দেশ পরিচালনায় এলে কিছু সমস্যা আর ঝুঁকিও বাড়ে। নানা ধরনের ভিন্নমতের শক্তির উত্থান ঘটে। আমরাও সেই ঝুঁকির বাইরে নই। মিশর, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে যেরকমটা ইতোপূবের্ লক্ষ্য করা গেছে। ইঙ্গ-মাকির্ন সাম্রাজ্যবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ক্ষমতায় থাকা; পরিশেষে এই সাম্রাজ্যবাদীরাই বিরোধী দলকে তাদের বৈধ দাবির সঙ্গে তলে তলে একাত্মতা প্রকাশের সঙ্গে সশস্ত্র ও আথির্ক সহযোগিতা প্রদান। অন্যদিকে সরকারি দলের সাংবিধানিক ও আইনি বৈধতার দোহাইয়ে ক্ষমতায় থাকারও সমথর্ন। পরিশেষে গৃহযুদ্ধ ও ক্ষমতাসীনদের বিরোধী দল দমনে নিজ দেশে বিমান ও ড্রোন ব্যবহার হওয়া... ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন পথে অগ্রসর হবে, সে দুবোর্ধ্য, রহস্যময় ও নিগূঢ় প্রশ্ন থেকেই গেল!

রাজনীতিতে সুস্থ ধারার প্রতিযোগিতা থাকবে; কিন্তু প্রতিহিংসা নয়। প্রতিহিংসাপরায়ণই যদি রাজনীতির লক্ষ্য হয়ে দঁাড়ায়, তাহলে শুধু যে গণতন্ত্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই নয়, জনগণের প্রত্যাশাও হেঁাচট খাবে। এসব ব্যাপারে দেশের অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রেই প্রীতিকর নয়। গায়েবি মামলায়, রাজনৈতিক হয়রানি ও নিপীড়নের নানারকম চিত্র অতীতের সব রাজনৈতিক সরকারের শাসনামলেই কমবেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে এবার এই অভিযোগ অনেক বেশি পুষ্ট ও পরিপক্ব। এর নিরসন অত্যন্ত জরুরি।

সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে, টানা এক দশকের বেশি ক্ষমতায় থাকার সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন স্তরের নেতাকমীর্রা সমাজে নানাভাবে দাপট প্রদশর্ন করতে চাইবেÑ তাদের সংযত রাখা। এসব উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিরা ক্ষমতাবান মন্ত্রী ও প্রশাসনের প্রশ্রয়ও নিয়ে থাকবে। এমন ঘটনায় সরকারের ভাবমূতির্ ক্ষুণœ করবে এবং তাতে দলের ও দেশের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নিবার্চনকে প্রত্যাখ্যানের পর শপথ ও সংসদে না যাওয়ার জন্য বিএনপিকে বলা হচ্ছে। দলের বড় বড় ও ডাকসাইটের প্রাথীর্রা যেহেতু হেরেছেন, তাই তারাও সংসদে না যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেবেন সেটাই স্বাভাবিক। সংসদ বয়কটের পক্ষে যুক্তি হলো, সংসদে যোগ দেয়া মানেই হলো সরকারি দলের অনিয়মকে মেনে নেয়া, তাদের সরকার ও সংসদকে বৈধতা দেয়া। তাহলে প্রশ্ন উঠবে, সংসদ বয়কটের কারণে ক্ষমতাসীন দল চাপের মুখে পড়েছে এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে আছে কী? পঞ্চম সংসদেও যখন ১৪৭ জন এমপি পদত্যাগ করেছিলেন, তখনো কিন্তু সরকারের পতন ঘটেনি।

বিএনপি সংসদে গেলে সরকারকে বৈধতা দেয়া হবে বলে যারা উপদেশ দিচ্ছেন, তাদের বুঝতে হবে, বিএনপির বৈধতার সাটিির্ফকেটের ওপর সরকারের বৈধতা, কিংবা সরকারের টিকে থাকা না থাকা নিভর্র করে না। ২০১৪-এ বিএনপি নিবার্চন প্রতিহত করেছিল এবং গত পঁাচ বছর ধরেই সরকারকে অবৈধ সরকার বলে গলা ফাটিয়েছে, তাতে সরকারকে তার মেয়াদকাল পূরণ করা থেকে ঠেকাতে পারেনি। মনে রাখতে হবে বিএনপির এমপিরা সরকারের ভোটে নিবাির্চত নয় যে, তারা সংসদে যাবে না? সংসদ সদস্যপদ কোনো পারিবারিক সম্পদের হিস্যাও নয় যে, বাটোয়ারা ন্যায্য হয়নি তাই বজর্ন করছি?

দল এবং রাষ্ট্র এক নয়। এমপিরা শুধু দল কিংবা দলীয় লোকজনের জন্য নয়; দেশ ও রাষ্ট্রের জনগণের মঙ্গলের জন্যই তারা নিবাির্চত হন। কমসংখ্যক সংসদ সদস্য নিয়ে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভ‚মিকা পালন করা যায়। আবার অনেক বড় বিরোধী দল, যাদের সংসদ সদস্য সংখ্যা শতাধিক, তারাও জাতীয় সংসদে যাননি এবং কথা বলেননি, এটাও ইতিহাস। অনেক সংখ্যক সংসদ সদস্য থাকা সত্তে¡ও বিরোধী দল অনবরত সংসদ বজর্ন করেছে, এমন নজিরই বাংলাদেশে বেশি।

অতীতে এমপিরা সংসদে ছিল, আইন মোতাবেক হাজিরাও দিয়েছেন শুধু বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায়! বিনিময়ে সেই মহান এমপিরা জাতির কী কাজে লেগেছেন যা গবেষণার বিষয়! ২০০৮-এর নিবার্চনের পর তো বিএনপি সংসদে ছিল, কিন্তু ওয়াক আউট আর অবান্তর কথা ছাড়া তারা জাতিকে কি দিয়েছিল? অন্যদিকে বতর্মান ক্ষমতাসীনরাও যখন বিরোধী দলে সংসদে ছিল, তখন কিন্তু হরতাল ছাড়া আর কিছুই করেছেন কী? ১৭৩ দিনের হরতালের রেকডর্ও রয়েছে। সংসদ সদস্য নিবাির্চত হলেও ভাতা নেয়ার প্রয়োজন মনে করা ছাড়া সংসদের কাছেও আসেননি। বাংলাদেশের ডামাডোলপূণর্ রাজনীতিতে বিরোধী দলের সংসদ বয়কটের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ একটি পুরনো ব্যাধি। তারপরও বিএনপি সংসদে ফিরলে জেনারেল এরশাদের ছদ্মবেশী বিরোধীদলীয় নেতার আসনটি অধিকতর ভুয়া বলে প্রমাণিত হবে। জাতীয় পাটির্র যে নেতাই বিরোধী দলের নেতার আসনে বসুক না কেন, তার অবস্থানের বেমানান ও বেখাপ অবস্থা জনগণের সামনে স্পষ্ট হবে। নিবার্চনের পর জাতীয় পাটির্ সরকারে থাকবেন না বিরোধী দলে যাবেন এ সিদ্ধান্ত দিতে হয়েছে ক্ষমতাসীনদেরই। জাতীয় পাটির্ সরকারের সঙ্গে জোট করে তাদের সঙ্গে মিলেমিশে নিবার্চন করেছে। গঠনতন্ত্র অনুসারে তারা তো বিরোধী দল হতে পারে না। এটি একটি কাগজে-কেতাবে, লোক দেখানো, অনিচ্ছুক ‘সরকারি বিরোধী দল’ হয়ে থাকলো!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32874 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1