নানা কারণে দেশে আত্মহত্যা করার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। শুধু আমাদের দেশেই নয় বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই আত্মহত্যাপ্রবণতা চোখে পড়ে। প্রতি বছর এক মিলিয়ন মানুষ এই পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যা জীবনের একটি অমীমাংসিত সমাধান। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চঁাদ/মরিবার হ’লো তার সাধ।’ মরিবার সাধ- এই কথাটির মধ্যে অনেক তাৎপযর্ বহন করে। স্বেচ্ছায় নিজের জীবন বিসজর্ন দেয় ভীরু-কাপুরুষ যারা তারা। এই কথাও সমাজে প্রচলিত রয়েছে। অথবা এটাও বলা যেতে পারে যে যারা জীবনকে ভালোবাসে না কেবল তারাই আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যা মহাপাপ। ধমর্ এটাকে সমথর্ন করে না। প্ররোচনার কারণেও অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যারা আত্মহত্যায় প্ররোচনা করছে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের (৩২) আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তার চিকিৎসক স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। আটক করা স্ত্রীর নাম তানজিলা হক চৌধুরী ওরফে মিতু। চট্টগ্রামের তরুণ চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশ আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিয়ে বহিভূর্ত’ সম্পকের্র যেসব অভিযোগ করে গেছেন, তা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে পুলিশ। আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান বলেছেন, আত্মহত্যার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ওই দম্পতির মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিতু কিছু কিছু বিষয় আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। আবার কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছেন। আমরা মনে করি, স্ত্রী ব্যভিচারী হলে তাকে পরিত্যাগ করা উচিত, আত্মহত্যার মাধ্যমে নিজের জীবন সংহার করা নয়। কারণ জীবনের মূল্য সম্পকর্ রক্ষার চেয়ে অধিক।
বাংলাদেশের অন্যান্য সামাজিক সমস্যার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও একটি গুরুত্বপূণর্ সমস্যা। ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ এটি। প্রতিবছরই তা বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্য এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, গত বছর দেশে আত্মহত্যা করে ১১ হাজার ৯৫ জন, দিনে যা ৩০ জনেরও বেশি। মাদকসেবন বেড়ে যাওয়া, কমর্সংস্থানের অভাব, পারিবারিক কলহ, নিযার্তন, ভালোবাসায় ব্যথর্তা, পরীক্ষায় অকৃতকাযর্, বেকারত্ব, যৌন নিযার্তন, অপ্রত্যাশিত গভর্ধারণসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
আত্মহননকারীরা জীবনের নানামুখী সমস্যা সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতেই নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নেয়। প্রকৃতপক্ষে নিজেকে ধ্বংস করার ভেতর কোনো বীরত্ব নেই, নেই কোনো কৃতিত্ব। চিকিৎসকদের মতে, আত্মহত্যাকারীদের ৯৫ শতাংশই মানসিক রোগে ভোগেন। দেশে ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা। আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষকে সঙ্গ দেয়া, বিনোদনমূলক ও প্রকৃতিনিভর্র কোনো জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। আর এটা করতে হবে বন্ধ আত্মীয়-স্বজনকেই। এ সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন তাদের জীবন সম্পকের্ কোনো গভীর উপলব্ধি নেই। তারা মনে করেন জীবন একভাবে কেটে গেলেই হলো। অথবা গভীর হতাশাবাদীরা নৈরাশ্যবাদীরা ভাবে এ ক্ষুদ্র জীবনের কী মূল্য আছে? নানা দুঃখ কষ্ট হতাশায় অপ্রাপ্তি আর বঞ্চনায় অনেকেই জীবনকে তুচ্ছ ভাবে। আত্মহননের মাধ্যমে জীবনের মায়া ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চলে যায়, ঘটাতে চায় জীবনের পরিসমাপ্তি। এটা কোনো সমাধান নয়। বেঁচে থেকেই জীবনের সমাধান খুঁজতে হবে। জীবনের সমাধান জীবনের মধ্যেই নিহিত, আত্মহননের মধ্যে নয়।