বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছেই

মুক্তির কি কোনো উপায় নেই
নতুনধারা
  ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

মাঝেমধ্যেই গণপরিবহনের নৈরাজ্যের বিষয়টি সামনে আসে। তখন সরকার তথা পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেন, সংকট নিরসনে প্রতিশ্রম্নতিও দেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কিছুদিন পরই আবার সব কিছু আগের নিয়মে ফিরে আসে। সম্প্রতি আবারও গণপরিবহনে নৈরাজ্যের বিষয়টি গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, কোটি মানুষের শহর মেগাসিটি ঢাকা। এখানে একের পর এক সমস্যা লেগেই থাকে। আর গণপরিবহনের নৈরাজ্য নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যই শেষ নয়, অসহনীয় যানজট আর যাত্রী ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী। চলছে সিটিং সার্ভিস নিয়েও চিটিংবাজি। অন্যদিকে এসব নৈরাজ্যের বিষয়ে সাধারণ মানুষ কোথায় অভিযোগ করবেন, সেটা কারও জানা নেই। আর অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাওয়া নিয়ে রয়েছে আস্থার অভাব। এসব দেখভালের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমন্বয়হীনতার বিষয়টি সামনে এসেছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বলছে, তারা শুধু অভিভাবক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। অভিভাবক সংস্থা হিসেবে সব বিষয় মনিটরিং করবে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে নৈরাজ্য বন্ধ করা তাদের দায়িত্ব নয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বলছে, গণপরিবহন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরাসরি মন্ত্রণালয়ের নয় বরং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএরই। কিন্তু সেই বিআরটিএ-ই বা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। একটি দেশের গণপরিবহন খাত এমন নৈরাজ্যের ভেতর দিয়ে চলতে পারে কিনা এমন প্রশ্নও তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পরিবহন মালিকরা অতি মুনাফার লোভে নিজেরাই সিটিং সার্ভিস চালু করেছে। লোকাল, সিটিং ও গেটলক সার্ভিসের নামে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য চালাচ্ছে মালিক-শ্রমিকরা। অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ঢাকা শহরের পুরো পরিবহনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। পরিবহন সেক্টরে ভয়াবহ সিন্ডিকেট থাকায় সরকারও সেখানে অসহায়। জানা যায়, বিআরটিএর আইনে 'সিটিং সার্ভিস' বলে কিছু নেই। তাহলে প্রশ্ন, অর্ধশতাধিক যানবাহন এই সাইনবোর্ড ও ব্যানার বডিতে ধারণ করে এতদিন ধরে চলছে কেমন করে? এদের শক্তি ও সাহসের উৎস কোথায়? এই সিন্ডিকেট কি রাষ্ট্রের চেয়েও ক্ষমতাশালী?

রাজধানীর সবকটি রুটে ভাড়া নৈরাজ্যের বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকেই আলোচিত। সরকার তথা এ খাত সংশ্লিষ্টরা সবাই বিষয়টি অবগত। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে গণপরিবহনের নৈরাজ্য বন্ধে কঠোর হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হলেও সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানা যায় না। তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার মতো শহরের গণপরিবহনে শৃঙ্খলার জন্য সমন্বিত নেয়া জরুরি। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীন থাকলে নৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব। আর যাত্রীরা বলছেন, পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। শুধু আইন নয়, আইনের বাস্তব প্রয়োগ করে- মাঠপর্যায়ে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করতে হবে। তাহলে নৈরাজ্য অনেকটা কমে আসবে। কিন্তু সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেয়ায় দিন দিন পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠছে।

গণপরিবহনে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং রেষারেষির কারণে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। আবার অপারেটরের সক্ষমতা আছে কিনা, প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা না দেখেই রুট পারমিট দিয়ে দেয়া হয়। অনেকেই মনে করেন, সিস্টেমে গলদ থাকার কারণেই এমনটি ঘটছে। সিস্টেমই বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টির পথকে প্রসারিত করছে। প্রতি বছরই এ নিয়ে লেখালেখি হয় গণমাধ্যমে। সংশ্লিষ্টরা যে কোনো মূল্যে গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রম্নতিও দিয়েছেন ইতিপূর্বে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। এ দায় কে নেবে?

সর্বোপরি বলতে চাই, এটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আমাদের গণপরিবহন কখনোই জনবান্ধব ছিল না, যেনতেনভাবে মালিক-শ্রমিকদের আয় বাড়ানোই এ সেক্টরের মূল উদ্দেশ্য। আর এর খেসারত প্রতিনিয়ত দিতে হচ্ছে জনগণকে। আমরা মনে করি, যে কোনো মূল্যে গণপরিবহনকে যাত্রীবান্ধব করে তোলার উপায় খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি। পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। যাত্রী হয়রানি বন্ধে সরকার দ্রম্নত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এটাই কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59138 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1