বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা-রাজনাথ বৈঠক

বন্ধুত্বপূণর্ সম্পকর্ অটুট থাকুক
নতুনধারা
  ১৬ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুপ্রতিম সম্পকর্ সুবিদিত। দুই দেশের উচ্চপযাের্য়র নীতিনিধার্রকরা মাঝেমধ্যেই উভয় দেশ সফর করছেন। এতে উভয় দেশের মধ্যে সৌহাদর্্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি খাতে সহযোগিতাও আগের তুলনায় প্রসারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের অথৈর্নতিক অগ্রগতির ভ‚য়সী প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয় বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বাংলাদেশ-ভারতের উচ্চপযাের্য়র দুই নেতার এই বৈঠকের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বলাই বাহুল্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বতর্মানে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মারাত্মকভাবে ছোবল হানছে। শুক্রবার পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ১৩২ জন নিহত হওয়ার ঘটনাটি উভয় দেশের নেতার আলোচনায় উঠে আসে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ায় কাযর্করভাবে সন্ত্রাস দমনের বিষয়টি বৈঠকে গুরুত্ব পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশের ভ‚খÐের কোনো অংশ অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কাযর্ক্রম চালানোর জন্য ব্যবহার হতে দেবে না। বতর্মানে বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক কারণ বিবেচনায় ভারত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠাচ্ছে বলে বৈঠকে উল্লেখ করা হয়। যদি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয়ে ভারত এখন পযর্ন্ত জোরালোভাবে কিছু বলেনি।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, এই বৈঠকে উভয় দেশের পারস্পরিক স্বাথর্সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা ও সম্পকর্ অটুট রাখতে বাংলাদেশ সব সময় উদারনীতি অবলম্বন করে আসছে। এটা বাংলাদেশের বন্ধুসুলভ মানসিকতার সাক্ষ্যবহ। নিজের দেশের শত সমস্যা থাকা সত্তে¡ও সম্পূণর্ মানবিক কারণে রাখাইনের বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এর জন্য আন্তজাির্তকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। এ সবই বতর্মান সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশ নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে অথৈর্নতিক অগ্রযাত্রায় সামিল হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গণ্য করছে। সে হিসেবে বাংলাদেশের এই উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশগুলোরও অবদান আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকেই ভারত বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমথর্ন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে। পক্ষান্তরে দিল্লি বাংলাদেশের কাছে করিডর, ট্রান্সশিপমেন্ট, শুল্কমুক্ত পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য সুবিধাসহ যখন যা চেয়েছে, তখনই তা পেয়েছে সহজে। ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ভারতের স্বতঃস্ফ‚তর্ সমথর্ন ও সহযোগিতা সবর্দাই স্মরণ করা হয়ে থাকে। সে তুলনায় বাংলাদেশের চাহিদা ও প্রাপ্তি অনেক কম। উদাহরণে বলা যায়, উজানে পানির প্রবাহ ও প্রাপ্তির কথা। ভারত কোনো অবস্থাতেই আন্তজাির্তক রীতিনীতি ও আইনকানুন ভঙ্গ করে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অবরুদ্ধ করতে পারে না। অথচ ভারত তাই করেছে প্রথমে গঙ্গা এবং পরে তিস্তা ও অন্যান্য নদ-নদীতে বঁাধ ও ব্যারাজ নিমার্ণ করে। সবের্শষ ব্রহ্মপুত্রেও বঁাধ নিমাের্ণর কথা শোনা গেছে। বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রেই ন্যায়ানুগ ও যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো গঙ্গার পানি নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তা হয়নি; বরং ঝুলে আছে দীঘির্দন থেকে। বাংলাদেশ ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে, তাও আবার ভারতের মতো বন্ধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে- বিষয়টি নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে বৈকি। যদিও অমীমাংসিত এসব বিষয় নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, আমরা প্রত্যাশা করব, এখন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে উভয় দেশকে।

সবোর্পরি বলতে চাই, বাংলাদেশ ভারতের শুধু নিকট প্রতিবেশীই নয়; বরং দীঘির্দনের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ। আমরা প্রত্যাশা করি, রোহিঙ্গা শরণাথীের্দর মিয়ানমারে শান্তিপূণর্ ও সম্মানজনক পুনবার্সনে ভারতের সবার্ত্মক সহযোগিতা যেমন কাম্য তেমনিভাবে সন্ত্রাস-উগ্রবাদ দমনে উভয়দেশকে পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল হয়েই এগিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক উন্নয়নে সহযোগী হিসেবে উভয় দেশের সম্পকর্ অটুট থাকÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<3630 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1