বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক খাতের মজুরি কমেছে

এ প্রবণতা রোধ হওয়া জরুরি
নতুনধারা
  ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

দেশের তৈরি পোশাক খাতে মজুরি বৃদ্ধিতে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা বাংলাদেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)। শ্রমিকদের নানান দাবি ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক খাতের মজুরি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। বাস্তবতা হলো এতে মজুরি বাড়েনি, বিপরীতে আরও ২৬ শতাংশ কমেছে বলে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। তথ্য মতে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বর্ধিত হারে বেতন পাওয়ার কথা ছিল পোশাক শ্রমিকদের। কিন্তু মালিকপক্ষ বর্ধিত হারে বেতন দেবে না এমন একটি গুজব ছড়িয়ে পড়লে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে আবারও আন্দোলনে নামেন। অভিযোগও আছে যে, একটি উচ্ছৃঙ্খলগোষ্ঠী সবসময় পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ খোঁজে। আর এখন যেহেতু মজুরি বাড়ানোর ক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকির বিষয়টি শনাক্ত হয়েছে তখন এ খাতের আবারও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েতে পারে এমন আশঙ্কাও অমূলক হতে পারে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বসহকারেই বিবেচনা করা সঙ্গত।

টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, ২০১৩ সালের ঘোষিত মজুরি প্রথম গ্রেডে ছিল ৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ঘোষিত প্রথম গ্রেডে নতুন মজুরি করা হয়েছে ১০ হাজার ৯৩৮ টাকা। কিন্তু ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টসহ ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ সালে মজুরি হওয়ার কথা ছিল ১৩ হাজার ৩৪৩ টাকা। সেই হিসেবে মজুরি ২ হাজার ৪০৫ টাকা বা ২৮ শতাংশ কমেছে। এভাবে নতুন কাঠামোতে মজুরি সার্বিকভাবে ২৬ শতাংশ কমেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতি পোশাক খাতের জন্য অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। টিআইবি অভিযোগ করেছে, এখনো কারখানার কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা টেকসই নয়। জানা যায়, গত ছয় বছরে সাড়ে ১২শ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চাকরিচু্যত হয়েছেন প্রায় চার লাখ শ্রমিক। এদের মধ্যে মাত্র ৬৬০০ জন তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। ফলে সার্বিকভাবে পোশাক খাতের অবস্থা নাজুক বলেই প্রথীয়মান হয়। অথচ, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় একটি খাত এই পোশাকশিল্প। প্রশ্ন হতে পারে, বিপুল মানুষের কর্মসংস্থানের এই ক্ষেত্রটি নিয়ে কেন এত টালবাহানা? এ থেকে পরিত্রাণের কি কোনো উপায় নেই?

বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের রাজস্ব খাতকে সমৃদ্ধ করতে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। সার্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটাও যখন জানা যাচ্ছে যে, বিশ্ব বাজারে ক্রমেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। প্রায় প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ক্রেতা আসছে এবং এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগও আগের তুলনায় বেড়ে। সরকারও পোশাক খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শ্রমিকদের ৩৮১ শতাংশ মজুরি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মজুরি নিয়ে কেন শুভঙ্করের ফাঁকি পরিলক্ষিত হবে? এ পরিস্থিতির অবসানই প্রত্যাশিত। যেহেতু পোশাকশিল্প বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। এ শিল্প শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধিশালী করে তুলছে তা নয়, সে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব নিরসনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে অসচ্ছল ও দারিদ্র্যপীড়িত নারীদের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছে। সুতরাং এ খাত ঘিরে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র যাতে না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা তথা সরকারের সজাগ থাকা কর্তব্য হতে পারে।

আমরা জানি জাতীয় স্বার্থে এই শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার। আর এ খাতকে চলমান রাখতে হলে এখাতের দিকে নজরদারিরও বিকল্প থাকা উচিত নয়। আমরা জানি, শ্রমিক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছিল, মজুরির অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখে সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেয়ার কথা এই কমিটির। বিষয়টি ইতিবাচক হলেও এখন যেহেতু মজুরি কমেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে, সেহেতু আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমিকরা শিল্পের প্রাণ, সুতরাং তারা কেন ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা মনে করি, সরকার ও মালিকপক্ষকে বিষয়টি আমলে নিতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নততার সঙ্গে কার্যকর উদ্যোগ নিক- এটাই আমাদের চাওয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46669 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1