শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একজন আদশর্ শিক্ষক হলেন দেশ গড়ার কারিগর

আবু সালেম হোসাইন শিক্ষাথীর্, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

শিক্ষাই জাতির মেরুদÐ ও শিক্ষকরা হলেন এই মেরুদÐ গড়ার কারিগর। যদি প্রশ্ন করা হয় একটি আদশর্, নীতি-নৈতিকতা বোধসম্পন্ন জাতি তৈরির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূণর্ বিষয় কোনটি? বোধ হয় সবচেয়ে সঠিক জবাব হওয়া উচিত নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা।

শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি তথা প্রাথমিক শিক্ষাস্তর যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মনমগজে ও ধ্যানে- জ্ঞানে আদশর্, নীতি-নৈতিকতা, সততা, আচরণগত অভ্যাস, দেশ প্রেম, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, জাতির প্রতি মমত্ববোধ তৈরি করতে না পারে তা হলে কখনোই আদশর্বান জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। একটি জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভ‚মিকা অপরিসীম। আর শিক্ষকতা হচ্ছে একটি মহান পেশা। শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকতা হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীন পেশাগুলোর একটি। ন্যায়-বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে শিক্ষকদের ভ‚মিকা অনন্য। সমাজের ভালো কাজ করার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজন। জাতির ভবিষ্যৎ শিক্ষাথীের্ক সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে আর সেটা করবে একজন শিক্ষক। সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেটা রোধ করাও শিক্ষকদের দায়িত্ব। কেননা শিক্ষকরাই শিক্ষাথীের্দর ন্যায়-অন্যায়, সৎপথ, সঠিকপথের নিদের্শনা প্রদান করবে। সত্য-অসত্য, দেশের স্বাথর্ এবং দেশের উন্নয়নের করণীয় সব বিষয়গুলো তাদের কাছে পেঁৗছে দেবে একজন দায়িত্ববান শিক্ষক।

পরিবার থেকে বের হয়ে এসে একজন শিশু বিদ্যালয়ে ভতির্র মধ্যদিয়ে তার দ্বিতীয় পযার্য় শুরু করে। প্রথমপযাের্য় মা-বাবা যেমন তার প্রথম শিক্ষা, এই পযাের্য় শিক্ষক-শিক্ষিকা হন তার দ্বিতীয় মাতা-পিতা। প্রথম পযাের্য়র চার/পঁাচ বছরে পরিবার থেকে সে যা শিখে আসে, বিদ্যালয়ের সঙ্গে তার এক দ্ব›দ্বমধুর সম্পকর্ গড়ে ওঠে। বিদ্যালয়ে একটি শিশু শৈশবের দশটি বছর পার করে দিয়ে যৌবনে পা রাখে। অপরিণত বয়স থেকে পরিণত বয়সের দিকে এগিয়ে যায়। এগিয়ে যায় একজন পরিপূণর্ মানুষ হওয়ার পথে। দ্বিতীয় পযার্য় সেই পযার্য়Ñ যখন একটি শিশু জীবনের অভিজ্ঞতার পৃষ্ঠা থেকে জ্ঞান আহরণের সঙ্গে সঙ্গে অথবা তার পরিবতের্ জ্ঞান লাভের জন্য অভিজ্ঞতাচ্যুত হয় এবং তা পাওয়ার জন্য বইপত্রের ওপর নিভর্রশীল হয়ে ওঠে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাত ধরে সে বইয়ের জগতে প্রবেশ করে। বড় কঠিন এই দ্বিতীয়পযার্য়। একজন শিক্ষাথীর্র স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার সময় এটা। সেই জন্য এই পবের্ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূণর্ হয়ে ওঠে। পরবতীর্ কমর্জীবনের সাফল্য ও ব্যথর্তার ভিত্তি রচিত হয়ে যায় এই পবের্। চীনের প্রাচীন দাশির্নক কনফুসিয়াস বলেছেন- ‘শিক্ষক হবেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উৎস। তিনি হবেন একজন আদশর্ শাসক’।

শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনিমাের্ণর হাতিয়ার। শিক্ষক হলো তার সুনিপুণ কারিগর। শিক্ষা ছাড়া আলোকিত মানুষ সৃষ্টি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একজন শিক্ষকের কিছু কাজ ও দায়বদ্ধতা আছে। এ কাজ ও দায়বদ্ধতা সহকমীের্দর কাছে, সমাজের কাছে, দেশ ও জাতির কাছে, আগামী প্রজন্মের কাছে। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা থাকে। শিক্ষক শুধু সফল নয়, একজন ভালো মানুষ হতে শেখান। মানবিক বিপযর্য় বা বৈশ্বিক, অথৈর্নতিক সংকটে আক্রান্ত হয়েও সামাজিক, অথৈর্নতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিনিমাের্ণ শিক্ষকরা অবিরাম ভ‚মিকা রেখে চলেছেন। শিক্ষক হচ্ছেন সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও। পিতা-মাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই। শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী লুনাচারস্কি বলেছিলেন, শিক্ষক হলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি নতুন প্রজন্মের কাছে যুগ-যুগান্তরে সঞ্চিত যাবতীয় মূল্যবান সাফল্য হস্তান্তরিত করবেন, কিন্তু কুসংস্কার, দোষ ও অশুভকে ওদের হাতে তুলে দেবেন না। এটাই হলো শিক্ষকদের গুরুত্বের মাপকাঠি। মনে রাখা প্রয়োজন, শুধু তাদের দিয়েই আমরা সুস্থ কুঁড়িগুলোকে লালন করতে পারি। আমেরিকার ইতিহাসবিদ হেনরি এডামস শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পকের্ বলেছেন, একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলেন, কেউ বলতে পারে না তার প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়। দাশির্নক বাট্রার্ন্ড রাসেল এ বিষয়ে বলেছেন, শিক্ষক সমাজ হচ্ছেন প্রকৃতই সমাজ ও সভ্যতার বিবেক। তাই তো শিক্ষকদের বলা হয় ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার’ তথা সমাজ নিমাের্ণর স্থপতি। সমাজের সাবির্ক অগ্রগমনের ক্ষেত্রে শিক্ষা ও শিক্ষকের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্।

