বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এরশাদের প্রয়াণ

একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি
নতুনধারা
  ১৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

সাবেক রাষ্ট্রপতি, বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ রোববার সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃতু্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ জুন সকালে তিনি অসুস্থতা বোধ করলে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রক্তে হিমোগেস্নাবিন-স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ এবং কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহারের দিনহাটায়। পরবর্তী সময়ে তার পরিবার রংপুরে চলে আসে। বাবা মকবুল হোসেন ও মা মজিদা খাতুনের চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে এরশাদ ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৫২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন এরশাদ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে আসার পর সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগ দেন। তিনি ১৯৭৮ সালের ১ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসেন এরশাদ। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ৯ বছর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। এরশাদের মৃতু্যতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জাতীয় পার্টির নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জীবদ্দশায় নানানভাবেই আলোচিত-সমালোচিত হন এরশাদ। সাবেক এ রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও রয়েছে নানান রসালো কাহিনী। দুর্নীতির পাশাপাশি অনৈতিক নারীসঙ্গেরও অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। বিদিশা নামের একজন নারীকে গোপনে বিবাহ এবং এরিক নামে পুত্রসন্তানের জনক তিনি- এমন তথ্য সামনে আসায় তিনি যেমন আলোচিত হন, তেমনি বিশ্ববেহায়া, বিশ্বপ্রেমিক হিসেবেও তাকে চিহ্নিত করেন দেশের মানুষ। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি কবিতা লিখতেন। অন্য কেউ তার নামে কবিতা লিখে দিতেন- এমন কথাও প্রচারিত। সামরিক আইন জারি করে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক আইন প্রশাসক হয়ে দেশ শাসন করায় স্বৈরাচারী সরকার হিসেবে চিহ্নিত হন দেশের জনগণের কাছে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একপক্ষীয় পাতানো নির্বাচনে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ। ৮৮ সালে ওই সংসদ ভেঙে দিয়ে আবারও নির্বাচন দেন এরশাদ। ওই নির্বাচনে অন্য কোনো দল অংশ নেয়নি। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে এরশাদের বিরুদ্ধে। ৯ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এরশাদ। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি ক্ষমতা গেলে গ্রেপ্তার করা হয় এরশাদকে। ছয় বছর কারান্তরীণ থাকার পর ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে জামিনে মুক্ত হন এরশাদ। দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকটি মামলায় তার সাজাও হয়। এখনো কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরই মধ্যদিয়ে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন, যার ধারাবাহিকতায় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবেই মৃতু্যবরণ করেন।

এরশাদের জাতীয় পার্টি তিনটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে কয়েকটি আসনও পায়। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থনে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের হয়ে লড়ে সংসদে যায় জাতীয় পার্টি। একই পথে হাঁটে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও। একদলীয় নির্বাচনে সংসদে বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি। সবশেষে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করলেও সংসদে বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি। আর বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বলা যেতে পারে, এক সময়ের সেনা ও রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন, তার মৃতু্যর মধ্যদিয়েই সেই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<58384 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1