একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। দেশে পেট (পিইটি) বা পলিথিন জাতীয় দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পেট রেজিন থেকে তৈরি হচ্ছে পলিস্টার কাপড়ও। তবে এত দিন ‘পেট’ বোতল ও দ্রব্য সামগ্রীর কঁাচামাল পেট রেজিন আমদানি নিভর্র ছিল। এ আমদানি নিভর্রতা কমাতে এবং রাষ্ট্রীয় অথর্ সঞ্চয়ের লক্ষ্যে এবার দেশেই শুরু হয়েছে পেট রেজিন উৎপাদন প্রক্রিয়া। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় বাংলাদেশের প্রথম পূণার্ঙ্গ পেট রেজিনভিত্তিক কারখানা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (বিপিসিএল)।
পেট রেজিন দিয়ে খাবার পানি ও কোমল পানীয়ের বোতল তৈরি করা হয়। এ ছাড়া অন্য দ্রব্যসামগ্রীও এ পেট রেজিন থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ প্রতি বছর ১ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন রেজিন আমদানি করে থাকে, যা চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এই কারখানা নিয়ে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদেম মাহমুদ ইউসুফের বক্তব্য হলো, বিপিসিএল বাংলাদেশের বজর্্য থেকে পণ্যেও নতুন কঁাচামাল বের করার ধারণাকে কাজে লাগাতে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে। এ কারখানায় প্লাস্টিকের ব্যবহৃত বোতলসহ বিভিন্ন সামগ্রী পুনঃ প্রক্রিয়াজাত করা হবে। বতর্মানে কারখানাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাৎসরিক ৫০০ টন। কয়েক বছরের মধ্যেই তা ২৫ হাজার টনে উন্নীত হবে। কারখানায় বতর্মানে দেড়শ’ লোকের কমর্সংস্থান হয়েছে। দেশে বতর্মানে তিন লাখ বজর্্য সংগ্রাহক রয়েছে। খাদেমের লক্ষ্য এই সংগ্রাহকদের? জীবনযাত্রা উন্নত করা। যার মাধ্যমে শিশুশ্রমও হয়তোবা উৎখাত করা সম্ভব হবে।
যতদূও জানি, এই ভদ্রলোকের ব্যাকগ্রাউন্ড মূলত ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। চাকরির শুরুতে তিনি ছিলেন চিপ নিমার্তা প্রতিষ্ঠান এএমডিতে। পরবতীের্ত ক্যালিফোনির্য়ায় চলে যান তিনি। সেখানে ন্যাশনাল সেমিকন্ডাক্টেও কাজ শুরু করেন। এরপর বেশ কয়েকটি স্টাটর্আপেও কাজের অভিজ্ঞতা হয় তার। এর কিছুদিন পর দেশে ফিরে আসেন তিনি। এখানে নেটওয়াকর্ নিয়ে কাজ শুরু করেন। এক বন্ধুর সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন আলাপ-কমিউনিকেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শুরুতে তাদের লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন ব্যাংককে একটি নেটওয়াকের্ যুক্ত করা। একে একে বিভিন্ন ব্যাংক এই সেবাটি গ্রহণ করতেও শুরু করে ছিল। মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ উপেক্ষা করে দেশে ফিরে আসেন খাদেম মাহমুদ ইউসুফ। তার মতো অবশ্য অনেকেই দেশে ফিরে আসেন। বিদেশের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, উচ্চশিক্ষা, পেশাগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে দেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছেন। আমার পরিচিত, চেনাজানা আরও অনেক উদ্যোক্তা, পেশাজীবী বাব্যবসায়ী রয়েছেন। যারা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কিন্তু দেশে ফিরে দেশের টানে তাদের? শিক্ষা বা দক্ষতা কাজে লাগিয়ে এখানেও বাণিজ্যিক বা সেবা কাযর্ক্রম শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে দেশে সৃষ্টি হচ্ছে নিত্য নতুন কমর্ সংস্থান, প্রসারিত হচ্ছে পযর্টন শিল্পও। অনেকেই এখানে আন্তজাির্তক মানের হোটেল নিমার্ণ করছেন। বিদেশের বাজারে? আমাদে? পণ্যে? নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। রপ্তানি আয় বাড়ছে দ্রæত গতিতে। এটি আমাদের অথর্নীতিকে যেমন সমৃদ্ধ করছে, তেমনি এটি অবশ্যম্ভাবীভাবে দরকারিও।
