বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

চিকিৎসা সেবা

রিফাত মাহদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  ২৪ মে ২০১৯, ০০:০০

চকিৎসা সেবাদান একটি মহৎ পেশা। জাতির শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানরাই এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ পায়। মানুষ যখন অসুস্থতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন একমাত্র আলস্নাহর কাছে দোয়া করে আর চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখে। অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে ডাক্তারের মুখের দিকে। মনে হয় যেন সৃষ্টিকর্তার পরে ডাক্তারই তার সর্বশেষ আস্থার ঠিকানা। অনেক ডাক্তার তার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টাও করে। কিন্তু বর্তমানে ভালো ডাক্তারের সংখ্যা যেমন অনেক তেমনি অসাধু ডাক্তারের সংখ্যাও কম নয়। যারা রোগীর চেয়ে নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখে। ছোটবেলায় যখন হাসপাতালে যেতাম তখন ডাক্তার দেখিয়ে বের হয়ে দেখতাম শার্ট, প্যান্ট, টাই পরে কিছু লোক বাহিরে অপেক্ষমান। ডাক্তার দেখিয়ে যিনিই আসেন ওই ভদ্রলোকরা তার প্রেসক্রিপশনটা হাতে নিয়ে দেখেন কি ওষুধ দেয়া হয়েছে। অনেক সময় প্রেসক্রিপশনের ছবিও তুলে রাখেন। তখন ভাবতাম ওনারা হয়তো ডাক্তারি শিখছেন। কোন রোগের জন্য ডাক্তার কোন ওষুধ দেন তা দেখছেন। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি যে আমার ধারণা ভুল ছিল। ওনারা ডাক্তারি শিখছেন না বরং ওনারা হচ্ছেন ওইসব ওষুধ কোম্পানির নিয়োগকৃত লোক যে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ডাক্তাররা চুক্তিবদ্ধ। ওষুধের মান খারাপ জেনেও অসাধু ডাক্তাররা ওদের ওষুধগুলো লিখেছেন। এর বিনিময়ে ডাক্তারদের বাসায় টিভি, ফ্রিজ, এসিসহ বিলাসবহুল পণ্য সামগ্রী দিয়ে আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে কোনো রোগের জন্য ডাক্তার দেখাতে গেলে ব্যাগ বোঝাই করে টাকা নিয়ে বের হতে হয়। কেননা, রোগীর দিকে একটু তকিয়েই তাকে একটি লম্বা টেস্টের লিস্ট ধরিয়ে দেন শ্রদ্ধেয় ডাক্তার। রোগীর সুবিধার জন্য ওই টেস্টগুলো কোথায় করাবে সেটাও বলে দেন ডাক্তার। এর বিনিময়ে ল্যাবরেটরিগুলোর পক্ষ থেকে ডাক্তার মশায়ের জন্য কিছু হাদিয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ইদানীং আমাদের দেশে আইসিইউ ব্যবসায় বেশ রমরমা। রোগী গেলেই আই সিইউতে ঢুকিয়ে দেয়ার একটা প্রবণতা কাজ করে অসাধু ডাক্তারদের মাঝে। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে আই সিইউতে লাশ বাণিজ্যের অভিযোগও আছে। মানুষ মরে যাওয়ার পরও বেঁচে আছে বলে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে লাশ আটকে রেখে ওরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অথচ ব্যঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা অধিকাংশ ক্লিনিকগুলোতেই মানসম্মত যন্ত্রপাতি নাই। বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতলে ও ক্লিনিকগুলোতে সিজারিয়ান সেকশনের বাণিজ্যও বেশ জমে উঠেছে।শহরকেন্দ্রিক কিছু কিছু প্রসূতি মায়েরা ঝুঁকছে এই দিকে। কেননা, দুই তিন দিন অপেক্ষা করে প্রসব যন্ত্রণা ওনারা সহ্য করতে পারবেন না। আবার ব্যবসায়ী ডাক্তাররাও গর্ববতি মা দেরকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সিজার কারার দিকে ধাবিত করছে। ওরা বলে যে, সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসব না হলে মা ও নবজাতক উভয়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হলে মা ও নবজাতক উভয়ই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। সন্তান অপুষ্টিতে ভুগে এবং পরবর্তী প্রসবে সন্তানের অপরিণত হওয়া কিংবা মৃতু্যর ঝুঁকিও থাকে। অপুষ্টির কারণে অনেক সময় সন্তানকে প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিতেও দেখা যায়। সিজারিয়ানে সন্তান প্রসব হলে ডাক্তার অনেক টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। আর সিজারিয়ানে বাচ্চা হলে মায়ের সুস্থ হয়ে উঠতে সময় বেশি লাগায় হাসপাতালে ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষেরও সুবিধা। তারা বেড ভাড়া কিংবা বিভিন্ন সার্ভিস চার্জের অজুহাতে হাতিয়ে নিতে পারে বেশ মোটা অংকের টাকা। শুধু বেসরকারি হাসপাতালে নয়, সরকারি হাসপাতালগুলোতেও চলছে বিভিন্ন মাধ্যমের বাণিজ্য। এক শ্রেণির দালাল চক্র সরকারি হাসপাতালে সিট বাণিজ্য করছে। এদের টাকা দিলে আগে সিট পাওয়া যায়। আবার সরকারি হাসপাতালের কিছু অর্থলোভী ডাক্তার কর্মঘণ্টার তোয়াক্কা না করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চলে যায় প্রাইভেটে রোগী দেখতে। যার ফলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে অনেকে বঞ্চিত হয়। অথচ এসব ডাক্তারদেরও মানুষ অন্ধের মতো বিশ্বাস করছে। কারণ তাদের কাছে আমদের হাত-পা বাঁধা। কোথায় গেল জাতির শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানদের মানবতা? কোথায় আজ তাদের বিবেক? চিকিৎসাসেবা যেহেতু মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি তাই সরকারকেই এটির প্রাপ্তি নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকারের হস্তক্ষেপে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়ন, কঠোর নজরদারি ও তদারকির মাধ্যমে এ ধরনের অসৎ বাণিজ্য প্রতিরোধ করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50839 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1