পূবর্ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্যই এই সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং সৌদি সশস্ত্রবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুতলাক বিন সালিম আল উজাইমিয়া উভয় দেশের পক্ষে এই চুক্তি সই করেন। চুক্তির আওতায় সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সামরিক প্রশিক্ষণ, অনুশীলন ও শিক্ষা, দক্ষতা বিনিময়, সামরিক ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, প্রতিরক্ষা শিল্প, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পরিদশর্ন, সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে বলে উল্লেখ আছে। এ ছাড়া সামরিক চিকিৎসা ও গবেষণা, ক্রীড়া, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাযর্ক্রম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সামরিক সদস্যদের সফর বিনিময়, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও জলদস্যুরোধের কাযর্ক্রম অন্তভুর্ক্ত রয়েছে সমঝোতায়। বলার অপেক্ষা না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা রয়েছে, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’; ফলে এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যকার পারস্পরিক সৌহাদর্ আরও বৃদ্ধি পাবে এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে ইতোমধ্যে। জাতিসংঘসহ আন্তজাির্তক অঙ্গনের বিভিন্ন জরিপেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অথৈর্নতিকভাবে ভালো একটি অবস্থানে অচিরেই পেঁৗছে যাবে, এমন আশাবাদের কথা বলা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গণ্য করেছে। পক্ষান্তরে আমাদের দেশটি এখন উন্নয়নের মহাসড়কে হঁাটছে; আর দেশের এই অগ্রগতির পথে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতার বিষয়টি উপেক্ষা করার মতো নয়। সৌদি আরবও বাংলাদেশর বন্ধুপ্রতীম দেশ। বিপুল জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশের বহু শ্রমিক সৌদি আরবে শ্রম বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছে। সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম একটি শ্রমবাজার। ফলে দেশটি যে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নেরও অংশীদার, তাতে সন্দেহ নেই; অস্বীকারেরও উপায় নেই। তবে বাণিজ্য কিংবা শ্রম বিনিয়োগসংক্রান্ত চুক্তিসহ অন্যান্য খাতের চুক্তির তুলনায় প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা চুক্তি অতীব গুরুত্বপূণর্ এবং স্পশর্কাতর বলে আমরা মনে করি। তথ্য মতে, উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূণর্ সম্পকের্র ভিত্তিতে এবং পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে এমওইউ সই হলেও, চুক্তি বাস্তবায়ন সজাগ ও সতকর্তার বিকল্প নেই বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অন্যদিকে, এই চুক্তি সংবিধানের ২৫ ধারার সঙ্গে সাংঘষির্ক কিনা তা নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন এমপিরা। একই সঙ্গে তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেছেন। ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশের ১৮০০ সেনা নিয়োগ দেয়ার কথা উল্লেখ করে ওয়াকার্সর্ পাটির্র সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগে বাংলাদেশ নাম লেখালে তা আমাদের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি ছিল। সৌদি আরব ওখন ওই উদ্যোগকে ৩৪ জাতি সামরিক জোন বলেছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, সৌদি আরবের মক্কা এবং মদিনায় দুটি মসজিদ আক্রমণের মুখে পড়লেই কেবল সেনা পাঠানো হবে। ফলে চুক্তি সই এবং সেনা পাঠানোর বিষয়টি সামনে আসায় সংসদ সদস্যদের এই প্রশ্নও অযৌক্তিক হতে পারে না। সংসদ রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক অঙ্গ। ফলে সংসদকে পাশ কাটিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা পরিতাপের।
সবোর্পরি বলতে চাই, সংবিধানসম্মত নয় এমন যে কোনো কমর্কাÐ থেকে বিরত থাকতে হয় রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বাথের্ই। সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিষয়টি বিশেষজ্ঞ কমিটি কতৃর্ক রিভিউ হওয়া জরুরি। এর যৌক্তিকতাও অস্বীকার করা যায় না। প্রতিবেশী কিংবা বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পকর্ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের কতর্ব্য হওয়া দরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা। প্রশ্ন যখন উঠেছে, তখন এই চুক্তি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘষির্ক কিনা তা পযের্বক্ষণ করা শ্রেয়। প্রত্যাশা থাকবে, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পকর্ দৃঢ় ভিত্তি পাক; এবং অবশ্যই তা হওয়া উচিত দেশের স্বাথের্ক অগ্রাধিকার দিয়ে।