শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গতিধারা

বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার জন্য 'উইলফুল ডিফল্টারদের' বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব প্রয়োজন। একই সঙ্গে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে নতুন প্রদানকৃত ঋণ কোনোভাবেই খেলাপি হতে দেয়া যাবে না আর বিদ্যমান খেলাপি ঋণ স্বল্পসময়ের মধ্যে আদায়ের জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক ঋণ আদায় তৎপরতা অনতিবিলম্বে শুরু করতে হবে।
আবু সাদেক মো. সোহেল
  ১৩ জুন ২০১৯, ০০:০০

স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এক সময় নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তুচ্ছার্থে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ যদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারে, তবে পৃথিবীর যে কোনো দেশই তা পারবে। চার দশকেরও বেশি সময় আগের এ সব মন্তব্য বর্তমানে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ প্রকাশিত 'ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল-২০১৯' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পনের বছরে বাংলাদেশ বারোটি দেশকে টপকে গেছে। আগামী পনের বছরে টপকে যাবে আরো সতেরটি দেশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৩৬তম অর্থনীতির দেশ আর ২০৩২ সালে হবে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে, ২০৩৩ সালে এ দেশের পেছনে থাকবে সিঙ্গাপুর, সুইজ্যারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেনসহ উন্নত বিশ্বের আরো অনেক দেশ। বিশ্বয়ানের এই যুগে, বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়াকে কি থামিয়ে দেবে ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা এবং খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি? এ প্রশ্ন অনেক সুধীজন-গুণীজনের। বিনিয়োগের সঙ্গে উন্নয়ন সরাসরি জড়িত। বর্তমানে এ দেশে বিনিয়োগের মূল উৎস ব্যাংক। অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণের জন্য ব্যাংকিং খাতে ধ্বংস নামলে এবং জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা শতকরা ৩৪ ভাগের অনেক নিচে অবস্থান করলে, আগামী বছরগুলোতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতকরা ৮ ভাগে আটকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এই বাস্তব সত্যটি উপলব্ধি করে, এ দেশের সম্মানিত ঋণ গ্রহীতারা এবং ব্যাংকারকে অনতিবিলম্বে খেলাপি ঋণ কমানোর সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, এর খেসারত দিতে হবে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এ দেশের অর্থনীতিকে।

খেলাপি ঋণ অর্থনীতিতে ক্যান্সারের মতো কাজ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা অনুযায়ী কোনো বছরের ৩১ মার্চ, ৩০ জুন, ৩০ সেপ্টেম্বর ও ৩১ ডিসেম্বর কোনো একটি ঋণ 'নিম্নমান', 'সন্দেহজনক' বা 'মন্দ ও কু-ঋণ' হিসেবে শ্রেণিকৃত হলে, সেই ঋণের সুদ ব্যাংক আয় হিসাবের পরিবর্তে ইন্টারেস্ট সাপপেন্স হিসেবে স্থানান্তর করে। ফলে ব্যাংককে তহবিল খরচ হিসেবে আমানতকারীকে নিয়ম মাফিক পুরো সুদ প্রদান করতে বাধ্য হলেও সেই তহবিল হতে প্রদত্ত ঋণ হতে কোনো সুদ আয় হিসেবে দেখাতে পারে না। ফলে, ব্যাংকের উপার্জন ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। অধিকন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, ঋণ শ্রেণিকরণের মান অনুযায়ী বছরে চারবার ঋণ শ্রেণিকরণের কাট-অব-ডেটে, 'নিম্নমান', 'সন্দেহজনক' বা 'মন্দ ও কু-ঋণের' জন্য যথাক্রমে শতকরা ২০ ভাগ, ৫০ ভাগ এবং ১০০ ভাগ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক। ব্যাংক অর্জিত আয় হতে সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ হলেও, ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটে 'প্রভিশন শর্টফল' প্রদর্শন করতে হয়। ব্যাংকের প্রভিশন শর্টফল, ব্যাংকের ক্যাপিটেলকে ঋণাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। ফলে, কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হলে, অধিক পরিমাণ প্রভিশন শর্টফলের কারণে, সেই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বা ক্যাপিটেল শর্টফল হতে বাধ্য। এ অবস্থায়, ব্যাংকের সুনাম বহুলাংশে ক্ষুণ্ন হয়। কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ব্যাংকের বিদ্যমান আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে আমানত অন্য ব্যাংকে সরিয়ে নেন। ইমেজ সংকটের কারণে নতুন আমানত সংগ্রহ কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে, ওই সব ব্যাংকে তারল্য সংকটের সৃষ্টি হয়। ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম আস্তে আস্তে কমতে থাকে যার ফলে দেশের বিনিয়োগে ভাটা পড়ে।

