মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠক মত

নতুনধারা
  ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

মঙ্গলে দূরীভূত হোক অমঙ্গল

বছর ঘুরে আবার এসে গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির পহেলা বৈশাখ। প্রতিবছর এই দিনে বাঙালিরা মেতে ওঠে তাদের চিরাচরিত বাঙালিয়ানায়। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সবকিছু ভুলে মঙ্গলের জয়গাথায় উলস্নাস করি। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। সেখানে অংশ নেয় বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, শিশু। তারা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে অমঙ্গলের বিদায় কামনা করে। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে ফুটে ওঠে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের এক অনন্য দৃষ্টান্ত এই পহেলা বৈশাখ। যা ইতোমধ্যে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বেও সমানভাবে সমাদৃত। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গৌরব অর্জন করেছে আমাদের পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা। প্রতিবছর আমরা লক্ষ্য করি উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি নাগরিক এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয় এবং প্রতিবছরই এই সংখ্যা বাড়ছে। শোভাযাত্রায় বাঙালি সংস্কৃতিকে খুব সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা -কর্মচারী সবার দিন-রাত পরিশ্রমে শোভাযাত্রা সফলতার মুখ দেখে। তা ছাড়াও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতা এটাকে আরও সৌন্দর্যময় করে তোলে। প্রতিবছর এত বৃহৎ পরিসরে রাজধানী ঢাকায় এমন শোভাযাত্রা বের করা হলেও নিরাপত্তার কোনো অভাব থাকে না। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে পুরা ঢাকা। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে, স্বাধীনভাবে এই বিশেষ দিনটিকে উপভোগ করে। সকালবেলা উঠেই বাঙালি তার চিরাচরিত নিয়ম পান্তা-ইলিশ খেয়ে তাদের দিনের শুভসূচনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে গেলে বৈশাখের পূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায়। ক্যাম্পাসে সবাই বাঙালি পোশাকে দিনটিকে উপভোগ করে। মেয়েরা লাল-সাদা শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে। তা ছাড়া এদিন মুখরিত থাকে বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রগুলো। সবার একটাই চাওয়া বাংলাদেশ যেন থাকে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা হয়ে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে মানবতা, জাতীয়তাবোধ বাঙালি সংস্কৃতি সবকিছু মিলে আমরা সবাই এক হয়ে বাস করব। মঙ্গল শোভাযাত্রা তারই বার্তা দেয়। এখানে কোনো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের জায়গা নাই। বাংলাদেশের প্রশ্নে আমরা সবাই এক। এই নীতিই যুগে যুগে আমরা পালন করে আসছি আর ভবিষ্যতেও করব। এদিন আমরা সবাই সবকিছু ভুলে সবার তরে মিশে যাই। কিন্তু এই এত আনন্দের মধ্যেও আমাদের একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেন এদিন আমরা এমন কোনো কাজ না করি যাতে আমাদের হাজার বছরের এই সংস্কৃতিতে কোনো দাগ লেগে যায়। ইতোপূর্বে একটা পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। তারপর থেকে পহেলা বৈশাখ কিছু নিয়ম মেনে পালন করতে হয়। কিন্তু যদি সেদিন ওই ঘটনা না ঘটত তবে আমরা আরও স্বাধীনভাবে এই দিনটি উদযাপন করতে পারতাম। মনে রাখতে হবে সবাই আমরা মহান বাঙালি জাতির গৌরবময় আদর্শের অংশ। তাই আমরা যদি আমাদের নিজেদের আনন্দ উৎসবগুলো এভাবে বিতর্কিত করি তবে তা আমাদের জন্যই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। নিজের দেশের নিজের সংস্কৃতিকে নিজের মতো করে ধারণ করতে হবে। তাই পহেলা বৈশাখের দিন আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করব যাতে আমাদের দ্বারা বাঙালি সংস্কৃতিতে কোনো রকম আঁচ না আসে। প্রতিবছরের মতো এবারও যাতে মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারে এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো আমাদের নিজেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। এবং এই মহৎ উৎসবে আরও একটা দিক আমাদের মাথায় রাখতে হবে আমরা যেন ইলিশের অপচয় না করি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী গত বছর বলেছিলেন যথাসম্ভব আমরা যেন ইলিশকে এড়িয়ে চলি এদিন। কারণ অনেক অসৎ ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার জন্য জাটকা ইলিশ এবং মা ইলিশও সংগ্রহ করে। এতে আমাদের আরও একটা ঐতিহ্য বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই আমরা কখনোই চাইবো না যে একটা ঐতিহ্য পালন করতে গিয়ে অন্য আরেকটা ঐতিহ্য বিপন্নের মুখে পড়ুক। আমরা যথাসম্ভব ইলিশ মাছ বাদে এই পহেলা বৈশাখ পালন করব। আর যদি একান্তই ইলিশ মাছ রাখতে হয় তবে তা যেন কোনোভাবেই জাটকা ইলিশ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা ছাড়া এই ইলিশ মাছ উৎসবে রাখার ফলে অনেক অর্থও ব্যয় হয়। আর এবারের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা করা উচিত যে আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সর্বোচ্চ ত্যাগ করব আর সমাজ থেকে সব অমঙ্গল দূর করার জন্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করব। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অমঙ্গলের প্রতি প্রতিরোধই হোক আমাদের এবারের পহেলা বৈশাখের প্রত্যয়।

মো. তাসনিম হাসান আবির

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বেপরোয়া চালকদের লাগাম টেনে ধরুন

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের নিত্য-নৈমিত্তিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দুর্ঘটনার সংবাদ, যে কোনো গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ দেখা যায়। এই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশ অসংখ্য তাজা প্রাণ অকালেই ঝরে যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো দ্রম্নতগতি ও প্রতিযোগিতামূলক যান চলাচল। দ্রম্নতগতি ও প্রতিযোগিতামূলক যান চালকরাই বেপরোয়া চালক। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও দ্রম্নতগতিতে যান চলাচলের কারণে অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে সড়ক দুর্ঘটনা। এসব বেপরোয়া চালকদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কমানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সড়কগুলোতে গতি সংবলিত বড় বড় সাইনবোর্ড বসাতে হবে। স্পিড মাপার মেশিন বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে। অতিরিক্ত স্পিডে গাড়িচালকদের তাৎক্ষণিক জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন করতে হবে। আপামর জনসাধারণের জন্য নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

মো. আজিনুর রহমান লিমন

ডিমলা, নীলফামারী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<45761 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1