একজন ভালো শিক্ষক এর যে সব গুণ থাকা বাঞ্ছনীয়- অবশ্যই ছাত্রছাত্রীদের মন বুঝতে হবে। নিজের শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। কারণ নিজের শেখার আগ্রহ না থাকলে ছাত্রছাত্রীদের শেখার আগ্রহ তৈরি করতে পারবেন। আচার-আচরণে ভদ্র হতে হবে। মিশুক হতে হবে। সততা অপরিহাযর্। নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। ধৈযর্শীল হতে হবে। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত দুই ধরনের মানুষের প্রয়োজন কখনই শেষ হবে না- শিক্ষক ও চিকিৎসকের। শিক্ষকতা একটা ধমর্, একে জীবনে ধারণ করতে হয়; জ্ঞানীমাত্রই শিক্ষক নন। মাদকমুক্ত, সমাজ গঠনে শিক্ষদের অনেক ভ‚মিকা রয়েছে। শিক্ষকরাই পারেন একটি সমাজকে মাদকমুক্ত করতে। এটি শুধু আইন প্রয়োগ করে সম্ভব নয়। বতর্মান সরকার মানসম্মত শিক্ষা অজের্নর জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের দেশে এজন্য শিক্ষার হার শতকরা ৭২ ভাগে দঁাড়িয়েছে। আজকের তরুণ শিক্ষাথীের্দর সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলে জাতি গঠনে কাজে লাগাতে হবে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধপরিকর। আগামী ২০৪১ সালে আমাদের দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

জাতি গড়ার কারিগরদের মূল্যায়ন ছাড়া সুশিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আমরা যদি শিক্ষকদের মূল্যায়ন না করি, শিক্ষকদের মযার্দা সম্পকের্ সচেতন না হই তাহলে সুশিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।’ আজকের দিন শিক্ষকদের জন্য সম্মানের। দেশের শিক্ষার উন্নতির জায়গা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। এই স্তরে শিক্ষার মান বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে হবে এবং তাদের সবাির্ধক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। ভøাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন বলেছেন, সমাজ পরিবতের্নর পূবর্শতর্ মানুষের পরিবতর্ন। সেই পরিবতের্নর অভিভাবকত্ব শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব। সমাজের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকা, সমাজের প্রত্যাশা মোতাবেক একজন শিক্ষক হবেন জ্ঞানতাপস, মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত, ব্যক্তিত্ববান, চৌকস, শ্রেণি কক্ষে আগ্রহী পাঠদানকারী ও জ্ঞান বিতরণে আন্তরিক। তিনি সুবিচারক, সুপরীক্ষক, শিক্ষার মাননিয়ন্ত্রক, যুক্তিবাদী, গবেষক এবং উদ্ভাবকও। তিনি সঠিক পথের দিশারী, পথপ্রদশর্ক। অবশ্যই সৎ ও ধামির্ক। শিক্ষক সহজ হবেন, সরল হবেন, নিমর্ল হবেন, হবেন অকুতোভয় সত্যবাদী। সপ্রতিভ ব্যক্তিত্ববান, সমাজ হিতৈষী, পরোপকারী এবং আধুনিকতামনস্ক বিচক্ষণ সমাজ সংস্কারক। শিক্ষক হবেন চারিত্রিক দৃঢ়তাসম্পন্ন, পরিশ্রমী, নিরপেক্ষ, হাস্যোজ্জ্বল, সুপরামশর্ক ও প্রাণবন্ত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

সরকার শিক্ষকদের জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে তাদের সবাির্ধক মযার্দার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। কারণ যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। তাই কোনো জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য শিক্ষকদের মযার্দা দেয়া প্রয়োজন। বতর্মান সরকার শিক্ষকদের বেতনভাতা বৃদ্ধিসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে শিক্ষকদের সবোর্চ্চ মযার্দায় অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। ন্যায়-বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সৎ মানুষ, শিক্ষিত মানুষ ও জ্ঞানী মানুষের। সোনার বাংলা বিনিমার্ণ সময়ের দাবি, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। শিক্ষকমÐলী যারা আগামীর জন্য মানুষ সৃষ্টি করেন তাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। একজন শিক্ষকই পারেন একজন সুন্দর ও জ্ঞানী মানুষ তৈরি করতে। মানুষ যদি জ্ঞানী না হয় এবং জ্ঞানসমৃদ্ধ না হয় তাহলে সমাজের কোনো কাজে আসতে পারে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<34992 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1