কেননা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অজর্ন করতে হলে সপ্তম পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনার মতে আমাদের দরকার হবে চার কোটি ৯৮ হাজার ৫০ লক্ষ কোটি টাকা। এই ?? অথর্ কোথা থেকে আসবে? এর জন্য উদ্ভাবনী পথ খুঁজতে হবে। চীন, মালায়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে আমরা দেখেছি যে, সেসব দেশের মানুষ যারা বিভিন্ন দেশে প্রবাসী হয়েছেন, তারাই কিন্তু দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাদের? মাধ্যমেই সে সব দেশের বড় বিনিয়োগ এসেছে। গণচীনে ৬৬% ভাগ বিনিয়োগ এসেছে তাদের দেশের প্রবাসীদের মাধ্যমে। সম্প্রতিকালে ভারতেও এটি হচ্ছে। ভারত পরিকল্পিতভাবেই এটি শুরু করেছে। বিদেশে অবস্থানরত সব নন-রেসিডেন্সিয়াল ভারতীয়দের? জন্য সে দেশের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার দ্বার খোলা। বিদেশে তাদের দূতাবাসগুলো নন- রেসিডেন্ট ভারতীয়দের সেবা প্রদানে খুবই আন্তরিক ও পারদশীর্। অথার্ৎ দেশের উন্নয়নেই সে দেশের প্রবাসীরা অবদান রাখছেন। দেরিতে হলেও অবশ্য আমরাও তেমন উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছি।
আমাদের জনসংখ্যার ১ কোটি ১৬ লাখেরও বেশি লোক বিদেশে কাজ করছেন। এদের মধ্যে এক ধরনের লোক আছেন, যারা দেশে ফিরে আসবেন, অন্য আরেক ধরনের লোক আছেন যারা সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে নিয়েছেন। তবে তাদের বড় অংশই দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে চান, দেশের সাধারণ অসহায় মানুষের উপকারে আসতে চান। এই বিরাটসংখ্যক প্রবাসীদের? উন্নয়নের স্রোত ধারায় নিয়ে আসতে প্রতিবছর ৩০ ডিসেম্বর ‘প্রবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রবাসীরা ঢাকাসহ তা বিভিন্ন দেশে পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাতে নীতিগত সম্মতি আছে, তবে সরকার এখনো প্রবাসী দিবস ঘোষণা করেনি। উল্লেখ্য, যদিও বাঙালীরা ’৫২ সাল থেকে শহীদ দিবস বা ১৯৭৫ সাল থেকে শোক দিবস পালন করে আসছে। এ সম্পকের্ সরকারি ঘোষণা বহু বছর পরে এসেছে। তবে সুখের বিষয় যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিদেের্শ ও অথর্ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি টাস্কফোসর্ গঠন করা হয়েছে। এটির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়ের। টাস্কফোসর্ কিভাবে প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে। কীভাবে প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে পারেন তার দুটো প্রস্তাব এসেছে। এর একটি হচ্ছে ‘পাই অন্যটি হচ্ছে রাইপেন’। পাই-এর অথর্ হচ্ছে ফিলানথ্রপি-ইনভেস্টমেন্ট,পি-ফিলানথ্রপি,ই-এক্সচেঞ্জ,আর রাইপেন হচ্ছে; আর-রেমিটেন্স,আই-ইনভেস্টমেন্ট, পি-ফিলনাথ্রপি, ই-এক্সচেঞ্জ এবং এন-নেটওয়াকির্ং। বস্তুত রাইপেন বিশ্লেষণ করলে যেমনটি দঁাড়ায়, তা হলোÑ ‘আর’ এ রেমিটেন্স। প্রতি বছর ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, কিন্তু সেটি উপযুক্তভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না নানা কারণে। আমাদের? প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারের রিজাভর্, এর একটি বড় অংশ বলতে গেলে অলস পড়ে থাকে। প্রবাসীদের রেমিটেন্স ও রিজাের্ভর অথর্ কাজে লাগাতে একটি সেল করার কথা ভাবা হচ্ছে।
