শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ

সিবিএ সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হতে পারবে না। তাদের কাজকমর্ দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে সীমিত থাকতে হবে। উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খেলাপি ঋণের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে ব্যাংক আর খেলাপি সিনড্রম দ্বারা আক্রান্ত হবে না। কোনো প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ দিতে হলে সেটি প্রথমত কন্সালট্যান্ট দ্বারা তৈরি হতে হবে। প্রত্যেকটি ব্যাংকের তালিকাভুক্ত কোয়ালিফাইড কন্সালট্যান্ট থাকতে হবে। বোডের্ উপস্থাপনের পূবের্ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিশেষজ্ঞ কমিটি আর একবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। চেয়ারম্যানসিইও-এর এককভাবে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা থাকবে না, অথের্র পরিমাণ যতই কম হোক।
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
  ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার সরকার সেভাবে কাজ করেছে, সাফল্য এসেছে। এসেছে আন্তজাির্তক স্বীকৃতি, বিশ্বের ১০০ জন নিরাপত্তাবিষয়ক চিন্তাবিদের একজন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এ ছাড়া অথর্নীতিতে সাফল্যের কথাও বিশ্বে বিশেষভাবে উল্লিখিত ও স্বীকৃত, এর পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই। বতর্মানে নতুন সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়েছেন যে দুনীির্তর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এই অভিযানের প্রধান শিকার হওয়ার কথা খেলাপি ঋণ। কেন জানতে হলে আলোচনা করতে হবে খেলাপি ঋণের ইতিবৃত্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ছয়টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংক সেক্টরের যাত্রা শুরু। তবে বড় অশুভ যাত্রা। দুমুখো আক্রমণের শিকার হলো দ্রæত। প্রথমত, শ্রমিক সংগঠনের নেতা সিবিএ, দ্বিতীয়, সরকার মনোনীত পরিচালক বোডর্। ব্যাংক কাজ দেবে নিদির্ষ্ট প্রকল্পের বিপরীতে। আর সে প্রকল্পের কারিগরি, অথৈর্নতিক এবং বাস্তবতা সব কিছু দেখে শুনে তারপর অথর্বরাদ্দ করার কথা। তারপরও দুএকটা প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা হতে পারে। সময় মতো ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটনা উল্টো। ঋণ বরাদ্দ হয়নি, লুটপাটের জন্য অথর্ বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্প ছিল একটি বানানো, কত টাকা বরাদ্দ করা হবে তা নিভর্র করেছে ব্যাংক কমর্কতার্ এবং কথিত উদ্যোক্তাদের শতকরা নিয়ে দর কষাকষির ওপর। দুঃখের বিষয় সব সরকারের আমলে এমনটি হয়েছে কিন্তু তেমনিটি আমল দেয়া হয়নি। বরঞ্চ উত্তরোত্তর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে তা বেড়ে দঁাড়ায় ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকায়। মনে করা হয় যে, এর পরিমাণ আরো বেশি হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকও এই অপকমের্ যোগ দেয়। ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা জনগণের আমানত। অথচ একে নিয়ে নয়ছয় খেলা হয়েছে। চার হাজার কোটি টাকার তছরুপকে বলা হয়েছে স্মল ফ্রাই। মালয়েশিয়াতে বিদেশিদের গৃহ নিমার্ণ প্রকল্পে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়, মনে করা হয় যে, গত একদশকে যে বিপুল ঋণ নেয়া হয়েছে ব্যাংক থেকে, আর একটা ব্যাপক অংশ রয়েছে এই প্রকল্পে নিয়োগ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, দুনীির্তর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। অথার্ৎ, আমরা নিশ্চিত যে, তার যে কথা, সেই কাজ। অতএব, মালেয়শিয়া সরকারের কাছে অবিলম্বে তালিকা চাওয়া হবে কে কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন। মালয়শিয়া দুনীির্ত ব্যাধির কঠিন শিকার। অতএব, আমরা নিশ্চিত যে, মালয়েশিয়া সরকার সহযোগিতা এবং তালিকা সরবরাহ করবে। এই সঙ্গে দেশের ঋণখেলাপির একটা পূণার্ঙ্গ তালিকা করতে হবে এবং এর শ্রেণিবিন্যাস করতে হবে। কেননা, কিছু প্রকল্প আছে যা কোনো দিন বাস্তবায়িত হবে না। শত চেষ্টা করে এমনকি আথির্ক সাহায্য দিয়েও। এসব প্রকল্পের দ্রæত বিলুপ্তি ঘটিয়ে যে টাকা পাওয়া যাবে, তার বিন্যাস ঘটানো আর যে টাকা কোনদিনই ফেরত পাওয়া যাবে না অহেতুক তার হিসাব না টেনে অবলোপন করে দেয়া। আর একটা তালিকা হতে পারে যেখানে প্রকল্পটাকে জিইয়ে রাখা হয়েছে পুনঃসিডিউল করে বারবার অথর্ বরাদ্দ নেয়ার জন্য। সরকারকে পুনঃতফসিল করা বন্ধ করতে হবে। তবে যে সব প্রকল্প সম্পকের্ সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত যে, বাস্তবায়িত করা সম্ভব, সেখানে ঋণ পুনবির্ন্যাস করা যাবে। তবে তার একটা সময় সীমা থাকতে হবে। চেক ডিসঅনারের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কঠিন হতে হবে। যে মুহ‚তের্ চেক ডিসঅনার হবে, সেই মুহ‚তের্ তার অপরাধ স্পস্টভাবে সংঘটিত হয়েছে, এ নিয়ে আর কোনো তদন্তের প্রয়োজন নেই। তৎক্ষণাত কোটের্ কেস দাখিল করে অজামিনযোগ্য ওয়ারেন্টের আবেদন করা। দলীয়, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কারণে বোডের্ পরিচালকের মনোনয়ন দেয়া বন্ধ করতে হবে। সিনিয়র ব্যাংকার সদস্যদের (অবসর প্রাপ্ত হতে পারে) নিয়ে গঠিত সাচর্ কমিটির মাধ্যমে পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে।

