শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চলন্ত বাসে যৌন হয়রানি

সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে
নতুনধারা
  ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। সমাজে নারীদের নিরাপত্তা বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। একদিকে যেমন নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বেড়ে গেছে, তেমনি বেড়ে গেছে সহিংসতা। নারীদের নিষ্ঠুরভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, এর থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কোমলমতি ছাত্রীরা। এমন কি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশুরাও। সামাজিক অবক্ষয় কোন পর্যায়ে গেছে ভাবতেও অবাক লাগে। প্রশ্ন জাগে, সমাজ ঠিক না হলে, সমাজের মানুষ ঠিক না হলে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় কী করে? স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে অবলীলায় হত্যা করছে। প্রেমের কারণে অর্থ সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বঞ্চনা ও অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। যৌন লালসা চরিতার্থ করতে না পেরে নারীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে।

ফেনীর সোনাগাজীতে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের মৃতু্যতে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। দেশের মানুষ এই অবমাননা ও সহিংসতার অবসান চায়, চায় হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। নুসরাত আক্রান্ত হওয়ার পরপরই নরসিংদীর রায়পুরার লোচনপুর গ্রামে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে ঝলসে গেল একই পরিবারের চার সদস্য। এর পরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের এক ছাত্রীকে চলন্ত বাসে যৌন হয়রানি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগরীতে ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে বাসের চালক ও তার সহকারীকে আসামি করা হয়েছে। এ দিকে ঘটনার পরই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তবে ঘটনাটি জানার পরই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগেও চলন্ত বাসে যৌন হয়রানি ও গণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি গণধর্ষণের পর নারীকে হত্যাও করা হয়েছে।

\হরাস্তার বখাটেরাই যে কেবল যৌন নির্যাতন করে তা নয়, এই অসুস্থ ও বিপজ্জনক প্রবণতা সংক্রামক ব্যাধির মতো এখন উচ্চশিক্ষিত পুরুষদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এমনকি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এর বাইরে নয়। এই প্রশ্ন করা অমূলক নয়, বখাটে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে এদের পার্থক্য তা হলে কোথায়? সমাজে কারো ওপরই আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। নারী নিরাপত্তার ব্যাপারে, তার সম্ভ্রম রক্ষার ক্ষেত্রে কাউকেই আর নির্ভর করা যাচ্ছে না। একের পর এক ঘটনা কি ঘটতেই থাকবে। এর কি কোনো প্রতিকার নেই।

মনের রাখতে হবে, স্বাধীনতা-উত্তর দেশের উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। অথচ দেশের একশ্রেণির মানুষ নারীকে দেখে আসছে ভোগ্যপণ্য হিসেবে। যার কারণে সমাজে নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না। নারীর প্রতি পুরুষের রয়েছে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের ঘাটতিও। নারীকেন্দ্রিক সামাজিক অবক্ষয়ের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে পুরুষের এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই। সমাজের শিক্ষিত অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত নির্বিশেষে সবাই যেন নারীদের অবমাননার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এই চিত্র না বদলালে নারীদের রক্ষা করা যাবে না। এ জন্য সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<45320 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1