মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজার থেকে জব্দ করে এক মাসের মধ্যে ধ্বংস করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রেতা, সরবরাহকারী ও সংরক্ষণকারীদের শনাক্ত করতে কমিটি গঠন করতে বলেছে আদালত। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ রুলসহ অন্তর্র্বর্তীকালীন এ আদেশ দেন। এসব আদেশ বাস্তবায়ন করে স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
আমরা মনে করি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টরা হাইকোর্টের নিদের্শনার বাস্তবায়ন করুক। একইসঙ্গে এ কথাও বলা জরুরি যে, যেখানে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও যথার্থ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের ওষুধ খাতের উন্নতি দৃশ্যমান, সেখানে যদি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে, তবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রসঙ্গত উলেস্নখ করা দরকার, গত বছর ২ জুলাই ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও রাসায়নিক সংরক্ষণের অপরাধে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, গত ছয় মাসের বাজার তদারকি করে রাজধানীর প্রায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পেয়েছেন তারা। এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ ও অবিলম্বে সেগুলো প্রত্যাহারের নির্দেশনা চেয়ে সোমবার আবেদন করেন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন।
আমরা বলতে চাই, হাইকোর্টের যে নিদের্শনা এসেছে তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকার সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা দরকার, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির ভয়াবহতা কীরূপ হতে পারে। একদিকে ওষুধের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে কিংবা চিকিৎসা ব্যয় কুলাতে পারছে না দেশের অনেক মানুষ এমন অভিযোগ আছে, আবার যদি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিনতে হয় তবে এর ঝুঁকি এবং ভয়াবহতা ছাড়াও পুরো পরিস্থিতি কতটা পরিতাপের জন্ম দেয় সেটাও এড়ানো যায় না। সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেয়া দরকার যে, যদি ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয় তা হলে এর চেয়ে ভয়ানক ঘটনা আর কী হতে পারে? সঙ্গত কারণেই যারা এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের কারণে মানুষের জীবনঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তা হলে বিষয়টি কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। ফলে এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই যে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ শুধু দেশের চিকিৎসার ক্ষেত্রেই ঝুঁকির নয়, বরং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে বাজায় সয়লাব, এমন পরিস্থিতি নিরসন করা না গেলে বিশ্ব বাজারেও সুনাম নষ্ট হবে এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ ছাড়া মনে রাখতে হবে যে, উন্নয়নশীল দেশে হিসেবে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসছে। ফলে এ ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে হলে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজার থেকে তুলে নিতে হবে। কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে হাইকোর্টের নিদের্শনার যথাযথ বাস্তবায়ন হোক এমনটি কাম্য।