শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতির সেদিন ও এদিন

এখন আন্দোলন গড়ে তোলার মতো একক দল নেই- যারা আছেন তারা অনেকেই অসততার ফাঁদে পা দিয়ে আন্দোলনের বিরোধিতা করে আত্মরক্ষার পথ খুঁজছেন। যুবসমাজকে কলুষিত করছেন। সব কুকর্ম ঢাকার জন্য কেউ কেউ ধার্মিক সেজেছেন মূলত অসৎপথে অর্জিত টাকা বৈধ করার জন্য। সরকার ও প্রধান বিরোধী দলকেও ধর্মের নামে অনেক কিছু করার প্রবণতা দৃশ্যমান। যেমন- জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয়ী দলগুলোকে নিষিদ্ধ না করা, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলা, রাষ্ট্রধর্ম বজায় রাখা প্রভৃতি।
রণেশ মৈত্র
  ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

একজন প্রথম শ্রেণির রাজনীতিবিদ এক আলোচনা সভায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেছিলেন, অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে রাজনীতিক বলে আর পরিচয় দিতে ইচ্ছে করে না। বড্ড অবমাননাকর হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতিক শব্দটি। তিনি আরও বলেছিলেন, আজ রাজনীতিতে আসছে কারা? মূলত সরকারি দল বা বৃহৎ পৈতৃক বা বংশগত সূত্রে রাজনীতিতে আসছেন, এমপি, মন্ত্রীও হচ্ছেন। পেশা ব্যবসায় অথবা অজ্ঞাত কিন্তু অঢেল সম্পদের মালিক। গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যালান্স কোনো কিছুরই অভাব নেই। দেশের জনগণের কোনো কাজে এদের কোনো অবদান নেই- নেই মলমূত্র ছাড়া সামান্যতম ত্যাগ। নির্বাচন এলে টাকার বিনিময়ে এরাই দলীয় মনোনয়ন পান এবং একই সম্পদে সম্পদশালী হওয়ায় দিব্যি ভোটে জিতেও আসেন। মাস কয়েক তারা দলে দলে কর্মী গাড়িতে নিয়ে বিশাল বিশাল সভা সমাবেশ করে নানাবিধ দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে সহস্রকণ্ঠে 'জিন্দাবাদ, মুদ্রাবাদ' স্স্নোগান দিয়ে এমন আবহ তৈরি করেন এলাকাজুড়ে যে মনে হয় একেই ভোট দিলে দেশের ও মানুষের উন্নয়ন ঘটবে। এই ভাবনা থেকে সাধারণ মানুষ দিব্যি তাদের ভোট দিয়েও দেন। আবার সাঙ্গ-পাঙ্গরা হুমকিও দেন, অমুক মার্কায় ভোট না দিলে খবর আছে। আর যায় কোথায়। ভোটের বাক্স তিন ঘণ্টার মধ্যেই বোঝাই। প্রার্থীটি বিজয়ী এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর পরাজয়ই শুধু ঘটেনি জামানত ও বাজেয়াপ্ত।

এমন মহান ব্যক্তিদেরই আমরা নির্বিবাদে রাজনীতিক হিসেবে সুমহান মর্যাদা দিই, অভিহিত করি, ভোটে নির্বাচিত করি।

যাদের কদাপি (ছাত্রাবস্থায়) শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো সমস্যা-সমাধানের দাবিতে স্কুলে, কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে দেখিনি তারা পিতৃত্ব অর্জন ও শিক্ষাজীবন সমাপনান্তে ছাত্র নেতার পদে অধিষ্ঠিত হতে দিব্যি দেখছি। আর দেখছি তারা দিব্যি সরকারি বা বৃহৎ বিরোধী দলগুলোর দামি দামি পদে মনোনীত (কদাপি নির্বাচিত হয়ে নয়) হচ্ছেন, দেশের নানা অংশের রাজা বনে যাচ্ছেন- ভর্তিবাণিজ্য ও টেন্ডারবাণিজ্য প্রভৃতির মাধ্যমে লাখো কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন।

এর পরবর্তী ধাপে, অবশ্য বেশকিছু বছর পরে এমপি বিপুল টাকা ব্যয়ে। ২-৩ বার পরপর নির্বাচিত হলে আবার ২-৩ বার মন্ত্রিত্বের সম্ভাবনা।

