শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করবে বাংলাদেশ

বাজার ব্যবস্থায় কেনাবেচার নিয়মের উলিস্নখিত খারাপ দিকটি ২০৪১ সাল আসার আগেই বিলুপ্ত করা অতীব জরুরি। আমাদের ঐকান্তিক ইচ্ছা হওয়া উচিত অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ, মানবিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ জাতি ও ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা সম্পন্ন সমাজ একসঙ্গে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করা।
এ কিউ এম আবু জাফর
  ২৩ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশের জনগণ আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে যে, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের "রূপসী বাংলা" অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করবে। এই আশাবাদ মনে পোষণ করলে জাতীয় উন্নতির লক্ষ্যে করণীয় কাজ সম্পাদনে মানসিক উৎসাহ পাওয়া যাবে। একই সময়ে মনে রাখতে হবে যে কেবল অর্থনৈতিক উন্নতির মাপকাঠি দিয়ে একটি দেশের উন্নত দেশ হওয়ার পরিমাপ করা হয় না। অর্থনৈতিক উন্নতির পথে অগ্রসরমান থাকার সময় সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা ইত্যাদি বিষয়ে সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিবর্তনের আবহ সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সমগ্র জনগোষ্ঠীর কথা-বার্তা, চাল-চলন, আচার-আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ইত্যাদি বিষয়ে উৎকর্ষতা আনয়নের পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় জীবনের মানবিক গুণাবলি দিয়ে পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে শিক্ষা, ব্যবসা, পুঁজি ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে।

পৃথিবীবাসীর হৃদয়ে এই প্রত্যয় জাগ্রত করতে হবে যে, বাংলাদেশে ও বাংলাদেশিদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করা ও ব্যবসা-বাণিজ্য করা নিরাপদ, বাংলাদেশে অবস্থান করলে- ভ্রমণ করলে তাদের জীবন ও অর্থ সর্বদা নিরাপদ থাকবে। দেশি-বিদেশি সবাই এ দেশে ভীতিমুক্তভাবে ব্যবসা করার ও বসবাস করার নিশ্চয়তা পাবে।

ইউরোপের সুইজারল্যান্ড এবং এশিয়ার জাপান এই দুটি দেশ আয়তন, জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদসহ অনেক বিষয়েই পরিমাণে ও ব্যাপ্তিতে বেশ ছোট। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা অর্জন ও কর্মঠ জাতি হওয়াতে তারা পৃথিবীতে মর্যাদা সম্পন্ন উন্নত দেশের আসন লাভ করেছে।

পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের মানদন্ড নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতিগুলোর গৌরবের ইতিহাস ও মানবিক গুণাবলিকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়া হয়। বিবেচ্য দেশের জনগোষ্ঠীর সততা, ভদ্রতা, ন্যায়পরায়ণতা, প্রতিশ্রম্নতি রক্ষায় একনিষ্ঠতা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কোনো বিষয়েই শঠতার আশ্রয় না নেয়া ইত্যাদি গুণাবলি জাতীয় চরিত্রের অলঙ্কার হিসেবে বিবেচিত হয়। আমাদেরও দেখাতে হবে যে উলিস্নখিত অলঙ্কারগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে বর্তমান আছে কি না। মনে রাখতে হবে যে, কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিদার হয়ে পৃথিবীবাসীর শ্রদ্ধা আদায় করা যাবে না।

২০৪১ সাল আসার যথেষ্ট আগ থেকেই কিছু বিষয়ের প্রতি অত্যন্ত জরুরিভাবে দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন-

(১) বর্তমানের শিশুরা আগামীদিনে দেশের কর্ণধার হবে। তাদের ন্যায়পরায়ণতা ও সততা শিক্ষা দিতে হবে, শিক্ষার পাঠ্যসূচির মাধ্যমে তাদের মন থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দিতে হবে, সবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখানোর শিক্ষা দিতে হবে, ভালোবাসার পরিচ্ছন্ন আদান-প্রদান করার পরিশীলিত আচরণ শিক্ষা দিতে হবে।

(২) সমাজ থেকে মিথ্যা বলা, মিথ্যার পরিচর্যা করা ও মিথ্যা প্রশিক্ষণের মহড়া উঠিয়ে দিতে হবে-

