বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লালমাটিয়ায় অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হোক

নতুনধারা
  ২৭ মে ২০১৯, ০০:০০

লালমাটিয়া একটি আবাসিক ও নিরিবিলি এলাকা, যেখানে অভিজাত লোকজন বাস করছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা। এই আবাসিক এলাকায় নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে স্কুল, কলেজ, ক্লিনিক, হাসপাতাল ইত্যাদি। এর মধ্যে কয়েকটি উলেস্নখযোগ্য হাসপাতাল হলো- ইউরো বাংলা হার্ট ও জেনারেল হসপিটাল, নবজাতক হাসপাতাল, মিলেনিয়াম হাসপাতাল। উদাহরণস্বরূপ ইউরো বাংলা হার্ট হসপিটালের কথা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এসব হাসপাতালের বৈধ কোনো কাগজপত্র, যেমন সেটি করপোরেশনের পারমিশন, ট্রেড লাইসেন্স, হেলথ মিনিস্ট্রির অনুমতি পত্র, ড্রাগ লাইসেন্স, নারকোটিকস লাইসেন্স, ডিজি, হেলথের অনুমতি পত্র, পরিবেশের ছাড়পত্র ইত্যাদি নেই। কোনো বৈধ কাগজপত্র না নিয়ে তারা ব্যবসার নামে যেসব অপকর্ম করে চলেছে লালমাটিয়াবাসী তার প্রত্যক্ষ দর্শক। একটা অভিজাত আবাসিক এলাকায় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে না, যা আইনসম্মত নয়। আর লালমাটিয়াবাসী প্রতিদিন এই হাসপাতালের কারণে নানারকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এই হাসপাতালে প্রতিদিন নানারকম রোগী আসে। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণে এখানে প্রায়ই রোগী মারা যায়। শুরু হয় হইচই, লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, উচ্চ শব্দে কান্না-কাটি, আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা, দলাদলি, রাত-বিরাতে হইচই, চিৎকার চেঁচামেচি, যা এই এলাকার দৈনন্দিন ও প্রাত্যহিক কর্মকান্ডকে দারুণভাবে ব্যাহত করছে। কয়েকদিন পর পরই চলে এই অবস্থা। কত আর সহ্য হয়। এই বহিরাগত লোকদের কেন্দ্র করে নানারকম হকার রাস্তার ফুটপাত দখল করে ফেলেছে। দিনের বেলা যানজট লেগেই আছে, যা আগে কখনো দেখা যেত না। রাতের বেলা নানারকম শব্দদূষণ পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। লালমাটিয়া যে একটি আবাসিক এলাকা এখন সেটা বলা মুশকিল।

ইউরো বাংলা হার্ট হাসপাতালে হার্টের বিভিন্ন চিকিৎসা দেয়া হয় যার মান নিয়ে নানারকম গুঞ্জন রয়েছে, নানারকম প্রশ্ন রয়েছে। যে কারণে রোগীরা এখানে এসে অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন। এখানে রোগীদের হার্টে রিং পরানো হয়, এই রিংগুলোর ব্যবসা করছেন একজন ডাক্তার যান নাম কামরুল আহসান ও ডা. আলি আশরাফ খান। এই রিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই, যার মূল্যও এখানে অনেক বেশি নেয়া হয়, যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই আইসিইউর পারমিশন নেই, রিং ব্যবসার বৈধ কাগজ নেই, ফার্মেসি ব্যবসার অনুমতি নেই, হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই।

* রোগীর ওয়ার্ড ও টয়লেটের চরম দুর্গন্ধ।

* রিং পরানোর মেশিনটা অন্যন্ত পুরনো এবং মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে যায়, যার কারণে এ হাসপাতালে রোগী মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে ডাক্তাররা মনে করেন। মানুষের জীবন নিয়ে এরা খেলছেন, এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

* এখানে একদল দালাল কাজ করে যারা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে গরিব অসহায় রোগী ধরে এনে এদের হাতে তুলে দেয়। আর এরা এদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।

* এই হাসপাতালে আইসিইউ বলতে যা আছে তাতে রোগী বেঁচে থাকার কথা নয়। এখানে দালালচক্রের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করে ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়।

এখানকার ল্যাবে নূ্যনতম ডায়াগনস্টিক সুবিধা নেই, তবু এখানে হৃদরোগের মতো জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অসুখের চিকিৎসা চালানো হয়। এর ফলে প্রতারিত হচ্ছে অসহায় অসংখ্য মানুষ।

* আরেকটি মারাত্মক বিষয় এখানে সার্বক্ষণিক কোনো ডাক্তার থাকে না, অন কল বেসিসে ডাক্তার আসে, রোগীরা কতটা অসহায় তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। আর যারা এখানে ডিউটি করে তারা জুনিয়র লেভেলের, তারা না পারে চিকিৎসা দিতে, না পারে সাহায্য করতে। এর ফলে রোগীরা অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন।

