শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকা আমে কাঁচা আঁটি

অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন
নতুনধারা
  ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০

চারদিকে কেবল ভেজাল, বিষাক্ত আর মানহীন পণ্যের ছড়াছড়ি। ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে মানবদেহে বাসা বাঁধছে যত অনিরাময়যোগ্য রোগ। এ রোগ থেকে নিরাময়ের জন্য আর যেন কোনো রাস্তাই খোলা নেই। এসব জটিল ও অনিরাময়যোগ্য কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই অকালে মারা যাচ্ছে। এই জটিল রোগ কিংবা অকাল মৃতু্যর জন্য দায়ী কিন্তু মানুষই।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, রাজধানীর মিরপুর দিয়াবাড়ি আমের আড়তে অভিযান চালিয়ে পাকা আমের মধ্যে কাঁচা আঁটি পেয়েছের্ যাব। রাসায়নিকে পাকানো এ আম আড়তে মজুদ রেখে বিক্রি করছেন অসাদু ব্যবসায়ীরা। অভিযান চালিয়ে পাওয়া আমগুলোতে দেখা গেছে- আমের উপরের অংশ কাঁচা। আমগুলো কাটার পরে দেখা গেছে ভেতরে হলুদ রং ধারণ করেছে। আমগুলো প্রথমে দেখলে মনে হবে এগুলো পাকা আম। আসলে আমগুলোকে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয়েছে। তাই আমের আঁটিও কাঁচা। আমের স্বাদও কাঁচা আমের মতোই। অভিযানে মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার কেজি ল্যাংড়াসহ অপরিপক্ব আম জব্দ করা হয়েছে। এই ৬টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ করে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, গুটি আমগাছ থেকে পাড়া শুরু হয় ১৫ মে থেকে। সে হিসেবে গুটি আম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু ল্যাংড়া আমের প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ৬ জুন পর্যন্ত। আর মিষ্টি আম আম্রপালি ও ফজলি পাড়া শুরু হবে ১৬ জুন ও সর্বশেষ আশ্বিনা ১৭ জুলাই থেকে। অথচ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা হচ্ছে।

নিম্নমানের ভেজাল খাদ্যপণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার দাবি যখন জোরালো হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে এবার আমে কার্বাড দেয়ার সম্ভাবনা নেই, তখনই এমন ঘটনা ঘটল। এর আগে কারওয়ান বাজার থেকেও অপরিপক্ব আম জব্দ করা হয়েছে। অথচ দিন কয়েক আগে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরাই শপথ করেছিলেন তারা ভেজাল ও বিষাক্ত আম বাজারে আনবেন না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ীই তারা আম বিক্রি করবে।

এ দেশের একশ্রেণির মানুষের অতি মুনাফা এবং লোভের কারণেই দিনে দিনে আমাদেরও মৃতু্যঝুঁকি বাড়ছে। এদের মধ্যে কোনো মানবিক বোধ নেই। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতাই কাজ করে। শুধু ভেজাল ও মানহীন খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতি বছর দেশে ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে, ২ লাখ লোক কিডনি রোগে, দেড় লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মদান করছেন। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে হেপাটাইটিস, কিডনি, লিভার ও ফুসফুস সংক্রমিত রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। সুতরাং এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে মানুষের মৃতু্যর ৭০ শতাংশ কারণ হবে ভেজালযুক্ত খাদ্য গ্রহণ। এই ধরনের আশঙ্কা নিঃসন্দেহে উদ্বেজনক।

আমরা মনে করি, অসৎ ব্যবসায়ীদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া উচিত নয়। কেবল জরিমানা বা জেল নয়- এর সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত মৃতু্যদন্ড। অপরাধীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে এর পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। তবে ভেজালবিরোধী অভিযান সারা বছর পরিচালনা করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রভাবশালী কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। ভেজালের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি। ভেজাল প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তুলতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<51090 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1