নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে নতুন প্রজন্ম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হওয়ার সুযোগ পাবে এবং মৃত ব্যক্তি এই তালিকা থেকে বাদ পড়বে। এবার বয়সের ক্ষেত্রে তারতম্য দেখা যাচ্ছে। যাদের ১৬ পেরিয়েছে তাদেরও তথ্য নেয়া হবে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ভোটার তালিকা হালনাগাদে আগামী ২৩ এপ্রিল দেশজুড়ে ভোটারযোগ্য নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহে নামছে নির্বাচন কমিশন। এ যাত্রায় প্রায় ৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ২৩ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের এই কাজ চলবে। যাদের বয়স ১৮ হয়নি, কিন্তু ১৬ পেরিয়েছে (২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে জন্ম), তাদের তথ্য নেয়া হবে। ভোটার হওয়ার বয়স হলে তাদের তালিকাভুক্ত করে নেয়া হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের পর ২৫ মে থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নির্ধারিত কেন্দ্রে নাগরিকদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ ও নিবন্ধনের কাজ চলবে। উলেস্নখ্য, ৫২ হাজার ৫০০ জন তথ্য সংগ্রহকারী; ১০ হাজার ৫০০ জন সুপারভাইজার ও ৭৮০ জন সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার এই কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকবেন। হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটারের পাশাপাশি মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে ও ভোটার স্থানান্তরের আবেদন নেয়া হবে। বর্তমানে দেশের ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন ভোটারের মধ্যে ৫ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ১০৫ জন পুরুষ আর ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন নারী। অর্থাৎ, ভোটার তালিকায় পুরুষ ও নারীর অনুপাত- ৫০.৪২: ৪৯.৫৮। যারা এ কাজের দায়িত্বে রয়েছে, তাদের মনে রাখতে হবে, ভোটার হওয়ার যোগ্য এমন কেউ যেন তালিকা থেকে বাদ না পড়ে। অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি নাম ঠিকানার ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয় অসাবধানতার কারণে। দেখা গেল নিজের নাম পিতা-মাতার নামের ক্ষেত্রে রয়েছে ভুল। ভুল রয়েছে জন্ম তারিখেও। ফলে অনেককেই এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। নির্বাচন কমিশনকে এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তবে কেবল ভোটার তালিকা হালনাগাদ করলেই হবে না, ভোটাররা যাতে দেশের যে কোনো নির্বাচনে স্বচ্ছন্দে ভোটাধিকার প্রদান করতে পারে, এই নিশ্চয়তাও নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। কারণ বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক উঠেছে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে। এই বিতর্কের দায় কমিশন এড়াতে পারে না।
আমরা মনে করি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা যেমন কমিশনের দায়িত্ব, একইভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবিতর্কিত করার দায়িত্বও কমিশনের ওপরই বর্তায়। অর্থাৎ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব দায়দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, সরকারের নয়। কারণ কমিশন সরকারের অধীনে নয়, সম্পূর্ণ স্বাধীন এটা কমিশনকে উপলব্ধিতে আনতে হবে। সরকার নির্বাচন কমিশনে প্রভাব সৃষ্টি করছে এই অভিযোগ কমিশনকেই খন্ডন করতে হবে। ভারতের নির্বাচন কমিশন নিয়ে তো এমন অভিযোগ ওঠে না। দেশের নতুন প্রজন্ম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হোক, পাশাপাশি মৃত ব্যক্তি তালিকা থেকে বাদ পড়ুন এ প্রত্যাশাই করছি। নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ সফল হোক।