অবাধে চলছে এখানে হাসপাতাল ব্যবসা, কে দেখবে এগুলো। এগুলো যাদের দেখার কথা তারা কোনো এক রহস্যময় কারণে দেখছেন না, তাই বলে অন্যরা তো চুপ করে বসে থাকতে পারে না। চোখের সামনে অন্যায় অপরাধ চলছে আর এগুলো লালমাটিয়াবাসী দেখছেন। সহ্য হয় না, বিবেকের তাড়নায় আমার, আপনার, সবার এগিয়ে আসা উচিত।

আরেকটি বিষয়, ইউরো বাংলা হার্ট হাসপাতালের মালিকরা জামায়াত শিবিরের বড় নেতা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে এই হাসপাতালে মাঝেমধ্যে জামায়াতের রুকনদের শপথ পাঠ করানো হয় এবং সরকারবিরোধী কর্মকান্ড চলে, যে কারণে গত কয়েক বছর আগে পুলিশ একদল ডাক্তারকে ধরে নিতে দেখা যায়। এখনো ছদ্মবেশে পুলিশ ঘুরছে বলে কেউ কেউ দেখতে পান। ঘনিষ্ঠ সূত্রে পাওয়া খবর, পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য ডাক্তার কামরুল আহসান হাসপাতালের গেটে বিশেষ সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন, যা তিনি ছাড়া আর কেউ দেখেন না। সিভিল ড্রেসে তার একদল লোক তাকে সবসময় পাহারায় রাখছেন।

সৈয়দ সিরাজ শিকদার

লালমাটিয়া, ঢাকা-১২০৭

চিকিৎসা শিক্ষার সম্প্রসারণে আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন

বিজ্ঞানের এ যুগে বাংলাদেশে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পর বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা অধ্যয়নের অত্যন্ত সীমিত সুযোগ রয়েছে। খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চস্তরে বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেছে। প্রাপ্ত সুযোগে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী কৃষি, চিকিৎসা, প্রকৌশল বা পেশাদারী বিষয়ে অধ্যয়ন করতে পারছে। ইদানীং আশঙ্কাজনকভাবে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

দেশ জনসংখ্যায় ভারাক্রান্ত এ বাস্তবতাকে স্মরণ রেখে বাংলাদেশে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। জনসংখ্যা জনশক্তিতে রূপান্তর দেশে একটি অগ্রগতির পরিবর্তন আনয়ন করতে পারে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা জনশক্তিতে উন্নয়নের জন্য সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

স্বাধীনতা উত্তর ৩৯ বছরে সরকার ৬৪টি জেলার প্রত্যেকটিতে অন্তত একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করতে পারতো। দেশে অনেক রোগী এখনো চিকিৎসার অভাবে চিকিৎসা সেবা পায় না। অধিকন্তু কিছু সংখ্যক চিকিৎসক অতি উচ্চহারে পরামর্শ ফি আদায় করাতে অনেক রোগী তাদের পরামর্শ গ্রহণে বঞ্চিত হয়। রোগীদের অনেকে ওষুধ বিক্রেতার কাছ থেকে তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগের জন্য ওষুধ বাছাইয়ের সাহায্য নিয়ে থাকে। সেটা অনেক ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের চেয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া অনেক চিকিৎসক কমিশন লাভের উদ্দেশ্যে তাদের পছন্দমতো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পরামর্শ দেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে পেশাদার গুণের চিকিৎসক প্রয়োজন। এটা হলে দেশের সাধারণ মানুষ তাদের আর্থিক সঙ্গতির মধ্যে চিকিৎসা সেবা পাবে। জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করার জন্য বাংলাদেশে আরো বেশি চিকিৎসা শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। প্রতিটি জেলা সদরে এমবিবিএস কোর্স শিক্ষা দেয়ার জন্য অন্তত একটি করে মেডিক্যাল কলেজ প্রয়োজন। দেশের সব অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ দেয়ার জন্য সেগুলো আবাসিক হতে হবে।

মানুষকে জনশক্তিতে রূপান্তরের জন্য যে বিনিয়োগ সেটা অর্থনীতির যে কোনো খাতে বিনিয়োগ অপেক্ষা বেশি রিটার্ন প্রদান করে থাকে। এটা বর্তমান পৃথিবীতে পরীক্ষিত সত্য। জাপানের উন্নয়নের একটি প্রধান কারণ হলো, জাপান শিক্ষা ও গবেষণায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। যদি সরকার সব জেলায় প্রাক-স্নাতক চিকিৎসক তৈরির জন্য মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করে তাহলে দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য চিকিৎসক জনশক্তি তৈরি হবে। এদের মধ্যে অনেকে বিদেশে গিয়ে দেশের উন্নয়নে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান শিক্ষায় গতি সঞ্চার করতে হবে। শিক্ষিত লোকদের বেকারত্ব হ্রাসে এটা সহায়ক হবে। কারিগরি, চিকিৎসা ও পেশাদারী শিক্ষায় বর্তমান আরো অনেক বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন।

মো. আশরাফ হোসেন

সেন্ট্রাল বাসাবো, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<51241 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1