মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠক মত

নতুনধারা
  ০৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

আমাদের নৈতিকতা প্রসঙ্গে

আমাদের সমাজে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের বেড়ে ওঠার পথটা খুব বেশি আঁকাবাঁকা। ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রায় সব পরিবারের ছেলেমেয়েরা পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। আর যে ফ্যাক্টরগুলো তাদের সে পথে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা হলো- নির্মম দারিদ্র্য, পুরনো আধাপচা শিক্ষাব্যবস্থা, অপচর্চার রাজনীতি, নৈতিক ও যৌন শিক্ষার আকাল, অভিভাবকদের চরম ঔদাসীন্য, প্রযুক্তির মারাত্মক অপব্যবহার। এর প্রত্যেকটি আবার একে অন্যের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কীয়।

একটা সময় ছিল যখন পাড়ার কোনো ছেলে অন্যায় কিছু করলে মহলস্নার মুরব্বিরা ধরে তাদের বিচার করতেন, এ জন্য অভিভাবকরাও তাদের ধন্যবাদ দিতেন। কিন্তু এখনো যুগের হাওয়ায় সেই রীতি পাল্টে উল্টে গেছে। এখন কেউ বিচার করা তো দূরে থাক, অভিভাবকদের কাছে নালিশ করলে তারা বিশ্বাসই করতে চান না। অপমানের ভয়ে এখন আর এসব নিয়ে কেউ ভাবেন না। আর তাই তো গলির মোড়ের দোকানে বসে স্বাধীনভাবে বিড়ি ফুঁকে এলাকা ধোঁয়াচ্ছন্ন করলেও কেউ দেখে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্কুলগামী মেয়েদের পথ আটকে শিস দিলে, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করলে, হাত বা ওড়না ধরে টানাটানি করলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। রাগে-অপমানে-ক্ষোভে-যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে কোমলমতি কিশোরীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার পর আমাদের সচেতনতার ভিত কেঁপে ওঠে, কিছুক্ষণের জন্য আমরা ভীষণভাবে প্রতিবাদী হয়ে উঠি। পরে আবার সব থেমে যায় অচেনা জুজুর ভয়ে।

সমাজ থেকে নৈতিক শিক্ষার মৃতু্য হয়েছে অনেক আগে। এখন আছে শুধু তার ভূত। যা ঘাড়ে চাপলে আমরা মাঝেমধ্যে ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করি। একটা সময় শুধু উচ্ছন্নে যাওয়ার ভয়ে উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের প্রেমের উপন্যাস বা গল্পের বই পড়তে দেয়া হতো না। বাংলা সাহিত্যের কালপুরুষ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নাকি সবার ভয়ে গোয়ালঘরে বসে সেসব বই পড়তেন। আর বর্তমান চিত্রটি দেখলে শরৎবাবু নিশ্চিত বলে ফেলতেন, এ সময় জন্মালে দেবদাসটা হয়তো আরো ভালোভাবে লিখতে পারতাম।

আমরা এখন সে সময় থেকে অনেক দূরে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, প্রযুক্তির আগ্রাসন এর কারণে এখনকার ছেলেমেয়েরা শৈশব থেকেই অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস শিখে ফেলে। প্রাইমারি শেষ করতে না করতেই প্রেম-ভালোবাসার মতো জটিল মানবিক বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করে দেয়। ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকতে থাকতেই খোঁজ করে সঙ্গীর, আর জীবনের যে সময়টা মন থাকে সবচেয়ে এলোমেলো, সেই কৈশোরে এসে তারা হয়ে যায় বাঁধনহারা। তখন অনেক কিশোরীর কাছে গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বখাটেদের কটাক্ষ শুনতে শুনতে হঠাৎ ভালো লেগে যায়। তখন তাদের অর্ধমগ্ন মনে হাজারো কৃষ্ণচূড়া ফোটায় প্রেমিকেরা। এক সময় মেয়েটির ঘোর কেটে গেলে সে সরে পড়তে চায়, তখনই নাছোড়বান্দা প্রেমিক হয়ে ওঠে বেপরোয়া। ফলাফল দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম।

মোবাইল ফোন, ডিশ, টিভি, ইন্টারনেট আমাদের ফেলে দিয়েছে জটিল এক আবর্তে। একদিকে এসব ছাড়া আমাদের জীবন যেমন অচল, অন্যদিকে এর ঋণাত্মক ব্যবহার ধ্বংস করে দিচ্ছে হাজারো ছেলেমেয়ের জীবনের সুন্দর ভবিষ্যৎ। মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধুর সঙ্গে আলাপন নষ্ট করছে সময়, অর্থ ও স্বাস্থ্যের। যার প্রভাব পড়ছে স্কুলের পরীক্ষায়। ইমেইল ও ফেসবুকে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ফেঁসে যাচ্ছে অনেক গোপনীয়তা। বন্ধুর সঙ্গে সামান্য মনকষাকষি হলেই মোবাইল, সিডি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে নিজেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি। যার প্রভাবে নষ্ট হচ্ছে আমাদের দেশ ও সংস্কৃতির মর্যাদা।

গণমাধ্যম, শিক্ষক ও দেশের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনৈতিক আশ্রয়ে যারা বখাটেপনা করে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে আইনের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই আরো তৎপর হতে হবে। রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্তকারীদের গ্রেপ্তার করে দ্রম্নত ও উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করলে এ ধরনের অন্যায় অনেকাংশ কমে যাবে। সর্বোপরি সমাজের সর্বস্তরের সবার সচেতনতার প্রতিটি হাতই পারে নৈতিক শিক্ষার ভীত পুনঃস্থাপন করে একটি সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দিতে।

শামীম আহমেদ ইভ

কাফরুল, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<56563 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1