এসব অথর্ কাজে লাগিয়ে আমরা বড় বড় প্রজেক্ট করতে পারি, গভীর সমুদ্র বন্দরও হতে পারে। এতে করে কারো প্রতি মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না। এরপর ‘আই’ অথর্ ইনভেস্টমেন্ট। আমি দীঘির্দন দেশের বাইরে ছিলাম। দেশের হয়ে আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের সাথে অনেক ওকালতি করেছি, দেন-দরবার করতে হয়েছে অনেক। বিশেষত, ২০১৪ সালের নিবার্চনের পর যখন আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের কেউ কেউ নিবার্চন ব্যাপারে? জানতে চাইলেন, তখন অনেক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে হয়েছে। পরে? তারা দেশের সামগ্রিক অবস্থা অবশ্য বুঝতে পেরেছিলেন। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। আরেক লেখায় তা তুলে ধরব। যা বলছিলাম যে, আমাদের এখানে ইনভেস্টমেন্ট সেল করার পরামশর্ দেয়া হবে, সবকিছু সহজ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। এতে একদিকে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে, দেশ লাভবান হবে এখানে এনাজির্ কষ্ট কম, লেবার কষ্ট কম, মোটের ওপর লাভবান হবে দেশ। প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করা হবে এখানে। দেশের বাইরে থাকাকালীন সময়ে প্রবাসী অনেকের সঙ্গেই হৃদ্যতাপূণর্ সম্পকর্ গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর অনেক অনেক প্রবাসী স্বদেশের উন্নয়নের জন্য বহুমুখী বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসেন। তবে তার অধিকাংশই কাযর্কর হয় না। সুতরাং, তাদের? প্রস্তাবগুলো ফেসিলেট করার জন্য বিনিয়োগ সেল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরপর পি-তে ফিলানথ্রপি। বিদেশিরা দাতব্যমূলক কাজে সহায়তা করে থাকে, কিন্তু দেখা যায় যে, এখানেও অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকে। সেই জটিলতাগুলোও দূর? করতে হবে আমাদের। সাহায্য আসার পদে পদে বাধা পড়ে, এগুলো দূরীকরণে উদ্যোগ নিতে হবে। ই-তে দঁাড়ায়, একচেঞ্জ অব এক্সপেরিয়েন্স অ্যান্ড এক্সপারটাইজ। অথার্ৎ অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান বিনিময়, বিদেশে আমাদের? বহু অভিজ্ঞ প্রবাসী আছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যেমন ধরা যাকÑ ডাক্তার বা শিক্ষক। একজন ডাক্তার বা শিক্ষক যখন দেশে আসেন, আমরা যদি তাকে অনুরোধ করি যে, আপনি এক সপ্তাহ বিনামূল্যে সেবা দিন। তিনি কিন্তু সেটি দেবেন। কিন্তু দেখা যায় যে, তিনি কখন আসেন, সেই খবরই আমাদের? হাতে নেই। বহু বড় বড় বাঙালি আছেন যারা সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন বিদেশে। তারা সেবা ও ট্রেনিং দিতে পারেন আমাদের। তাদের জ্ঞান কাজে লাগানোর জন্য একটি সেল হতে পারে। এন-এর অথর্ হচ্ছে নেটওয়াকির্ং। এখন অনেক বাঙালিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বড় বড় রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। এই দেশে বিভিন্ন ধরনের ক্রাইসিস দেখা দেয়, তা সমাধানেও তারা কাজ করতে পারেন। যা আমাদের জন্য বড় ধরনের সহায়ক হতে পারে। যেমন, ধরা যাক, রোহিঙ্গা ইস্যু। আমাদের লোকরা আমাদের দেশের হয়ে লবিং করতে পারেন রোহিঙ্গা সমাধানে আন্তজাির্তক সহযোগিতা চাওয়ার জন্য। তারা সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আস্থা অজর্ন করেছেন, তারা একটি সুপারিশ করলে সেটি কাজে আসবে। তাছাড়া অনেক বাঙালী এখন বহুজাতিক নানা প্রতিষ্ঠানের শীষর্পদ বা দায়িত্বশীল পদে আসীন আছেন। তারা যদি দেশে বিনিয়োগ বা সেবামূলক কমর্সূচিতে বিনিয়োগের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ করেন, তা খুব কাজে দেবে। যা দিবে না দশটি বড় রোড শো করলে, বা মন্ত্রী-এমপিদের দশটি সফরেও। সুতরাং, আমাদের এগুলো সংগঠিত রূপে করতে হবে, দক্ষিণ কোরিয়া করছে, ভারত, হন্ডুরাসের মতো রাষ্ট্রও করছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?
