বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও ঝরল ৩৯ প্রাণ

সড়কব্যবস্থাপনা নিরাপদ হবে কবে?
নতুনধারা
  ২৪ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ জুন ২০১৮, ২২:৫৪

সড়ক দুঘর্টনায় মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন পরিত্রাণ নেই মানুষের। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে রাজধানীতে ফিরতি যাত্রায় শনিবারেই ৩৯ জন নিহত হয়েছেন বিভিন্ন সড়কে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় বাস উল্টে ১৮ জন এবং রংপুর সদরে বিআরটিসির বাসে ট্রাকের ধাক্কায় ছয়জন নিহত হন। এ ছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সিরাজগঞ্জ, নাটোরে দুজন করে; গোপালগঞ্জে তিনজন; সাভারের আমিনবাজারে, টাঙ্গাইলের সখীপুরে, চুয়াডাঙ্গা ও নরসিংদীতে সড়ক দুঘর্টনায় একজন করে নিহত হন। এসব দুঘর্টনায় অধর্ শতাধিক আহত হয়েছেন। শুধু ঈদের ফিরতিযাত্রায়ই নয়, প্রতিদিনই দেশে সড়ক দুঘর্টনায় কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। সড়ক দুঘর্টনার এই ভয়াবহ চিত্র কিছুতেই স্বস্তিকর হতে পারে না।

সন্দেহ নেই আধুনিক যুগ আমাদের গতি দিয়েছে। ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর থেকে ভ‚-উপরিতল, নদী-সাগর অথবা আকাশ সবখানেই গতিময় চলাফেরা আজ। পাশাপাশি দুঘর্টনার হার এবং দুঘর্টনায় হতাহতের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের জন্ম দিয়ে চলেছে। দেশের আনাচে-কানাচে নিমির্ত নতুন নতুন রাস্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরযান। সেই সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রয়োজনের তাগিদেই আমরা নিত্যদিন যাতায়াত করছি এখানে-ওখানে। আর মিডিয়ার কল্যাণে মুহূতের্ই জানা যাচ্ছে দুঘর্টনার খবর। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে নিহতের সংখ্যা দেখে এবং এর কয়েকগুণ বেশি আহতের সংবাদে। মৃতের স্বজনরা দৌড়ে যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে, তাদের মাতম আর আতর্নাদে কেঁপে উঠছে আকাশ-বাতাস। আমরা বিবেকবানরা অঁাতকে উঠছি অকাল মৃত্যু-পঙ্গুর বহুমাত্রিক চিত্রে; হামেশাই দেখছি দুঘর্টনার দানবীয় ধ্বংসচিত্র। ঘটনাস্থলে আহত মানুষের কাতরানো-চিৎকার আমাদের দায়বদ্ধ করে পাশে দঁাড়াতে ও সাহায্য করতে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে সড়ক দুঘর্টনা ঘটলেও তা আমাদের দেশের তুলনায় খুব কম। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো একেকটি মৃত্যুফঁাদে পরিণত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে দীঘির্দন ধরেই। এসব সড়ক মেরামত-সংস্কারের তথ্যও জানা যাচ্ছে। এরপরও দুঘর্টনার মাত্রা কমে না আসা অত্যন্ত পরিতাপের। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক কালে প্রতিবছরই গড়ে ২ হাজারের ওপরে সড়ক দুঘর্টনা ঘটছে। এসব দুঘর্টনায় বছরে গড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। সংখ্যা যাই হোক, সড়কে মৃত্যুর মিছিল যে থামানো যাচ্ছে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সড়ক দুঘর্টনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) তথ্যেও জানা যায়, ৫৩ শতাংশ দুঘর্টনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। অথচ গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভাডর্ভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুঘর্টনার প্রধান উৎস। দুঘর্টনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। যার ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এ ছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুঘর্টনার অন্যতম কারণ। ইদানীং মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো যেন ফ্যাশন অনেক চালকের কাছে। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে। কিন্তু সে আইনের ব্যবহার হয় না। এ কারণেও দুঘর্টনা ঘটছে। দুঘর্টনার জন্য যা-ই দায়ী হোক না কেন, যে কোনো মূল্যে দুঘর্টনা প্রতিরোধই কাম্য।

সবোর্পরি বলতে চাই, ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুঘর্টনায় অধেের্ক নামিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্যে অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নাধীন আছে বলেও জানা যায়। মনে রাখা দরকার, সড়কে মৃত্যুর বিভীষিকা কারও প্রত্যাশা হতে পারে না। আমরা চাই সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের সুনিদির্ষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটুক। সড়কে মৃত্যুর মিছিল যাতে দীঘর্ না হয় এ জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি সবার উপলব্ধিতে আনা গেলে সড়ক দুঘর্টনা হ্রাস পাবে বলেই আমরা মনে করি। আর এটি করতে হবে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে