শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরী ও নারীর নিরাপত্তাহীনতা

নতুনধারা
  ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

কী এক সমাজ আমরা বাস করছি। বিকৃতির শিকারে পরিণত হচ্ছে কিশোরীরা। একদল মানসিক বিকারগ্রস্ত নরপশু ধর্ষণ ও হত্যা করছে কিশোরীদের। যে বয়সে খেলাধুলা ও লেখাপড়ার মাধ্যমে মানসিক বিকাশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা তাদের সে সময় তারা এক দুর্ভাবনা সঙ্গী করে বেড়ে উঠছে। নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন অভিভাবককূল। এক সময় যৌথ পরিবার ছিল একে অন্যের সুখ-দুঃখে সমব্যথী। এখন একক ক্ষুদ্র পরিবার শহরে-গ্রামে, ফ্ল্যাটে কিংবা বাড়িতে বাম করে। ভিন্ন ভিন্ন ফ্ল্যাটে বহু পরিবার এখন বাস করে। গ্রামে, মহলস্নায় যে পরিবার আগে বাস করত, তাদের সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। এখন কেউ কারও খবর রাখে না। প্রত্যেকটি পরিবার পরশ্রীকাতর। একজন মানুষের বেড়ে ওঠার মুখ্য ভূমিকা পালন করে সমাজ ও পরিবার। সমাজে সংগঠন, সমষ্টির বন্ধন নৈতিক ভিত্তিভূমি মজবুত করে। এখন দেখা যাচ্ছে মানুষ অর্থ ও প্রতিপত্তি বিস্তারের দিকে ছুটে যাচ্ছে। অর্থ উপার্জনের অন্ধ প্রতিযোগিতা চলছে। ভালো কাজ করার মানসিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য ভাই ভাইয়ের বুকে ছুরি বসাচ্ছে। বিকৃত রুচির একদল মানুষ যৌন লালসা চরিতার্থ মানুষ যৌন লালসা চরিতার্থ করতে কিশোরীদের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করছে। ঢাকার ওয়ারিতে সায়মাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। কিশোরীটি ফ্ল্যাটের অন্য বাসায় এক কিশোরীর সঙ্গে খেলতে গিয়েছিল। এক নরপশু তাকে ছাদ দেখানোর কথা বলে নিরিবিলি একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে তাকে হত্যা করে পুঁতে রাখা হয়। মাদ্রাসার শিক্ষক ধর্মের ভয় দেখিয়ে কিশোরীদের সম্ভ্রমহানি করেছে এমন খবর পত্রপত্রিকায় দেখতে পাওয়া যায়। বাস, ট্রেনে ধর্ষণ করে হত্যার খবর আগে আমরা পড়েছি। কিশোরী থেকে নারী কেউ আর নিরাপদ নয়। যে সমাজে পচন রোধ করা যায় না। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক যৌন লালসার জন্য তার হেফাজতে থাকা কিশোরীর সম্ভ্রমহানি করে ঘৃণার পাত্র হয়ে উঠলে আমরা কোথায় যাবো। হতভাগী নুসরাতকে পুড়িয়ে মারে যারা তাদের নির্দেশ দাতাও একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।

এক সংবাদ ভাষ্য থেকে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২০৩ জন কিশোরীকে হত্যা করা হয়েছে। ৬৩০টি ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪৩২টি। নারী ও কিশোরীদের হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। গৃহবধূদের ধর্ষণ ও হত্যার খবর পাশাপাশি প্রকাশিত হচ্ছে।

অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, কোথাও কোথাও উচ্চশিক্ষিতরা ধর্ষণ করছে কিশোরী ও নারীদের। এসব বিকৃত রুচির ব্যক্তি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকে। ধর্ষক ধরা পড়লে ও বিচার কাজে দীর্ঘসূত্রতা ও সাক্ষী না থাকায় অনেক মামলা মাঝ পথে থেমে যায়। অপরাধী অল্প কিছু দিন জেল ভোগ করে বেরিয়ে যায়।

অপরাধী সমাজ অভ্যন্তরে বাস করে। পরিবার ও সমাজের উদাসীনতায় তারা পার পেয়ে যায়। ধর্ষণের মামলা গ্রাম্য মাতব্বর ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় অল্প কিছু অর্থে রফা হয়। দন্ডবিধির ৫০৯ ধারায় উলেস্নখ আছে কোনো নারীর প্রতি অঙ্গভঙ্গি, মন্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধের সামিল। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে যৌন নিপীড়ন প্রমাণিত হলে ধর্ষকের ১০ বছরের কারাদন্ড হওয়ার বিধান আছে। যৌন নিপীড়নের দায়ে কজনের এ শাস্তি হয়েছে? কিশোরীদের আত্মরক্ষার জন্য জুডো, কারাতি ও আত্মরক্ষার বিশেষ কৌশলের আয়ত্ত আনার বিষয়টি শুরু করা এখন প্রয়োজন। বিশেষ করে সব কিছু পাশ কাটিয়ে যাওয়া আমাদের স্বভাবগত প্রবণতা। নারী, শিশু কিশোর, মানবাধিকার সংগঠনগুলো মানববন্ধন ও বিভিন্ন র্কর্মসূচিতে অংশ নেয় হত্যা ও ধর্ষণ ঘটনার পরপর। আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়। এসব তৎপরতা পর্যাপ্ত নয়। কিশোরী ও নারীর সম্ভ্রমহানি ও হত্যার ঘটনার বিপুল জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন। অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনের পথটা বন্ধ করা প্রয়োজন। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক জাগরণ ঘটাতে হবে সমাজে। পরিবার হোক সম্মিলিত কর্ম প্রয়াসের মিলনকেন্দ্র। কিশোর ও নারীর নিরাপত্তা দিতে হবে সবাইকে।

সাইফুজ্জামান

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59136 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1