শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নদীর পুনরুজ্জীবন ও নদীকেন্দ্রিক নতুন স্বপ্ন

ইতিহাস মিলিয়ে দেখতে গেলেই বোঝা যায় এই সব নদ-নদী কীভাবে অস্তিত্বহীন করা হয়েছে। সারা দেশেই নদ-নদীর ওপর এমন অত্যাচার চালিয়েছে প্রভাবশালী দখলবাজরা। দেশজুড়ে নদী দখল রোধে যে অভিযান চলছে তার সাফল্য সময়েরই দাবি। আর তার সঙ্গে দরকার নদীতীর ঘেঁষে নতুন কর্মপরিকল্পনা। তাহলেই অনায়াসে নতুন স্বপ্নের বুননে গড়ে উঠবে মুগ্ধ হওয়ার মতো এক অনন্য বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ
  ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

আমাদের রাজধানী ঢাকার রয়েছে অহংকার করার মতো ঐতিহ্য। স্থাপনা ও পুরাকীর্তি মিলিয়ে যা রয়েছে তার ঐতিহাসিক ভিত্তিও অনেক। এই নান্দনিকতা দৃষ্টির সম্মুখে নিয়ে আসার জন্য দরকার শুধু উদ্যোগ। বিশ্বের সুন্দর অনেক শহরের অবস্থানই নদীতীরে। আন্তর্জাতিক শৈলীর রাজধানী ফ্রান্সের প্যারিস কিংবা ১১৭টি। ক্ষুদে দ্বীপের সংযুক্ত শহর ইতালির ভেনিসে আমরা যেমন মুগ্ধ হই, বুড়িগঙ্গার তীরের ঢাকাও হতে পারে তেমন মুগ্ধ হওয়ার মতো শহর। তবে এজন্য যে উদ্যোগ দরকার, তার প্রথম ধাপ সম্ভবত শুরু হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গার দুই তীরেই চলছে দখল উচ্ছেদ অভিযান। গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে অনেক বড় বড় স্থাপনাও। ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ তীরের হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাকা ভবন চারতলা, দোতলা, টিনশেড, স'মিল, ডকইয়ার্ড, রড-সিমেন্টের গোডাউন কিছুই রেহাই পায়নি। ঢাকার নদীবন্দরের আওতাধীন এলাকায় ঢাকা সদরঘাট থেকে গাবতলী নদীর দুই তীরে যত অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত হয়েছে, সব জঞ্জাল পরিষ্কার। আর দখল নয়, এবার স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ। নদীর পাড়ে হবে ওয়াকওয়ে। লাগানো হবে পরিবেশ সহায়ক সৌন্দর্যবর্ধনকারী বৃক্ষ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে নজর দিলে আমরা যেটা দেখতে পাই, তারা প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক রেখে তবে। নগরায়ণ ঘটিয়েছে। নদীগুলো শুধু রক্ষাই করেনি, তার শোভাবর্ধন করেছে, আরও বেশি চলাচল উপযোগী করেছে। ঝকঝকে-তকতকে-স্বচ্ছ পানির প্রবাহ। এতদিন আমরা মোটেই তা করিনি! রাজধানীর প্রতিটি সু্যয়ারেজ লাইন, কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের লাইন শেষ হয়েছে নদীতে গিয়ে। বিষাক্ত মিশমিশে কালো পানি আমাদের এই নদীগুলোয় মাছ কেন, কোনো প্রকার জলজ প্রাণীই জীবন রক্ষা করতে পারছে না। এমনকি এই নদীর ওপর নির্ভর করেও যারা বাঁচত, তারাও অনন্যোপায় হয়ে অন্য পথ ধরেছে। অনেক তো দেখা হলো আর কত বারবার উচ্ছেদ আর দখলের খেলা আর তো চলতে দেয়া যায় না। এবার এদিকটায় মনোযোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আবার এসব নদীর পুনরুজ্জীবন চান। নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগব্যবস্থা চালুর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। যতই দুরূহ হোক না কেন, যদি তা-ই করা যায় এটা হবে বাংলাদেশের যোগাযোগ ইতিহাস বদলে দেয়ার মতো একটা কাজ। আবার রাজধানীর নান্দনিকতা ফিরিয়ে দিয়ে নতুন করে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণেরও বিষয় হয়ে উঠবে গড়ে ওঠা নতুন ঢাকা। আর আমাদের চাওয়া তেমনই এক স্বপ্নের