ব্যাংকের ঋণ প্রদান ক্ষমতা কমে গেলে, দেশের সার্বিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়ে দেশের জিডিপি প্রবৃৃৃৃদ্ধিকে যে কমিয়ে দেয় তাতে সন্দেহ নেই। দেশের ঊর্ধ্বমুখী খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৩ তারিখ: ২১ এপ্রিল, ২০১৯ জারি করা হয়েছে। এ নিয়ে গুণীজনদের মধ্যে কিছুটা হলেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন খেলাপি গ্রাহকের সুবিধা দেয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। ওই সার্কুলারের শুরুতেই উলেস্নখ করা হয়েছে, অর্থনীতির চাকার সঙ্গে বর্তমান ব্যবসায়িক পরিবেশকে সমান তালে চালানোর জন্য ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই সার্কুলার অনুযায়ী, মাসিক/ত্রৈমাসিক/ষান্মাসিক/বার্ষিক কিস্তিতে যে সব মেয়াদি ঋণ পরিশোধিত হয় সে সব ঋণের কিস্তি খেলাপির ক্ষেত্রে ৬ মাসের অতিরিক্ত সুবিধা ঋণ গ্রহীতারা পাবেন। ইতিপূর্বে, নির্ধারিত তারিখে ঋণের কিস্তি পরিশোধিত না হলে পরের দিন থেকে কিস্তি খেলাপি গণনা করা হতো। নতুন শ্রেণিকরণ নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ঋণগ্রহীতা নির্ধারিত তারিখে কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, তারপর তিনি সেই কিস্তি পরিশোধের জন্য আরো ৬ মাস সময় পাবেন যাতে তিনি কিস্তিটি পরিশোধ করতে পারেন। তিনি যদি ওই ৬ মাসের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন তা হলে ৬ মাস পর আর সেই ঋণের কিস্তিটি ওভারডিউ হবে না। ফলে ঋণটি নিয়মিত থাকার কারণে ব্যাংক এবং ঋণ গ্রহীতা উভয়েই উপকৃত হবেন। বাস্তবতার নিরিখে, শিল্প ঋণে উচ্চ সুদ থাকলে সময়মতো বিপুল অংকের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা অনেকটাই কষ্টকর বিষয়। আমার ৪০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ঋণ পরিশোধে এ ধরনের সুবিধা ভালো ঋণ গ্রহীতাদের উৎসাহিত করবে এবং তারা শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। ইতিপূর্বে 'সন্দেহজনক' ও 'মন্দ ও কু-মানে' শ্রেণিকৃত ঋণ ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ৫ (গ) (গ) ধারা অনুযায়ী ঋণের ওভারডিউ এর সময় ৬ মাস বা ততোধিক হওয়ার কারণে খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হতো। পূর্বে, 'নিন্মান' মানে শ্রেণিকৃত ঋণ ওভারডিউ এর সময় ৬ মাসের কম হওয়ার কারণে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতো না। কিন্তু নতুন নীতিমালায় 'নিন্মান' ঋণের যে অংশের ওভারডিউ এর সময় ৬ মাস কিন্তু ৯ মাসের কম সেসব ঋণ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী খেলাপি ঋণের আওতায় আসবে। এ সব পরিবর্তনে, ভালো ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি আসবে বলে ধারণ করা যায়।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পরিবর্তন আসার পর, ব্যাংকিং খাতে সমস্যা চিহ্নিত করে কিছু কিছু নতুন পদক্ষেপ গৃহীত হবে বলে শুনা যাচ্ছে- যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে বিবেচনা করা যায়। শুনা যাচেছ খেলাপি ঋণ কমাতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের কোম্পানি ইতিপূর্বেও এ দেশে কার্যক্রম চালিয়েছিল। যার অভিজ্ঞতা একেবারেই সুখকর নয়। ইতোপূর্বে দেখা গেছে, ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তারা যারা মাসের পর মাস খেলাপি গ্রাহকের পেছনে ঋণ আদায়ের জন্য তৎপরতা চালিয়েছেন। কোনো কোনো অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি মাঝখানে ঋণ আদায়ের কার্যক্রম গ্রহণ করে পুরো ঋণ আদায় করে বড় ধরনের কমিশন নিয়ে গেছেন। ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই ঋণ আদায়ের দায়িত্বে থাকা ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয় এবং ব্যাংক শাখার ঋণ আদায়ে এক অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়। আমার জানা মতে, কোনো কোনো ব্যাংকে কমিশনের ভাগাভাগি নিয়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং ব্যাংকের মধ্যে মামলাও হয়েছিল। এতদসত্ত্বেও, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ আদায়ের দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে, খেলাপি ঋণ আদায়ের কমিশন যুক্তি সঙ্গত পর্যায়ে থাকা অপরিহার্য। অন্যথায়, ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় হবে, কমিশন বাবদ প্রদত্ত অর্থ অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে ব্যাংকের ক্ষতি হবে। এ ধরনের অসন্তোষ নিরসনে, এ সব কোম্পানির পরিবর্তে, ব্যাংকের বিদ্যমান জনবলের জন্য সামান্য পরিমাণ ক্যাশ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হলে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর খেলাপি ঋণ আদায়ের সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হলে, বিদ্যমান খেলাপি ঋণ কমবে। আর নতুন ঋণ প্রদানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুসরণ করে যোগ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রপ্তানিকারককে প্রয়োজনীয় ডিউ ডিলিজ্যান্স সম্পন্ন করে ঋণ প্রদান করা হলে, নতুন ঋণের খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে।

অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ১২ ধারার আওতায় নিলামে সম্পত্তি বিক্রয়ের সময় খেলাপি ঋণ গ্রহীতা রিট দায়ের করে নিলাম কার্যক্রম আটকিয়ে দেয়ার যে প্রথা চলছে তা বাতিল করার জন্য আইন সংশোধন প্রয়োজন। তাহলে, ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বন্ধকীকৃত সম্পত্তি সহজে বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হবে। নতুন ঋণখেলাপি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, সঠিক ঋণ গ্রহীতা নির্বাচনে ব্যাংককারদের ব্যর্থতা। অপর উলেস্নখযোগ্য কারণ হলো, ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত ভালো নিষ্কন্টক জামানত গ্রহণ করতে না পারা। ঋণের ফলো-আপ এবং ঋণ বিতরণের পর হতে নিয়ম মাফিক ব্যাংকের পক্ষ হতে ঋণের আদায় তৎপরতা সঠিকভাবে চালানো না হলেও নতুন ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়। ব্যাংকের ছোট শাখার ব্যবস্থাপক হতে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী পর্যন্ত দক্ষ, সৎ এবং নিষ্ঠাবান হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এক কথায় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাই অসৎ এবং অদক্ষ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

উপসংহার, এই কথা বলা বিশেষ প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার জন্য 'উইলফুল ডিফল্টারদের' বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব প্রয়োজন। একই সঙ্গে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে নতুন প্রদানকৃত ঋণ কোনোভাবেই খেলাপি হতে দেয়া যাবে না আর বিদ্যমান খেলাপি ঋণ স্বল্পসময়ের মধ্যে আদায়ের জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক ঋণ আদায় তৎপরতা অনতিবিলম্বে শুরু করতে হবে।

আবু সাদেক মো. সোহেল: বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক. ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেড

ধনঁংড়যবষ১৯৫২@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53361 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1