(ক) অন্তরে কপটতাবিহীন পরিশীলিত মানব সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে এখন থেকে শুরু করে জীবনধারণের সব বিষয় থেকে মিথ্যা চর্চার মহড়া দেয়াকে সম্পূণরূপে বিলুপ্ত করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ উলেস্নখ করা যায় যে, আমাদেও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কেনা-বেচার সময় পণ্যের যে দর কষাকষি করা হয় তা একটি অত্যন্ত বিশ্রী নিয়ম। পণ্যের দাম নিয়ে দর কষাকষির আড়ালে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই প্রকাশ্যেই মিথ্যা বলার ও চর্চা করার অভ্যাস রপ্ত করে ফেলে। সমাজ দেহে মিথ্যার প্রচলন অতি খারাপ রোগ। উৎপাদনকারী, বিক্রেতা ও সরকারি প্রতিনিধি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য উলেস্নখ করে দামের তালিকা ঠিক করে দিলে সমাজ মিথ্যা বলার মহড়া দেয়ার হাত থেকে রেহাই পাবে। এভাবে সব কাজে সত্য বলার অভ্যাস গড়ার কাজে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের পথে অগ্রসর হওয়ার সময় এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টিপাত করা খুবই প্রয়োজন।

বাজার ব্যবস্থায় কেনা-বেচার নিয়মের উলিস্নখিত খারাপ দিকটি ২০৪১ সাল আসার আগেই বিলুপ্ত করা অতীব জরুরি। আমাদের ঐকান্তিক ইচ্ছা হওয়া উচিত অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ, মানবিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ জাতি ও ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা সম্পন্ন সমাজ একসঙ্গে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করা।

এভাবেই ছোট ছোট অলঙ্কার পরিয়ে "রূপসীর" সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি করা যাবে। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত "রূপসী বাংলার" অলঙ্কার হবে সর্বাধিকভাবে মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন বাঙালি জাতি। এভাবেই রূপসীর রূপের চমক বৃদ্ধি পাবে। আমাদের উন্নত সমাজ ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচরণের পরিমার্জিত চর্চা ও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে সহনশীলতা প্রদর্শন- ইত্যাদি অলঙ্কারগুলো দেশ ও জাতির মর্যাদাকে বিশ্বে চমৎকৃত করবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য গন্তব্য ও কর্তব্য স্থির করে দিয়েছেন এবং জাতীয় মহান অর্জনের মহৎ উদ্দেশ্যে সফলকাম হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন, নিজে আত্মনিয়োগ করেছেন ও জাতিকে অনুপ্রাণিত করছেন। বাঙালিরা যেভাবে জাতির পিতার নির্দেশনায় ত্যাগ স্বীকার করে স্বাধীনতা এনেছিল তেমনিভাবে শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথ ধরে একটি উন্নত দেশের নাগরিকের মর্যাদা লাভ করবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

আমাদের "রূপসীর" সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ছোট ছোট আরো অনেক অলঙ্কার যোগ করতে হবে। দেশ থেকে ধর্মীয় বিদ্বেষ দূর করতে হবে, জাতিগত হিংসা সমাজে থাকতে পারবে না, অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে ধনী-গরীবের মধ্যে পাহাড় সমান পার্থক্য সৃষ্টি করা যাবে না, যুগোপযোগী বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা সবার জন্য সহজলভ্য থাকতে হবে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ যেন কখনো সমাজে জায়গা না পায় সেদিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখতে হবে।

উন্নত দেশগুলোর নিয়ম অনুসরণে শহরগুলোর সব রাস্তায় একমুখী চলাচলের নিয়ম করে রাস্তার জ্যাম দূর করতে হবে, শহরে অবস্থিত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন থাকতে হবে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান গুলোর স্বেচ্ছাচারিতা ও অতিমুনাফার লোভ থামিয়ে দিতে হবে।

জনগণের জন্য ভূমি সংক্রান্ত সব কাজ সহজ করে দিতে হবে, ভূমি অফিসগুলোকে সম্পূর্ণ আধুনিকায়ন করতে হবে ও দুর্নীতি দূর করতে হবে। সব সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের ব্যবহারে জনগণ যেন অনুভব করেন যে তারাই দেশের মালিক। আমরা উন্নত দেশ ও উন্নত সমাজ একসঙ্গে পেতে চাই। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশের "রূপ" বৃদ্ধি পাবে উন্নত সমাজ ব্যবস্থা দিয়ে। সুন্দর সমাজের ছোট ছোট অলঙ্কার দিয়ে আমাদের "রূপসী বাংলার" রূপ বৃদ্ধি করতে হবে।

এ কিউ এম আবু জাফর: কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42172 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1