বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাটকলশ্রমিকদের দাবি

যৌক্তিক সমাধানই প্রত্যাশিত
নতুনধারা
  ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে যদি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে তা সন্দেহাতীতভাবেই নেতিবাচক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দাবিতে পাটকল শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছেন। মজুরি কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়ন, বকেয়া পরিশোধ, বেতন-ভাতা পরিশোধ, গ্র্যাচুয়েটি, পিএফ ফান্ডের টাকা প্রদান, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, অবসর শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধসহ ৯ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাটকল শ্রমিকদের অবরোধের বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য সমাধানে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে।

উলেস্নখ্য, গত সোমবার দ্বিতীয় দফায় ৯৬ ঘণ্টার টানা ধর্মঘটে নেমেছিল খুলনা অঞ্চলের ৯টিসহ সারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকল শ্রমিকরা। আর জানা যায়, সৃষ্ট এই সংকট নিরসনে রাত সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। বৈঠক শেষে দাবি বাস্তবায়নে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পাটকল শ্রমিক নেতারা ধর্মঘটসহ সব ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতেরও সিদ্ধান্ত নেন। যা ইতিবাচক বলেই আমরা মনে করি। বৈঠক ধর্মঘট স্থগিতের কথা জানিয়ে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, 'আগামী ১৭ মে'র মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি ফিক্সেশন সম্পন্ন হবে এবং আগামী ১৮ মে খাতায় উঠবে অর্থাৎ শ্রমিকদের অনুকূলে মজুরি স্স্নিপ দেয়া হবে। আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ১০ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি আগের হারে এবং তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে বলেও জানান তিনি।

আমরাও চাই সৃষ্ট পরিস্থিতির গ্রহণযোগ্য সমাধান নিশ্চিত হোক। কেননা এটা বিবেচনায় নেয়া দরকার, রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করায় মহাসড়কে যানবাহন চলেনি এমন ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি এর পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এ ছাড়া অবরোধ চলাকালে স্টেশনে ট্রেন আটকা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। আমরা মনে করি, শ্রমিকদের দাবির ন্যায্যতা বিবেচনা করা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। আর এটাও বলা দরকার যে, জানা গেছে, পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে মিল থেকে শ্রমিকদের এক সপ্তাহের মজুরি পরিশোধের জন্য বিজেএমসির চেয়ারম্যান মিল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেবে। এ ছাড়া আগামী ৮ মে বিজেএমসিতে পাটকল শ্রমিক লীগ ও সিবিএ নেতাদের সঙ্গে অন্যান্য দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা বলতে চাই, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান নিশ্চিত হোক। কেননা এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার অর্থই হলো তা একটি আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে স্পষ্ট করা, যা কাম্য হতে পারে না। এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে, এটা হতে পারে না। সঙ্গত কারণে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগী হওয়া জরুরি।

আমরা মনে করি, শ্রমিকদের দাবির বিষয়গুলোকে যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে সারাবিশ্বে আমাদের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর লোকসানের বিষয়টিও এড়ানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, লোকসান হতে থাকলে পাটের ভবিষ্যৎ শঙ্কার মুখে পড়বে এমন আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা দরকার, বেসরকারি পাটকলগুলো ভালো করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে- এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। ফলে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখেও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, মজুরি কমিশন-২০১৫ বাস্তবায়ন, বকেয়া পরিশোধ, বেতন-ভাতা পরিশোধ, গ্র্যাচুয়েটি, পিএফ ফান্ডের টাকা প্রদান, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, অবসর শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধসহ ৯ দফা দাবির যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা যথাযথভাবে আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার, পাটের উর্বর ভূমি বাংলাদেশ। তবুও কেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানে থাকবে এটি যেমন আমলে নেয়ার পাশাপাশি পাটের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। আমরা মনে করি, পাটের উৎপাদন ও বাজার সৃষ্টিতে যেমন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে তেমনিভাবে শ্রমিকদের বিষয়ও এড়ানো যাবে না। ফলে শ্রমিক অসন্তোষ যেন না হয় সেই বিষয়েও সামগ্রিক উদ্যোগ বজায় রাখতে হবে। পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<45645 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1