আরেকটি উদাহরণ দিতে চাই। সিলেটের ভদ্রলোক জে-আইসি-সুইট-লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ফকরুল ইসলাম চৌধুরী, সেই সেকেন্ডারি লেভেল শেষ করেই পাড়ি জমিয়েছেন লন্ডনে। এর পর থেকে সেখানেই বসবাস। ভদ্র লোকের পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি বড় ব্যবসায়ী। সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, মরক্কো, ইউরোপসহ নানা দেশেই রয়েছে তার ব্যবসায়িক কাযর্ক্রম। বাংলাদেশেও তিনি ব্যবসা কাযর্ক্রম শুরু করেন কয়েক বছর হলো। প্রচলিত ধারণা থেকে বের হয়ে এসে এক্কেবারে গ্রামের মধ্যে গামের্ন্টস কারখানা স্থাপন করেছেন, যেখানে কাজ করছে ১২শ’রও বেশি শ্রমিক। বড় সুবিধা হলো, এসব শ্রমিকের জন্য আলাদা থাকার জায়গা দরকার হচ্ছে না। বাড়ি থেকে সকালে এসে কারখানায় কাজ করছে। দিন শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। বাড়তি খরচ ছাড়াই থেকে যাচ্ছে আয়ের পুরোটাই। এতে ওই অঞ্চলের নারীদের আয় বাড়ছে, হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন।
এই ফকরুল সাহেবের ইচ্ছে তিনি সিলেটে ব্যক্তি উদ্যোগে বিশেষ অথৈর্নতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবেন। যে সময় তিনি উদ্যোগ নিলেন, সেই সময় নিয়মানুযায়ী অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় ৫০ একর জমির দরকার হয়। সেখানে তঁার ছিল ৫৪ একর। কিন্তু এর পর শুরু হয় নানা ঝক্কি ঝামেলা। ঠুকে দেওয়া হয় তুচ্ছ কিছু অজুহাতে মামলাও। ভদ্রলোক থেমে যান না। পুরো উদ্যোমী হয়ে কাজ করতে থাকেন। নিয়মিত হাজিরা দেন আদালতে, দৌড়ঝঁাপ অব্যাহত থাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে। সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি এখনো, তবে কাজ চলছে। এখন অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় জমির পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ন্যূনতম ১০০ একর। তবে তিনি বলেছেন, তাকে অনুমতি দেয়া হলে বাকি জমিও তিনি কিনে ফেলবেন। এই অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে এখানে অন্তত আড়াই লাখ লোকের কমর্সংস্থান হবে। স্বদেশে ফেরার পর থেকে প্রতিদিন অনেক লোক চাকরির জন্য তদবির করতে বলেন। যারা এই ভদ্রলোকে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করেছেন তাদের কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনদের জন্যও যোগাযোগ করেছেন। তবে তারা যদি এই ভদ্রলোককে হয়রানি না করেন কাজটি করে দেন তখন একটা দুইটা চাকরি নয়, বহু লোকের চাকরির ব্যবস্থা হবেÑ এই সামান্য বিষয়টি অনেকে বুঝে আনতে পারে না। মূলত ব্যবসায়িক কাযর্ক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নানান অধিদপ্তরের অনুমতি, ট্রেড লাইসেন্স জোগাড়সহ এসব জটিলতা কমলে ফকরুল সাহেবদে? মতো আরো প্রবাসী এদেশে এসে বিনিয়োগ করতে পারতেন। তবে সুখের বিষয় এই যে, বিভিন্ন প্রতিক‚লতার মধ্যেও বহু প্রবাসী ইতিমধ্যে অনেক হোটেল, মোটেল, রিসোটর্ ও শিল্প কারখানা স্থাপন করেছেন।
