বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

বিশ্বজুড়ে অসহনীয় তাপমাত্রা আমাদের কী সংকেত দিচ্ছে?

নতুনধারা
  ০৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

চলছে গ্রীষ্মকাল। সারা দেশে উচ্চ তাপমাত্রা আর তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। অসহনীয় গরম শুধু এশিয়া বা মধ্যে প্রাচ্যের দেশগুলোতে অনুভূত হচ্ছে না। হিট ওয়েভ হচ্ছে ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলোতেও। কিছুদিন আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ফ্রান্সে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ফ্রান্স সরকার গাড়ি চলাচলেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে বায়ুদূষণের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যশোরে। ঢাকায় পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। আর তা ছাড়িয়ে গেছে ৪০ ডিগ্রি। তীব্র দাবদাহে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ হাঁসফাঁস করছে। ক্রমবর্ধমান দাবদাহ জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি সংকেত দিচ্ছে।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির জন্য আমরা মনুষ্যকুলই দায়ী। আমাদের এই সুন্দর বসুন্ধরাকে আমরাই ঠেলে দিচ্ছি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দিনদিন করছি বসবাসের অযোগ্য। অস্ত্র আর পারমাণবিক পরীক্ষার নামে কাঁপিয়ে তুলছি ভূমন্ডল। গাছপালা, পাহাড়-জঙ্গল কেটে মরুভূমি বানিয়ে ফেলছি। গড়ে তুলছি বিশালকায় শহর-বন্দর। কিন্তু ভাবছিনা একটু সজীব নির্মল বাতাসের প্রয়োজনীয়তার কথা।

গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাব, ওজোনস্তর ক্ষয় হয়ে যাওয়া, অরণ্যবিনাশ প্রভৃতি কারণে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমন্ডলের এ উষ্ণায়নকেই গেস্নাবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্বে উষ্ণায়ন বলা হয়। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আশির দশক থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রতিবছর গড়ে ০.১ বৃদ্ধি পেয়ছে। এর কারণ হচ্ছে কুমেরু অঞ্চলে বরফ গলে যাচ্ছে। সুমেরু অঞ্চলে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১৫৩ সেন্টিমিটার বেড়ে যাবে। আর ২১০০ সালে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ৪৬০ সেন্টিমিটার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্থল ও জলজ জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে যাবে। লাখ লাখ মানুষ পরিবেশ শরণার্থী হবে। বাংলাদেশের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হবে। পস্নাবিত হয়ে যেতে পারে প্রায় ১২০ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল। দেখা দিতে পারে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রলয়ঙ্করী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সুন্দরবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পস্নাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। যার ফলে প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

জলবায়ু পরিবর্তনরোধকল্পে বিশ্ব নেতারা বারবার বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা একটি চুক্তি করতে সম্মত হয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতা ২০১৭ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় জলবায়ু সম্মেলন। কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলন-২০১৭ তে হওয়া চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা পাক শিল্পপর্যায়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার প্রস্তাবকে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং আগামী তিন বছর অনুন্নয়নশীল দেশগুলোকে ৫০ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রম্নতি করা হয়। তা ছাড়া চুক্তিতে দরিদ্র দেশগুলোকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদানের রূপরেখা প্রণয়ন এবং শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু চুক্তিতে ২০৫০ সাল নাগাদ শিল্পোন্নত দেশগুলো কর্তৃক কার্বন নিঃসরণের কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি।

বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ সীমিত রাখা না গেলে তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে হবে। তা ছাড়া বিশ্বব্যাপী অরণ্য উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে গাছপালা রোপণ করতে হবে। বৃক্ষরোপণ পরিবেশকে কার্বনমুক্ত করার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবেও কাজ করে। তাই আমাদের প্রত্যকেরই উচিত একটি করে গাছ লাগিয়ে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে ধরিত্রীকে রক্ষা করা।

আব্দুলস্নাহ আল রাশেদ

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<57159 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1