এর সঙ্গে বিবেচনা করা যাক ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের কথা। কেমন ঘরের সন্তান ছিলেন তারা? কেমন পোশাকই বা দেখা যেত তাদের পরনে। কারও বা পরনে একটি লুঙ্গি মাত্র কারও বা পায়জামা কমদামি কাপড়েরও একটি শার্ট। জুতা বা স্যান্ডাল? না তা কেনার বা ব্যবহারের সাধ্যশক্তি তাদের কারও ছিল না। ওই অবস্থাতেই তারা মাতৃভাষা বাংলার অপরাপর মাতৃভাষার সমমর্যাদা অর্থাৎ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার মর্যাদার জন্য লড়াই করতে করতে জীবন দিলেন। জীবন কিন্তু আকস্মিক দেননি। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে সমগ্র ঢাকার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তারা ওই দাবিতে মিছিল নিয়ে নিকটবর্তী প্রাদেশিক সংসদ ভবনে গিয়ে স্পিকারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেবেন- এই সিদ্ধান্ত নিয়ে হাজারে হাজারে তারা এগোচ্ছিলেন।

এই আন্দোলন, এই মিছিল, এই মৃতু্যদানের খবর যখন সারা পূর্ববাংলায় ছড়িয়ে পড়ল তখন সরব হয়ে উঠল ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা। না, ব্যক্তিগতভাবে কিছু পাওয়ার আশায় না। তাদের একমাত্র দাবি ছিল 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই', 'খুনি নূরুল আমিনের বিচার চাই।' সর্বত্র একদিনের হরতাল ঢাকায় ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে। সঙ্গে মিছিল।

কোথাও কাউকে কিন্তু ভয় দেখাতে হয়নি। কোনো দোকানদার, কোনো পরিবহন মালিক চালককে পিস্তল দেখানো হয়নি। কিন্তু সে কী হরতাল। দোকন-পাট গাড়ি-ঘোড়া-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়- সব কিছু বন্ধ। বন্ধই না শুধু। কয়েকশত ছাত্রছাত্রীর বের করা ওই মিছিলে সব কিছু বন্ধ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা যোগ দিয়েছেন হাজারে, হাজারে। স্স্নোগানে স্স্নোগানে মুখরিত করেছেন-প্রকম্পিত করেছেন সারাটি দেশ।

সমাজ থেকে পাকিস্তানি জোশ তখনও যায়নি তথাকথিত আলেমরা সশস্ত্র গুন্ডা লাগিয়ে দিয়েছেন মিছিল ভাঙার জন্য পুলিশি প্রহরায়। কিন্তু ওই গুন্ডা বাহিনীর সাহস কোথায় কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী জনতাকে লাঠিপেটা করে? উল্টো তাড়া খেয়ে তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ তো ছিল তাদের নিরাপত্তা বিধানে-মারার হুকুম দিতে কেউ সাহস পায়নি-ঢাকার ছাত্রহত্যা এবং অতঃপর দেশব্যাপী পরিলক্ষিত তার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখে। মিছিলকারীরাও সেদিন আর ১৪৪ ধারার নিষেধজ্ঞা মানেনি। বলা চলে এক বিপস্নব ঘটেছিল সেদিন।

এটা আমি লিখছি পাবনা শহরের অভিজ্ঞতা থেকে। একুশ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকায় গুলির খবর বাংলাদেশের (তখনকার পূর্ব পাকিস্তান) রেডিও টেলিভিশন থেকে প্রচার করতে দেয়া হয়নি। সবই তখন ছিল সরকারি মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণাধীন।

কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যার বুলেটিনে কলকাতার আকাশবাণী থেকে ভাষা আন্দোলকারীদের অনেককে মিছিলে পুলিশ গুলি করে মারার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আমরা ছাত্র প্রতিনিধিরা যৌথ বৈঠকে পরদিন হরতালের সিদ্ধান্ত নিয়ে টিনের চোঙা দিয়ে তা প্রচার করেছিলাম। তাতেই অমন হরতাল।

এলো যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন। গঠিত হলো সর্বদলীয় ছাত্রকর্মী শিবির। হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত ওই যুক্তফ্রন্টের পক্ষে ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রলীগ নেতাদের সমবায়ে গঠিত হলো সর্বদলীয় ছাত্রকর্মী শিবির। হতদরিদ্র ঘরের সন্তানরাই এলেন যুক্তফ্রন্টকে জেতানোর লক্ষ্যে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্রকর্ম শিবিরে। তাদের গ্রামে গ্রামান্তরে ছুটে মুসলিমলীগকে হারানো এবং যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীদের বিজয়ী করার সঠিক কাহিনী সার্বিকভাবে আজও লিখিত হয়নি।

যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী মনোনীত হলেন কারা? তখনও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি প্রভৃতি গঠিত হয়েছে মাত্র। কাদের নিয়ে দলগুলো গঠিত হলো? তারা নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। কিন্তু তারা সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের তাবৎ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। কেউ কেউ ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন আবার কেউ কেউ নানাভাবে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সহায়তা করেছেন।