সিবিএ সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হতে পারবে না। তাদের কাজকমর্ দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে সীমিত থাকতে হবে। উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খেলাপি ঋণের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে ব্যাংক আর খেলাপি সিনড্রম দ্বারা আক্রান্ত হবে না। কোনো প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ দিতে হলে সেটি প্রথমত কন্সালট্যান্ট দ্বারা তৈরি হতে হবে। প্রত্যেকটি ব্যাংকের তালিকাভুক্ত কোয়ালিফাইড কন্সালট্যান্ট থাকতে হবে। বোডের্ উপস্থাপনের পূবের্ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিশেষজ্ঞ কমিটি আর একবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। চেয়ারম্যানসিইও-এর এককভাবে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা থাকবে না, অথের্র পরিমাণ যতই কম হোক।

কেননা, সে ক্ষেত্রে পুনরায় উপস্থাপনের কৌশল অবলম্বন করা হবে। বোডের্ উপস্থাপনের পর ব্যাংক আলোচনার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের মাধ্যমে প্রকল্পটি অনুমোদিত হতে হবে। সংখ্যা লঘিষ্ঠরা কোনো ভিন্ন মত দিলে সেটাও বোডের্র মিনিটে থাকতে হবে। বড় প্রকল্পের পুনবির্বরণ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দিতে হবে এবং বৎসরে কমপক্ষে দুবার আপডেট করতে হবে। এসব পদ্ধতি অনুসরণ করলে খুব বেশি খেলাপি ঋণের জন্ম হবে না, যা দু’একটা হবে তার কারণ নিণর্য় করা সম্ভব হবে। কেননা, ঋড়ৎপব সধলড়ৎব-এর কারণেও খেলাপি হতে হবে।

আমাদের ব্যাংক খাতের দুরবস্থার আর একটা কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষ্ক্রিয়তা। বাংলাদেশ ব্যাংক কখনও স্বাধীন অবস্থান নিয়ে কাজ করেনি। নিজেকে অথর্ মন্ত্রণালয়ের ংঁৎৎড়মধঃব মনে করেছে। প্রজাতন্ত্রে কিছু পদ রয়েছে যেখানে সবোর্চ্চ ব্যক্তির স্বীয় স্বাধীন ভ‚মিকা পালনের নৈতিক দায়িত্ব ও সুযোগ রয়েছে। হয়তো চাকরি যাওয়া বা ছেড়ে দেয়ার পরিস্থিতি হতে পারে। এসব পদে যারা যান তাদের দুবেলা অন্ন সংস্থানের সমস্যাতো থাকে না। তফসিল ব্যাংকের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ব্যাংকের টাকা জনগণের। এ টাকা নিয়ে ব্যাংক ছিনিমনি খেলতে পারে না। বিশ্বের অনেক দেশে বলা হয়েছে যে, একটি ঋরৎব ধিষষ থাকবে যাতে ব্যাংক তার টাকা এই ধিষষ অতিক্রম করে পেনশন ফান্ডের টাকা এবং পরিমাণ অতিক্রম করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ না করে। আমরা এখানে লক্ষ্য করেছি যে, অথর্মন্ত্রণালয়ের কিঞ্চিৎ চক্ষু রাঙানোর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আত্মসমপর্ণ করে বসে। দেশের অথর্নীতির প্রয়োজন অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংক খোলার অনুমতি দেয়ার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের। যার ভিত্তি হবে নিঃসন্দেহে অথৈর্নতিক, কিন্তু এখানে ব্যাংক খোলার অনুমতি দেয়া হয় রাজনৈতিক কারণে। আর সে খবরটি বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃর্ক প্রচারিত হওয়ার পূবের্ মিডিয়াতে এসে যায়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে এবার যেহেতু দুনীির্তর বিরুদ্ধে ক্রুসেড, তাই এমনটি আর হবে না।

আমাদের অনেক গুরুত্বপূণর্ ব্যক্তি অনেক আদশের্র কথা বলেন, ন্যায়-অন্যায়ের, কতের্ব্যর শিক্ষা দেন। কিন্তু সেটি তারা করে থাকেন অবসর গ্রহণের পর। চাকরির শেষ দিন পযর্ন্ত সুবোধ বালকের ন্যায় কতর্ব্য পালন করেন। তারপর পেনশনসহ সব সুবিধা গ্রহণ করেন। এরপর কলামে বা টকশোতে নীতি বাক্য বলা হয়। আর যদি কোনো শক্তিশালী এনজিওর সঙ্গে জড়িত হন, তাহলে তো কণ্ঠস্বর আরো জোড়ালো হয়। নতুন ব্যাংক সম্বন্ধে একটা কথা বলা প্রয়োজন। এদের কেউ অত্যন্ত রক্ষণশীল মনোভাব নিয়ে কাজ করেন। ব্যাংক শাখা রাজধানী, বৃহৎ নগরী কিংবা খুব নিরাপদ ব্যবসায়িক স্থানে শাখা খুলে থাকে। সাধারণ বিনিয়োগকারী কিংবা পল্লী অঞ্চলের প্রতি কোনো আগ্রহ দেখায় না। এ বিষয়টির প্রতিও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। নিজ হাউসের ঋণ/অন্যান্য কমর্কাÐের বিনিয়োগযোগ্য অথের্র সংরক্ষণ ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য।

সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<34574 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1