বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণের পর শিশু হত্যা এই পাশবিকতার শেষ কোথায়?

নতুনধারা
  ০৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

'ধর্ষণ' এবং 'হত্যা' যেন আমাদের সমাজে মহামারীর মতোই জেঁকে বসেছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে ধর্ষণ এবং হত্যার মতো নৃশংস ও ঘৃণ্য অপরাধ। একটি ঘটনার রেশ কাটকে না কাটতেই আরেকটি ঘটনার জন্ম হচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় চোখ রাখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ শেষে কিংবা ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। ধর্ষণের ঘটনাগুলো শুধু ধর্ষণেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, কখনও কখনও মেরেও ফেলা হচ্ছে ধর্ষণের শিকারকে। শনিবার রাজধানীর ওয়ারীতে আটতলা একটি ভবনে সায়মা নামে সাত বছরের ফুলের মতো নিষ্পাপ একটি শিশুকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে পটুয়াখালীর গলাচিপা এবং গৌরনদীতে দুই মাদ্রাসাশিক্ষার্থী ধর্ষণ এবং রাজবাড়ীতে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। সাড়ে তিন বছরের শিশু থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গৃহবধূ, বৃদ্ধা কেউই বাদ যাচ্ছে না ধর্ষণের শিকার হওয়া থেকে। গত কয়েকদিনে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বিবরণ দিতে গেলে এই লেখায় সম্পাদকীয় মন্তব্য করার স্পেস থাকবে না।

বর্তমান কল্পনাতীত ধর্ষণ ও ধর্ষণপ্রবণতার বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে বড় ধরনের সামাজিক গবেষণার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ কেন এতটা বেপরোয়াভাবে যৌনতাতাড়িত হয়ে পড়ছে, কেনই বা ধর্ষণপ্রবণদের মধ্যে কাজ করছে না কোনো ধরনের ভয়ভীতি, এটা এখন এক বড় প্রশ্ন। ধর্ষকদের কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হচ্ছে। অথচ সেসব দৃষ্টান্ত কোনোই কাজে আসছে না। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণপ্রবণতা এক অপ্রতিরোধ্য মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে- যা শুধু আইন প্রয়োগ করেই দমানো যাবে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে এবং তাই সে মানতে চাইছে না কোনো কিছুই- আইন-আদালত, সামাজিক সম্মানবোধ, আত্মসম্ভ্রম। আমরা মনে করি, ধর্ষণ রোধে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি এই প্রবণতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। ধর্ষণপ্রবণতার পেছনে দেশের প্রচলিত রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থা কতটা দায়ী সেটাও অনুধাবন করার প্রয়োজন পড়েছে। আর্থিক দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে দেশ, এই দুর্নীতি হয়তো মানুষকে উৎসাহী করছে চারিত্রিক অন্যান্য স্খলনেও। অনেকেই বলছেন, সমাজটা যেহেতু ভোগবাদী হয়ে পড়েছে, তাই মানুষ নানা ধরনের ভোগে প্রলুব্ধ হতেই পারে। এই প্রলুব্ধতার পেছনে কোনো ধরনের নৈতিকতা কাজ করছে না।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ এক জনবহুল রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের কোথায় কী ঘটছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে তার সব খোঁজ রাখা সম্ভব নয়। জাতিকে নৈতিকতাসমৃদ্ধ করে তুলতে না পারলে ধর্ষণের মতো অপরাধ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। আমরা জোর দিয়েই বলতে চাই, দেশের অপরাধ বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সমাজবিশারদ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব- সবাইকে একত্র হয়ে ধর্ষণপ্রবণতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সে মোতাবেক এই রোগ নিরাময়ের উপায় বের করতে সচেষ্ট হতে হবে। ধর্ষণ বর্তমানে মহামারীর আকার ধারণ করেছে। অপেক্ষার সময় শেষ হয়ে গেছে বলা যায়। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার বেশিরভাগ মানুষই অসহায় ও দরিদ্র বিধায় অপরাধীরা ক্ষমতাবান হলে মামলার গতিমুখ থুবড়ে পড়ে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যথাসময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এসব ঘটনা দ্রম্নত আমলে নিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে দ্রম্নত ও সঠিকভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে আদালতে সোপর্দ এবং মামলার দ্রম্নত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।

আমরা মনে করি, ধর্ষণকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। ধর্ষণ শেষে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে হত্যা করা হচ্ছে নির্মমভাবে। ওয়ারীর ঘটনাটি বিশ্লেষণসাপেক্ষে পুলিশের ধারণা, ধর্ষণ শেষে ধর্ষণকারী তার পরিচয় আড়াল করতেই শিশুটিকে হত্যা করেছে। শিশুটির সুরতহাল রিপোর্টেও শরীরের গোপনাঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আমরা চাইব, যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির নিশ্চিত হবে। এর পাশাপাশি সর্বত্র স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য মহামারীর পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার ও আদালত নারীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<57157 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1