শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

বাঘের জীবন-মরণ এখন বাঘের হাতে নেই!

সাধন সরকার সাবেক ছাত্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
  ২৩ মে ২০১৯, ০০:০০

অনেক আগে তো বটেই এখনও মানুষ বাঘের নাম শুনলে ভয় পায়। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডই এখন বাঘের জন্য উল্টো ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এককথায়, বাঘের জীবন-মরণ এখন বাঘের হাতে নেই! সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ। এটি জাতিসংঘের 'ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং 'রামসার' (জলাভূমিবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান) ঘোষিত বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি এলাকা। যে কয়টি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশ্বে বাংলাদেশ অধিক পরিচিত সুন্দরবন ও সুন্দরবনের বাঘ তার মধ্যে অন্যতম। এটি শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০৭০ সালের মধ্যে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মানব কর্মকান্ডের কারণে পৃথিবীর প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রায় ৮০ লাখ প্রজাতির মধ্যে ১০ লাখ বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। একথা সত্য যে, সুন্দরবনের বাঘ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অভিযোজনের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ বনে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে। সারা বিশ্বে বাঘের ছয়টি প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় বন্যপ্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। সুন্দরবনের আকার, আকৃতি ও প্রতিবেশ যে দশকের পর দশক একই থাকবে তা মনে করার কোনো কারণ নেই! কেননা, গত তিন-চার দশক আগের সুন্দরবন এখনকার সুন্দরবন থেকে একটু হলেও বদলেছে, সামগ্রিক বাস্তবতায় আগামীতেও সুন্দরবনের প্রকৃতি-প্রতিবেশে বদল আসতে পারে! সুন্দরবন প্রতিকূল পরিবেশে নিজের মতো গড়ে উঠছে। সিডর, আইলাসহ বড় বড় ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েও সুন্দরবন নিজের মতো করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য হলো বাঘ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, দশকের পর দশক ধরে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমছে বৈকি বাড়ছে না। চোরা শিকারি ও জল-বনদসু্যদের তৎপরতা, আবাসস্থলের সংকট, খাদ্য সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে সুন্দরবনে বাঘের অবস্থা মোটেও ভালো নেই। তথ্য মতে, গত কয়েক বছর আগেও বিশ্বের বনাঞ্চলে প্রায় এক লাখ বাঘ ছিল। এখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২টি দেশে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র চার হাজার। বন বিভাগের সূত্র মতে, ২০০৪ সালে পাগ মার্ক বা পায়ের ছাপ গণনা পদ্ধতিতে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। ২০১৫ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে করা শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬টি। সুন্দরবনে বাঘের টিকে থাকা নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে সুন্দরবন তলিয়ে যাবে, আশপাশ এলাকায় বন্যা হবে। লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগের কবলে পড়ে বাঘের টিকে থাকা কঠিন হবে। তবে এর বিপরীত কথাও বলা হচ্ছে, যদিও সুন্দরবন একটি সক্রিয় বদ্বীপ এলাকা। ফলে সুন্দরবনের চারদিকে চর জেগে উঠছে। নতুন নতুন চর তৈরির সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। পলির কারণে এ বনের আয়তন বিস্তৃত হতে পারে এবং সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা ভবিষ্যতে ডুবে না গিয়ে আরও উঁচু হতে পারে! তবে যাই বলা হোক না কেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকবেলা করার বিষয়টি এককভাবে বাংলাদেশের হাতে নেই। তাই সামগ্রিকভাবে বিশ্বের বাঘ রক্ষার স্বার্থে প্রত্যেকটি দেশকে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশকেও নিজেদের মতো করে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে হবে। নির্বিচারে বাঘ শিকার বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া সুন্দরবন ও বাঘের অস্তিত রক্ষায় আরও কতগুলো বিষয়ে নজর দিতে হবে। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ধীরে ধীরে সুন্দরবনের আশপাশে শিল্পকারখানা গজিয়ে উঠছে, নতুন নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে। এসব বিষয় যাতে সুন্দরবনকে ক্ষতি না করে সেদিকে নজর দিতে হবে। সব ধরনের দূষণের হাত থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে। চোরা শিকারি ও বাঘ াচারকারীদের দৌরাত্ম্য চিরতরে বন্ধ করতে হবে। কেননা, বাঘের অস্তিত্ব না থাকলে সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষাও কঠিন হয়ে পড়বে। সুন্দরবনের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। সুন্দরবনের মৎস্য ও বনজসম্পদের ওপর উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। তাছাড়া জলবায়ু দুর্যোগের এ কঠিন বাস্তবতায় বড় বড় দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে চলেছে সুন্দরবন। সুন্দরবনকে সংরক্ষণ করতে হবে। বন উজাড় বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বাঘের প্রধান খাদ্য চিত্রা হরিণ বৃদ্ধিতে হরিণের স্বাভাবিক বিচরণ ক্ষেত্রে যাতে কোনো সমস্যা দেখা না দেয় সে দিকেও নজর রাখতে হবে। হরিণ শিকারিদেরও চোরাকারবারি বন্ধ করতে হবে। সহজ কথায়, সুন্দরবনকে সুন্দরবনের মতোই থাকতে দিতে হবে। তাহলে সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল তাদের মতো করে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে পারবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যাতে বন ও বনভূমির প্রাণীদের ওপর না পড়ে সে জন্য প্রত্যেকটি দেশকে এক কাতারে এসে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দ্রম্নত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া বাঘ রক্ষায় আশপাশের শিল্পকারখানা ও এর দূষণের প্রভাব, চোরা শিকারিদের বিস্তার, আবাসস্থল ও খাদ্যসংকটের প্রভাব সুন্দরবনের বাঘের ওপর পড়বে না- এটাও বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50698 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1