শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
মহান স্বাধীনতা দিবস

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

নতুনধারা
  ২৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

২৬ মার্চ। এই দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই দিন থেকে বাংলাদেশ ছিল স্বাধীন। ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর-রাজাকারদের হারিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছিল বাংলাদেশ, ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার সূর্য।

আজ থেকে ৪৮ বছর আগের ঠিক এমনি এক ভোররাতে পাক বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ঘোরতর ওই অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল একাত্তরের আজকের এই দিনে। আর ২৬ মার্চে যার সূচনা, ১৬ ডিসেম্বরে তারই পরিপূর্ণতা।

১৯৭১-এর এদিন থেকে বাংলাদেশের জনগণকে পাকিস্তানের শোষণ হতে রক্ষা ও সর্ব সাধারণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি আনার লক্ষ্যে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে বাংলা মায়ের সাহসী সন্তানরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। অবশেষে নয় মাস পর ১৬ ডিসেম্বর আসে বিজয়, আমাদের সফলতা। কিন্তু স্বাধীনতার এতদিন পর আমরা আমাদের সব লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। এখনো দেশ হতে দরিদ্রতা পুরোপুরি দূর হয়নি। আমরা সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করতে পারিনি। মানসম্মত চিকিৎসাসেবা সবার জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। আমরা যারা বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক, যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছি; সবার উচিত যার যার অবস্থান থেকে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য কিছু করা। ১৬ কোটি জনগণের একটি দেশে সবার সততা, পরিশ্রম ও সহযোগিতাই পারে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে; আপামর জনগণের জীবনের উন্নয়ন করতে।

এটা ঠিক যে, স্বাধীনতার পর এত বছরে আমরা অনেক এগিয়েছি। নারীর ক্ষমতায়নে আমরা অনেক দেশ (যেমন ভারত বা নেপাল) থেকে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে। শিশু মারা যাওয়ার হার অনেক কমে গেছে। দেশ স্বাধীন না হলে এসব উন্নতি কখনও হতো না। আমরা পারতাম না আমাদের স্বাধীন মতের প্রকাশ করতে। আমাদের নিজেদের মতো করে ভাবতে বা কিছু করতে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ২৬ মার্চ হলেও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় '৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। তারপর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, '৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, '৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, '৬৯-এর গণঅভু্যত্থান, 'সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ' কর্তৃক ১১ দফা আন্দোলন, ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে, ৪৭-৭১ পর্যন্ত এক ধারাবাহিক রাজনীতির ফসল, যার নেতৃত্বে ছিলেন রাজনীতিকরা আর কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। রাজনীতির বিপরীতে সামরিকতান্ত্রিকতাকে দাঁড় করিয়ে পাকিস্তানি দর্শনের আলোকে বাংলাদেশকে সাজানোর অপপ্রয়াস চালানো হয়। সুতরাং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে আমাদের ইতিহাসের চেতনার আলোকে দেখতে হবে। তা হলেই আমরা এক উন্নত বাংলাদেশের পথে অগ্রসর হতে পারব।

অনেক ত্যাগের মধ্যদিয়ে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। মহান স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় দিন। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতার মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন। স্বাধীনতার এ মহান দিনে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করতে সব নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মহান স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া। সে লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। কৃষির উন্নতিতে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বেসরকারি খাতেও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক খাতের বিকাশ হয়েছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে জন্ম হতো না এই বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ বুকে ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে পা রেখেছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপ করতে পেরেছে। একাত্তরের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার প্রকাশ ঘটে এই জাতির সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসন ও আশীর্বাদ দেশের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার দৃঢ় সংকল্পে। স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে হবে। সংবিধান, গণতন্ত্র ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বানচাল করতে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠী এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। দেশবাসীকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। কত যে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ দিয়ে আমাদের জন্য রেখে গেছে সাধের স্বাধীনতা- তার কোনো হিসেবও করা সম্ভব না। তাদের ঋণ অপরিশোধ্য। তাদেরই রক্তধারার ফলে লক্ষ শহীদ যোদ্ধা ভাইয়ের-বোনের আত্মত্যাগের নাম- বাংলাদেশ। কেননা ২৬ মার্চ আমাদের জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন। পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। আসুন, সব ভেদাভেদ ভুলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

আবু সালেম হোসাইন

\হশিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42334 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1