পেশাতে বেশির ভাগই শিক্ষক যারা ক্লাসে ভালো পড়ান কিন্তু ২-১টি ক্ষেত্র ছাড়া বাড়িতে কাউকে পড়াতেন না। কোচিং সেন্টার শব্দটি তখন পুরোপুরি অজানা ছিল। দরিদ্র পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি দিতে না পারলে অনেক সময় নিজেদের পকেট থেকে তার বেতন দিয়ে দিতেন যাতে ছেলেটি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে না পারে।

তেমনই মনোনয়ন পেতেন কিছু সমাজকর্মী-যারা অবসর পেলেই নানাবিধ সমাজকল্যাণমূলক কাজে বিনাবেতনে লিপ্ত হতেন। তেমনই কিছু সৎ ব্যবসায়ীও পেতেন যদিও সংখ্যায় কম। তবে তারা খদ্দের ঠকানো, দ্রব্যমূল্য বেশি নিয়ে বেশি মুনাফা করা-এগুলো ভাবতেই পারতেন না।

রাজনীতি কিন্তু এরাই করতেন। তৃণমূল পর্যায়ে এরাই দলের শাখা গড়ে তুলতেন এবং সংগঠনের বিস্তার ঘটাতেন। সবই নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে কারণ তারা ভাবতেন অত্যাচারী শাসকদের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে বা জাতিকে বাঁচাতে হলে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

এমন ধরনের মানুষকে বলা হতো আপনারা নির্বাচনে দাঁড়ান। প্রার্থীর তখন ততটা ভিড় ছিল না। তবে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে সামান্য কিছুটা ভিন্ন চিত্র ছিল। যেহেতু আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও নেজামে ইসলাম ছিল যুক্তফ্রন্টের প্রধান দল- সেহেতু ফ্রন্ট নেতৃত্বের কাছে বেশ ভালো সংখ্যক দরখাস্ত এসেছিল। কিন্তু মনোনয়নের মাপকাঠি ছিল আন্দোলনের সহযোগী কিনা, সৎ কিনা, মানুষের প্রতি অখন্ড ভালোবাসা আছে কিনা এবং কোনো দুর্নীতিমূলক কাজের সঙ্গে লিপ্ত আছেন বা কখনো ছিলেন কিনা, অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি কিনা প্রভৃতি। এই গুণাবলিতে পাস করলেই মনোনয়ন পাওয়া যেত মনোনয়নের দরখাস্তের ফি বড় বড় দলের ছিল ১০০ টাকা (যতটুকু মনে পড়ে)। নির্বাচন কমিশনকেও জামানত ফিও প্রায় একই রকম ছিল।

নির্বাচনী প্রচারণা : মাইক তখন পাওয়া যেত না মফস্বল এলাকায়- জেলা শহর থানা শহরেও না। টিনের চোঙা দিয়ে জনসভার প্রচার, গুটি কতক পোস্টার আর কিছুসংখ্যক লিফলেট। এই দিয়ে প্রচার করে ইউনিয়নগুলোতে জনসভা করার চেষ্টা করা হতো। প্রার্থী ও কর্মীরা অনেকেই হেঁটে জনসভায় যেতেন এবং রাতের বেলায় ফিরতেন। জেলা বোর্ডের রাস্তার ধারে হলে অবশ্য গাড়ির সময় অনুষ্ঠান সভা শুরুতে ও শেষ করতে হতো।

এমন প্রার্থীরাই বিপুল ভোটে জিততেন। তারা সংসদে জনগণের স্বার্থে কথা বলতেন। অসততার অভিযোগ বড় একটা উঠতো না কারও বিরুদ্ধে।

মহিলারা তো তখন বেশি একটা বাড়ি থেকে বের হতেন না। ভাষা আন্দোলনের সময় মেয়ে কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠানো হতো রশিদ ও কৌটা দিয়ে। বাড়ির মহিলারা অকাতরে টাকা-পয়সা তো দিয়েছেনই অনেকে আবার নিজের গলা বা হাত থেকে সোনার হার ও চুরি আংটি প্রভৃতি দিয়ে দিতেন। এ দেখে আন্দোলন করাটাই অবাক হতেন।

যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময়ও এমন কিছু ঘটনার কথা শুনেছিলাম।

এক কথায়, নারী পুরুষ পৃথকভাবে হলেও, যেন জোট বেঁধেছিলেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে

ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য মিলিতভাবেই কর্মী শিবির গঠন করে অসংখ্য টিমে বিভক্ত হয়ে প্রায় এক মাস গ্রামগঞ্জব্যাপী প্রচারকাজ, জনসভা, কর্মিসভা করেন। তারা শহর থেকে গেলেও নির্বাচনকালে অর্থাৎ নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত গ্রামেই একটি ঘরের বিছানা পেতে জামা-কাপড় গামছা দিয়ে বালিশ বানিয়ে রাতে ঘুমিয়েছেন- অনেকে পেঁয়াজ পান্তাই ছিল তাদের নিয়মিত খাদ্য। বেশির ভাগ প্রার্থীও তাদের সঙ্গে বসে একত্রে একই খাবার খেতেন।

