বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে গরিব মানুষ বাড়ছে

বৈষম্য বিলোপের উদ্যোগ নিন
নতুনধারা
  ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় নানান সময়েই উঠে এসেছে, বৈষম্য প্রকট হওয়ায় আমাদের দেশে গরিব মানুষের হার ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘পভাটির্ অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি বা দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির অংশীদার-২০১৮’ শীষর্ক প্রতিবেদনেও পাওয়া গেল এমন তথ্য। সবচেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ আছে, এমন ১০টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে পঞ্চম অবস্থান বাংলাদেশের। আন্তজাির্তক দারিদ্র্যরেখা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি পিপিপি ডলারের মান সাড়ে ৩২ টাকার হিসাবে ২ কোটি ৪১ লাখ মানুষ দৈনিক ৬১ টাকা ৬০ পয়সাও আয় করতে পারেন না বলে জানানো হয়েছে। এ তথ্য তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের বিশাল এই জনগোষ্ঠী ঝুঁকিতে আছে। দেশে গরিব মানুষের হার বেড়ে যাওয়া ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত বলেই প্রতীয়মান হয়।

তথ্য মতে, ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে (পিপিপি) যাদের দৈনিক আয় ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম, তাদের হতদরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় আন্তজাির্তক দারিদ্র্যরেখা অনুযায়ী। বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মানুষকে দারিদ্র্য সীমার ওপরে উঠতে হলে দৈনিক কমপক্ষে ৩ দশমিক ২ পিপিপি ডলার আয় করতে হবে। এভাবে হিসাব করলে বাংলাদেশে অতি গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে দঁাড়াবে ৮ কোটি ৬২ লাখ। আর দারিদ্র্যের হার হবে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মানে হলো, টেকসইভাবে গরিবি হটাতে বাংলাদেশের প্রায় ৬ কোটি ২১ লাখ মানুষকে দ্রæত দৈনিক ৩ দশমিক ২ ডলার আয়ের সংস্থান করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে বলা যেতেই পারে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত দারিদ্র্য নিরসনের কথা বলা হলেও বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ। এটা ঠিক যে, সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সমাজে যে বৈষম্য বাড়ছেÑ তাও অস্বীকার করা যাবে না। আমরা মনে করি, দারিদ্র্য হ্রাসে সরকারের উদ্যোগ চলমান রাখার পাশাপাশি বৈষম্য বিলোপেও কাযর্কর উদ্যোগ নেয়া অপরিহাযর্।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ভারতে সবচেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষের বসবাস উল্লেখ করা হয়েছে। যার পরিমাণ ১৭ কোটি ৫৭ লাখ। তবে ভারত এবং বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ বসবাস করে নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়ায়। ১০টি দেশের তালিকায় থাকা শীষের্ আছে তানজানিয়া, মাদাগাস্কার, কেনিয়া, মোজাম্বিক ও ইন্দোনেশিয়া। জানা যায়, আগে দারিদ্র্য কমানোর পূবর্শতর্ ছিল প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দারিদ্র্য কমানো। এখন দেশে ৬-৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। এত প্রবৃদ্ধি অজের্নর পরও দেখা যায় প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বৈষম্যও বেড়েছে। ফলে দারিদ্র্য হ্রাসের গতিও কমেছে। বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দিয়ে দারিদ্র্য নিমূর্ল করা যাবে, এটা ঠিক নয়। তাদের পরামশর্ হলো, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে গরিব মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। গরিব মানুষের সম্পদ হলো পরিশ্রম। বাংলাদেশের বিপুল এই শ্রমের ব্যবহার নিশ্চিত এবং কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে গরিব মানুষের মজুরি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।

আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাংকের হিসাব বিবেচনায় নিয়ে এখন সংশ্লিষ্টদের কতর্ব্য হওয়া উচিত মাথাপিছু ৩ দশমিক ২ ডলারের দৈনিক আয়ে উত্তরণ ঘটাতে পদক্ষেপ নেয়া। আবার যে বিশাল জনগোষ্ঠী দুই হিসাবের মধ্যবতীর্ স্থানে আছে, তাদের দ্রæত আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করা জরুরি। জানা গেছে, আয়ের বৈষম্য পরিমাপের পদ্ধতি হচ্ছে জিনি (বা গিনি)সহগ। বিবিএসের সবের্শষ প্রতিবেদনে এই মান এখন ০.৪৮৩। জিনি সহগ ০.৫ পেরিয়ে গেলে তাকে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ বলা হয়। বাংলাদেশ এর খুব কাছে পেঁৗছে গেছে। সঙ্গত কারণে আয়বৈষম্য বিলোপের কাযর্কর উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প থাকা উচিত নয়।

উল্লেখ্য, আয়বৈষম্য বিলোপ না ঘটলে দেশে গরিব মানুষের হার যে ক্রমেই বাড়বেÑ সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। ধনী বৃদ্ধির হারেও বাংলাদেশ তৃতীয়; এবং এ হার ঊধ্বর্মুখী। ফলে আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাংকের পরামশর্ আমলে নিতে মাথাপিছু আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হলেও আয়বৈষম্য বিলোপে সংশ্লিষ্টদেরই নিতে হবে কাযর্কর উদ্যোগ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<33066 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1