শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবার ও সমাজকে সচেতন হতে হবে

রিফাত মাহদী শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

তরুণ সমাজ দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। দেশ ও জাতি গঠনে তরুণ সমাজের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। দেশ যখনই ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করেছে এগিয়ে এসেছে তরুণ সমাজ। উদ্ধার করেছে দেশকে শত্রম্ন পক্ষ থেকে। অক্ষুণ্ন রেখেছে প্রিয় মাতৃভূমির সম্মান। '৫২-এর ভাষা আন্দোলন '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনে আলোকবর্তিকা হয়ে জতিকে পথ দেখিয়েছে তরুণ সমাজ। কোনো দেশকে উন্নতির স্বর্ণ শিখড়ে আরোহন করাতে হলে অবশ্যই তারুণ্যের মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু বর্তমানে তরুণ সমাজের মেধা ও মনন ধ্বংস করার জন্য আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ মাদক। মাদক বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সামাজিক সমস্যা। এটা ভালো মানুষকে পাগলের স্তরে নিয়ে যায়, সুস্থ সবল ব্যক্তিকে অসুস্থ ও দুর্বল করে দেয়। চরিত্রবানকে করে চরিত্রহীন। মাদকের কারণে নৈতিকতার বিপর্যয় এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। মাদক কেবল তরুণ সমাজের মেধা ও মননকেই ধ্বংস করছে না এর কারণে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে অপরাধ প্রবণতা। প্রতিদিনের সংবাদপত্র খুলতেই যেসব খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, রাহাজানির খবর পাওয়া যায় এর অধিকাংশের সঙ্গে জড়িত মাদকাসক্তরা। এই মাদকের কারণে প্রতি বছর দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবেও দেশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। একজন মাদকসেবিই পুরো একটি সমাজের জন্য অস্থিরতা ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বেকারত্ব কিংবা কর্মজীবনে যারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে দায়ী করা হলেও স্টুডেন্ট অবস্থায় যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে পরিবেশই অনেকাংশে দায়ী। অসৎ সঙ্গের কারণে অনেকে এর সঙ্গে জড়িয়ে যায়। নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে এটা দেশের ভবিষ্যতের জন্য হুমকির ইঙ্গিত বহন করে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা বলেন এইভাবে চলতে থাকলে আগামী ১৫ বছর পর মাদকমুক্ত তরুণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। আইন প্রয়োগ করে মাদক ব্যবসার লাগাম কিছুটা টেনে ধরা গেলেও এর মাধ্যমে মাদক সেবনের লাগাম টানা প্রায় অসম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সচেতন সমাজ ও সচেতন পরিবার। মাদক নির্মূলে সমাজ এবং পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার এবং সমাজকে খেয়াল রাখতে হবে এদের কোনো সদস্য মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে কি না। মাদকসেবিদের চেনার বিভিন্ন উপায় আছে। যেমন: অস্বাভাবিকভাবে শরীরের ওজন কমে যাওয়া, চোখ লাল হয়ে থাকা, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, পছন্দের কাজ বা খেলাধুলা থেকে বিরত থাকা, ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখা, কলেজ ভার্সিটি বন্ধ দিলেও বাড়িতে না আসা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মানুষের সঙ্গে অযথা ঝগড়া বাধানো ইত্যাদি মাদকসেবনকারীদের কিছু আলামত। এই আলামতগুলো কারোর মধ্যে পাওয়া গেলে তার দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবার কিংবা সমাজ যদি বুঝতে পারে যে তাদের সন্তান মাদকাসক্ত তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্ভব হলে বুঝিয়ে বিরত রাখতে হবে কিংবা রিহ্যাবে দিতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। কেননা, একজন মাদকসেবিই পুরো সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এই মাদক পুরো সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। সমাজে মাদক বিদ্যমান থাকলে সুস্থ সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। আর সমাজ সুস্থ না হলে সুস্থ জাতীয় জীবনও আশা করা যায় না। ফলে অনাচার, অবিচার, ব্যভিচার, দ্বন্দ্ব, সংঘাত লেগেই থাকবে যা কোনো দেশের জন্য শুভ হতে পারে না। কাজেই সমাজ ও দেশের উন্নতির জন্য মাদকদ্রব্য সেবন নিবারণ অপরিহার্য। আর এ জন্য পরিবার ও সমাজকে সচেতন হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53743 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1