শহর। যে স্বপ্নের পূরণ করতে চলেছেন আমাদের উন্নয়নের নেত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরীসহ রাজধানীর চারপাশের একসময়ের ঢেউ তুলে কুলু কুলু রবে বয়ে যাওয়া নদীগুলো বাঁচিয়ে তোলা বিশেষভাবেই অপরিহার্য। হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। হাইকোর্ট এটাও জানিয়ে দিয়েছে যে, নদী দখল-উচ্ছেদ নিয়ে কানামাছি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত, গত ফেরুয়ারিতে তুরাগ নদ রক্ষায় করা রিটের ওপর রায় ঘোষণার জন্য ধার্য দিনে এমন মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। ঘোষিত রায়ে আদালত তুরাগ নদকে লিগ্যাল বা জুরিসটিক পারসন বা জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও তাই চান। তিনি এসব কানামাছি খেলা আর দেখতে চান না। নতুন সরকার গঠনের পর আমরা প্রধানমন্ত্রীর সে সদিচ্ছাকেই দেখতে পেয়েছি। ইতোমধ্যে তিনি সে মতে নির্দেশও দিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না- নদী ভরাট, দখল, দূষণ করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছি আমরাই! নদীগুলোর মৃতু্য হচ্ছে বলে চিৎকার করছি, আবার দখল-দূষণেও মেতে থাকছি। নিজের কটা দিনের আয়েশ খুঁজছি, প্রজন্মের পর। প্রজন্ম কিংবা সবার কথা ভাবছি না। অথচ সবাই যার যার অবস্থানে একটু আন্তরিক হলেই নদীগুলোকে আমরা রক্ষা করতে পারি, এর প্রবহমানতা বৃদ্ধি করে প্রকৃতি ও মানুষের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারি। অনেকেই বলছেন, এটাতে সরকার ও ব্যক্তি উভয়কেই উদ্যোগী হতে হবে। এখন তো সরকার উদ্যোগী হয়েছে, আমাদের উচিত এই উদ্যোগটিকে সাফল্যমন্ডিত করতে সহযোগিতা করা। একসময় এ দেশ থেকে সুদূর কলকাতা পর্যন্ত চমৎকার নৌযোগাযোগব্যবস্থা ছিল। নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগব্যবস্থার পুনর্জাগরণ করা অবশ্যই সম্ভব। আর সেটা হলে বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থা আনবে দেশের বৈপস্নবিক পরিবর্তন। অন্যদিকে নতুনরূপে দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। এক সময় আমাদের ৩৮ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল, এখন সেটা ১২ হাজার কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নৌপথ উদ্ধারে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যাতায়াতব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বহির্প্রকাশ আমরা দেখছি। আমাদের নৌপথ যেভাবে দখল হয়ে যাচ্ছিল, নদীর পাড় যেভাবে দখল হয়ে যাচ্ছিল বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা একটি আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে নদীদূষণ ও নাব্যতা বৃদ্ধিসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৩৮তম সভায় জানানো হয়। ঢাকার পাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও বালু এই তিনটি নদীর দুই তীরে ২২০ কিলোমিটার হাঁটার পথ তৈরি করবে সরকার। এ জন্য ব্যয় করা হচ্ছে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশেই এ প্রকল্পটি। ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ, উত্তরখান, তুরাগ, মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচর, কোতোয়ালী ও মিরপুর থানা, গাজীপুর জেলা। সদর এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর, বন্দর ও সোনারগাঁও উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে বিআইডাবিস্নউটিএ। আমাদের রাজধানী বুড়িগঙ্গা, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী ঘেরা। এসব নদীপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে রয়েছে ৩টি নদীবন্দরও। যা এখন প্রাণহীন। এসব বন্দরে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। নদী গবেষকের মতে, ১৭৮২ সালে জেমস রেনেলের মানচিত্রে বুড়িগঙ্গার যে গতিপথ দেখানো হয়েছিল তাতে নওয়াবগঞ্জ চরের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে নৌকা লালবাগ ঘাটে ভিড়ত। ১৮৬৪ সালেও বুড়িগঙ্গা বয়ে যেত লালবাগের কেলস্না, চৌধুরী বাজার, রায়ের বাজার এবং পিলখানার ঘাটের ধার ঘেঁষে। তাই বুড়িগঙ্গা ও এর আদি চ্যানেল বাঁচাতে সামগ্রিক পরিকল্পনা দরকার। দখল-দূষণে বিপর্যস্ত ঢাকার চারপাশের সব নদ-নদীর। পুনর্জীবন ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি দেয়ায় আমার মতো অনেকেই আশাবাদী। যে নেত্রীর হাতে দেশ আজ উন্নয়নধারায়, তার হাতে অবশ্যই বিপর্যস্ত সব নদ-নদীর পুনরুজ্জীবন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর নদী, নদীবন্দর, নদীপথের পুনরুজ্জীবনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনাও দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই এই নদীগুলো দূষণমুক্ত করতেও প্রধানমন্ত্রী। নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি নদীগুলো দখলমুক্ত করতে সর্বোচ্চ তাগিদ দিয়েছেন। এজন্য তিনি ইতোমধ্যেই টাস্কফোর্স গঠন করে দিয়েছেন। ঢাকার মধ্যকার খাল, নালা, ডোবা আগের অবস্থায় ফিরে আনার জন্যই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ৫টি নদীর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেবে এই টাস্কফোর্স। বাংলাদেশে সাত শতাধিক নদী রয়েছে। আমরা সব নদী রক্ষা করতে চাই। ইতোমধ্যে নদী রক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংসদে এ কমিশন গঠন নিয়ে বিল পাস করা হয়েছে। নদী রক্ষা কমিশন ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। নদী নিয়ে মাস্টার পস্ন্যান করা হচ্ছে। আমরা এসব তৎপরতা দেখে নদী নিয়ে আশাবাদী হতে চাই। একসময় ঢাকা শহরের আশপাশে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ ছাড়াও অনেক নদীর অস্তিত্ব ছিল। বর্তমানের ধোলাই খাল ছিল ধোলাই নদী। এই খালের ওপরে বক্স কালভার্ট দিয়ে রাস্তা করা হয়েছে। আরেকটি নরাই নদী, যার একটি অংশ হাতিরঝিল, আরেকটি ধানমন্ডি লেক। নরাই নদীর ওপর কালভার্ট দিয়ে করা হয়েছে। পান্থপথের রাস্তা। রাজধানীর চারপাশের নদী আর শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় ৪৬টি খাল ঠিক থাকলে ঢাকা হতে পারত অপরূপ সৌন্দর্যের নগরী। বিশ্বের সেরা শহরগুলোর মধ্যে শোনা যেত বাংলাদেশের রাজধানীর নাম। ঢাকার ৪৬টি খালের মধ্যে ২৬টির দায়িত্ব ওয়াসাকে দেয়া হয়েছে। বাকিগুলারে ব্যাপারে কোনো কিছু জানে না তারা। এর মধ্যে বড় খালগুলো ছোট হতে হতে ড্রেন আকার ধারণ করে কোনোমতে টিকে। আছে। সব খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহও নেই। নগর পরিকল্পনাকারীদের মতে, অতীতে ঢাকার ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ও তাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে তোলা হয়েছিল। চারদিকে নদী এবং অভ্যন্তরে ঢাকাকে ঘিরে রেখেছিল অসংখ্য পুকুর, জলাশয়, নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী খাল ও বিল। খালগুলো ঢাকার বুকে পাতার শিরা, উপশিরার মতো ছড়িয়ে থাকত এবং চারপাশের নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকার পয়োনিষ্কাশন ও যানবাহন চলার একটি চমৎকার ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছিল। একসময় এসব কারণে ঢাকাকে অনেকে ইতালির ভেনিস শহরের সঙ্গে তুলনা করত। আর এখন বিশ্বের অপরিছন্ন ও বসবাসের অযোগ্য নগরীর নামের তালিকায় বারবার আসছে একসময়ের তিলোত্তমা নগরী ঢাকার নাম। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, খালগুলো দখল হওয়ার ফলে অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানীর অনেক এলাকা তলিয়ে যায়। যে কোনো মাত্রার বৃষ্টি হলেই রাজধানীর অনেক রাস্তায় পানি জমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। প্রধান সড়ক থেকে নগরীর অলিগলি পর্যন্ত বন্যার মতো পানি জমে থাকে। ঢাকার অধিকাংশ এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতার ফলে রাজধানী হয়ে ওঠে তীব্র যানজটের নগরী। রাজধানীর এই দুরবস্থা দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রী রাজধানী ঢাকায় নতুন খাল খনন এবং পুরনো খালের সংস্কার ও জলাধার সংরক্ষণ এবং রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বক্স কালভার্টগুলো উন্মুক্ত করে এর ওপর দিয়ে এলিভেটেড ওয়ে নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর দূষণ দূরীকরণে কী করা যায় তাও ভেবেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নদী ড্রেজিং ছাড়া আমাদের এই দেশকে রক্ষার আর কোনো উপায় নেই। ঢাকার চারপাশেই চলেছে দখলদারিত্ব। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ দখলের কবলে পড়েছে তুরাগ। দখলদাররা কোথাও কোথাও নদীর সীমানা পিলারও উপড়ে ফেলেছেন। পরিবেশ আন্দোলনকারীরা বলছেন, তুরাগে ১৫২টি সীমানা পিলারের মধ্যে ৯০টিই অবৈধ দখলের কারণে নিশ্চিহ্ন। ১৯১২ সালে প্রকাশিত যতীন্দ্রমোহন রায়ের 'ঢাকার ইতিহাস' বইয়ে তুরাগ সম্পর্কে লেখা রয়েছে, 'নদীটি ময়মনসিংহ জেলা হইতে আসিয়া দরিয়াপুরের নিকটে ঢাকা জেলায় প্রবেশ লাভ করিয়াছে। তথা হইতে পুবাভিমুখে কিয়দ্র আসিয়া রাজাবাড়ী, বায়োলিয়া প্রভৃতি স্থানের পার্শ্বদেশ ভেদ করিয়া পূর্ববাহিনী হইয়াছে। শেনাতুলস্নার সন্নিকটে মোড় ঘুরিয়া প্রায় সরলভাবে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হইয়াছে; এবং মির্জাপুর, কাশিমপুর, ধীতপুর, বিরলিয়া, উয়ালিয়া, বনগাঁও প্রভৃতি স্থান তীরে রাখিয়া মীরপুরের দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার সহিত মিলিত হইয়াছে।' ওই বইয়ে টঙ্গী নদীকে তুরাগের শাখা এবং মধুপুরের জঙ্গল থেকে বহির্গত শালদহ, লবণদহ ও গোয়ালিয়র নদী তুরাগে মিলিত হয়েছে বলে উলেস্নখ রয়েছে। ওই বইয়ে উলিস্নখিত শালদহ, লবণদহ ও গোয়ালিয়র নদী তিনটির মধ্যে শালদহ ও লবণদহ গাজীপুরের শ্রীপুর অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হতো।

ইতিহাস মিলিয়ে দেখতে গেলেই বোঝা যায় এই সব নদ-নদী কীভাবে অস্তিত্বহীন করা হয়েছে। সারা দেশেই নদ-নদীর ওপর এমন অত্যাচার চালিয়েছে প্রভাবশালী দখলবাজরা। দেশজুড়ে নদীদখল রোধে যে অভিযান চলছে তার সাফল্য সময়েরই দাবি। আর তার সঙ্গে দরকার নদীতীর ঘেঁষে নতুন কর্মপরিকল্পনা। তাহলেই অনায়াসে নতুন স্বপ্নের বুননে গড়ে উঠবে মুগ্ধ হওয়ার মতো এক অনন্য বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ : শিক্ষাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46369 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1