তবে এটাও সত্যি যে, বিদেশ থেকে এসে প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগ করার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়ে গেছে এখনো। উৎপাদক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানির অনুমোদন, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির অনুমতি, মূসক-নিবন্ধন, বিদেশি বিনিয়োগের বিভিন্ন লাইসেন্স, শিল্পপ্লট ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ নেওয়ার প্রক্রিয়া, খাতওয়ারি বিভিন্ন পণ্যে লাইসেন্স, এনভারমেন্ট বিভাগের ছাড়পত্রÑ এসব কাগজপত্র করতে বহু ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। এই অফিস থেকে সেই অফিসে দৌড়াদৌড়ি, কার লবিং, ক্ষমতাবানদের থেকে রেফারেন্স, আবার কোথাও বা বখশিসের নামে অযাচিত অথর্ ব্যয়ের মতো ঝামেলাও রয়ে গেছে। যদিও এসব ঝামেলা মোকাবেলায় সরকারি যথেষ্ট উদ্যোগ রয়েছে। তবে কিছু অসৎ কমর্কতাের্দ? কারণে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তবে ইদানীং দুটো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, একটি হচ্ছে ‘ওয়ান-স্টপ-সাভির্স’ এবং অন্যটি হচ্ছে ‘প্রবাসী টাস্কফোসর্’ যা নিয়ন্ত্রিত হবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাযার্লয়ের মাধ্যমে।
যে টাস্কফোসর্ গঠিত হয়েছে সেটি ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমি নিজেও এই টাস্কফোসের্র সদস্য। আমি আশাবাদী শিগরিরই আরও ফলপ্রসূ কিছু হবে। আসলে আমাদের দুটি বড় সম্পদ রয়েছে, একটি হলো ‘পানি’ আর অন্যটি আমাদের জনসম্পদ। এই ‘রাইপেন’ কমর্সূচি সফল হলে দেশের উন্নয়ন কাজে বরাদ্দের জন্য বিদেশিদাতা দেশসমূহের মজির্র ওপর নিভর্র করতে হবে না বা তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে সত্যিকার অথের্ই সহযোগিতা করতে পারেন।
পৃথিবীর দেশে দেশে এটি হয়ে আসছে। যেহেতু বিদেশি সাহায্য দিন দিন কমে আসছে, সেজন্য নব নব উদ্যোগ বা সৃষ্টিশীল উৎস খুঁজতে হবে আমাদের। নিজেদের? উন্নয়নে নিজেদের? মানুষদের? কাজে লাগাতে পারলে অল্প খরচেই আমরা আমাদের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অজের্ন সফল হতে পারি। এ ক্ষেত্রে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, আমাদের দায়িত্ব হবে সে উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দেশে বিদেশে যারা যেখানেই আছি, দেশের সমৃদ্ধি জন্য নিজ থেকে দায়িত্ব পালন করা উচিত আমাদের। এটি করতে পারলে, নিধাির্রত সময়ের আগেই আমরা উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারব। এগিয়ে যাবে আমাদের অথর্নীতি, পূরণ হবে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাÑ এস-ডি-জি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূণর্রূপ পাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
ড. এ কে আবদুল মোমেন: জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন এবং চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