এরাই ছিলেন সমাজের নেতা-রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী। বিজয়ী হওয়ার পর মাসিক ভাতা হিসেবে যে ২৫০/- আড়াই শত টাকা করে পেতেন এলাকার গরিব মানুষের মধ্যে তা তাদের বিপদ-আপদে বিলিয়ে দিতেন।

১৯৭০-এর নির্বাচনও ছিল প্রায় অনুরূপ। ইতোমধ্যে অবশ্য ছাত্র সংগঠন-রাজনৈতিক দলগুলো অনেক বৃহদাকার হয়েছে। স্কুল-কলেজের সংখ্যা, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও যথেষ্ট বেড়েছে। বেড়েছ শিক্ষকদের সংখ্যাও।

এই নির্বাচনে কোনো ফ্রন্ট হয়নি। নির্বাচনে মনোনয়ন যাদের দেয়া হয় তারাও প্রায় সমাজের একই স্তরের। আইনজীবী শিক্ষক-সাবেক ছাত্র নেতারা (যারা ৫২ তে-ভাগা আন্দোলন করেছেন) যারা সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কাজ করেছেন খেটেছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে- সে পুরোটাই হোক বা না-ই হোক। তারা ভোটে বিপুলভাবে জিতেছেন কারণ কি ১৯৫৪ কি ১৯৭০ এই উভয় নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ব্যাপক গণআন্দোলনের পটভূমিতে। আর্মি জেনারেলের প্রার্থীরাও ভোটে কুপোকাত।

তখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারও গঠন করতে হয়নি। প্রতিষ্ঠিত সরকার ও নির্বাচন কমিশন দিব্যি নিরপেক্ষভাবে বিতর্কিতভাবে নির্বাচনকার্য পরিচালনা করেছেন।

আজ প্রধানত গণআন্দোলনের ভয়ানক অভাব যদিও দরিদ্র মানুষের সমস্যার অন্ত নেই। ছাত্র যুব নেতারা কী কাজে দিনরাত ব্যস্ত থাকেন তার উলেস্নখ করেছি। নেতাদের দায়িত্ব দাঁড়িয়েছে ১৫ মিনিটের বক্তৃতায় অন্তত ১০ বার নেতা-নেত্রীর নাম উলেস্নখ করে বক্তৃতা করার-দলবাজির ভিত্তিতে রিলিফ প্রভৃতি বিতরণ যার ফলে খুব কম ক্ষেত্রেই উপযুক্ত ব্যক্তির সেগুলো পেয়ে থাকেন।

রাজনীতির এই হাল ব্যাপক মানুষকে হতাশ করেছে। এই অবস্থা দূর করতে না পারলে দেশের ও মানুষের দুরবস্থা কাটানোও দুরূহ হয়ে পড়বে।

এখন আন্দোলন গড়ে তোলার মতো একক দল নেই- যারা আছেন তারা অনেকেই অসততার ফাঁদে পা দিয়ে আন্দোলনের বিরোধিতা করে আত্মরক্ষার পথ খুঁজছেন। যুবসমাজকে কলুষিত করছেন। সব কুকর্ম ঢাকার জন্য কেউ কেউ ধার্মিক সেজেছেন মূলত অসৎপথে অর্জিত টাকা বৈধ করার জন্য। সরকার ও প্রধান বিরোধী দলকেও ধর্মের নামে অনেক কিছু করার প্রবণতা দৃশ্যমান। যেমন- জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয়ী দলগুলোকে নিষিদ্ধ না করা, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলা, রাষ্ট্রধর্ম বজায় রাখা প্রভৃতি।

অন্যদিকে জামায়াতের কোনো প্রতীক না থাকায় তাকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে জীবন্ত রাখা। ২০ দলীয় জোটে বহুসংখ্যক ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িক দলকে অন্তর্ভুক্ত করে রাখা প্রভৃতি।

কী বলব এরা রাজনীতিক? তা হলে অতীতে যাদের কথা বললাম তাদের কি বলে অভিহিত করব? তাই তরুণ সমাজের ওপর দায়িত্ব বর্তেছে আজ ৫২, ৬২, ৬৯. ৭০, ৯০-এর মতো আন্দোলন গড়ে তুলে দেশে প্রকৃত রাজনীতিকদের স্থায়ী করে দেয়া।

রণেশ মৈত্র: একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক

ৎধহবধযসধরঃৎধ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<45202 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1