শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপার সম্ভাবনার পারকি সৈকত

নতুনধারা
  ২৬ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

একঘেয়েমি জীবনে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে কিংবা শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছু সময়ের জন্য বেরিয়ে আসতে কার না ভালো লাগে। প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবারই মন চায়। জল-স্থলের গভীর মিতালি আর ওপরে এক পৃথিবী আকাশের সমন্বয়ে গঠিত সমুদ্রসৈকত সবসময় মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। এমনই একটি সমুদ্রসৈকত চট্টগ্রামের পারকি সৈকত। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ২ নম্বর বারশত ইউনিয়নে এই সৈকতের অবস্থান। কর্ণফুলির মোহনা থেকে দক্ষিণে শঙ্খ নদের মোহনা পর্যন্ত মোট প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই সৈকত। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে পারকি সৈকতকে পর্যটন এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পারকির বিস্তীর্ণ বালুচরে সৃজন করা প্রায় ১০ হাজারের বেশি ঝাউগাছের আদলে গড়ে উঠেছে পারকি সমুদ্রসৈকত। আর্কিটেকচারাল পদ্ধতিতে অনেক আগে লাগানো ঝাউগাছ বড় হয়ে পারকি সৈকত হিসেবে রূপ লাভ করে। মূলত সাগর চরে অপরূপ প্রকৃতিতে গড়ে উঠেছে এই সমুদ্রসৈকত। সারিবদ্ধ হাজার হাজার ঝাউগাছের সবুজ প্রকৃতিতে গড়ে ওঠা এই সৈকত পর্যটকদের কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাগরের তিলোত্তমা রূপ দেখতে প্রতিদিন সৈকতে ছুটে আসছে হাজার হাজার পর্যটক। কক্সবাজারের মতো সূর্যাস্তের আবির রঙের সমুদ্র এখান থেকেও দেখা যায়। বহির্নোঙরে জাহাজ আর চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ প্রবেশ ও বের হওয়ার দৃশ্য এ সৈকতের বাড়তি আকর্ষণ। বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হয় এ সৈকতে। ব্যক্তিগতভাবে ছাড়াও অনেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ সৈকতে ছুটে আসেন আনন্দ বিনোদনের জন্য। সৈকতের লাল কাঁকড়ার নাচন সৈকতের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে পারকি সৈকতে বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছে আকর্ষণীয় রিসোর্ট, খাবারের দোকান ও বিনোদন কেন্দ্র। তবে বিভিন্ন কারণে সৈকতে পর্যটনকেন্দ্রিক পরিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা গড়ে না ওঠায় এবং কর্তৃপক্ষের সুনজর না পড়ায় এখনো পারকি সৈকত অবহেলায় পড়ে আছে। পারকি সৈকতের পরিপূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে সৈকতকে ঘিরে সুপরিকল্পিত কিছু পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি অবকাঠামোগত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এখানে কোনো পর্যটক পুলিশ নেই। ফলে পর্যটকরা বিভিন্ন সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। ঝাউবাগানের দিকে যতই যাওয়া যায় ততই পর্যটকদের ওপর নিরাপত্তাহীনতা ভর করে! সৈকতজুড়ে মাঝেমধ্যে আবার মোটরসাইকেলের ছোটাছুটি দর্শনার্থীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করে। মোটরসাইকেলের হর্নের তীব্র শব্দে পর্যটকরা অসহায় বোধ করেন। সৈকতের পরিবেশ দূষণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সৈকতের বালিয়াড়ি ও ঝাউবনের ভেতর যত্রতত্র ডাবের খোসা, চিপসের প্যাকেট, খড়কুটো পড়ে থাকতে দেখা যায়। সৈকতের কোথাও কোথাও কোমল পানীয়ের বোতলের ছড়াছড়ি। সৈকতজুড়ে কোথাও আবার বিভিন্ন সময় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। কোনো প্রকার সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ না থাকায় পর্যটকরা বিভিন্নভাবে সৈকতের পরিবেশ দূষণ করছেন। সৈকতের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য সৈকতে আলাদাভাবে কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই বললেই চলে। কোথাও গড়ে উঠেছে যত্রতত্র ফুচকার দোকান। সৈকতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত, আবার যাত্রীছাউনি নেই বললেই চলে! আবার বিভিন্ন সময় জাহাজ আটকে পলি জমে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সৈকতে আরও ওয়াকওয়ে বা পায়ে চলার পথের বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যদিও সরকার আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পারকি সৈকতকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেও তা খুব ধীরগতিতে এগিয়ে চলেছে। সৈকতে আকর্ষণীয় রিসোর্ট, আবাসিক হোটেল, বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটক পুলিশ ফাঁড়ি, পচ্ছিন্নতাকর্মীসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার। পারকি সৈকত রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কেননা পারকি সৈকতে পর্যটকপ্রেমীদের কাছে দিন দিন প্রচার ও প্রসার পাচ্ছে। একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পারকি সৈকতকে গড়ে তোলা সম্ভব হলে শুধু দেশীয় পর্যটক নয় বিভিন্ন দেশের পর্যটকও এখানে আসবে। তা ছাড়া পরিপূর্ণ সৈকত হলে পারকি সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বিনোদনের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম ক্ষেত্র হবে বলে মনে করি। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে অবকাঠামোগতসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলা সম্ভব হলে পারকি সৈকত হয়ে উঠতে পারে পর্যটনশিল্পের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।

\হ

সাধন সরকার

সাবেক ছাত্র

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42583 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1