শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার অগ্রগতির কী করুণ পরিণতি!

শিক্ষা তবে কী শেখাচ্ছে? না শিক্ষার বিরোধী আমি নই বরং তার আরও আরও প্রসার দাবি করি। কিন্তু আজ গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে, কী শিক্ষায় আমরা ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলছি যে, শিক্ষিতরাই সমাজে দুর্নীতিবাজ ও অপরাধগুলোর সংগঠকে পরিণত হয়ে আমাদের রাষ্ট্রটিকে দিন দিন যেন অকার্যকর করে তুলছে এবং একাত্তরের বীর শহীদদের স্বপ্নকে ব্যর্থতায় পরিণত করছে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার কালবিলম্বের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।
রণেশ মৈত্র
  ০৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

বয়সটা আমার ৮৮ ছুঁই ছুঁই। বাংলাদেশের নয় শুধু, সমগ্র পৃথিবীরই সকল মহাদেশের সকল দেশেরই সর্বোচ্চ গড় আয়ু যা তা আমার বর্তমান বয়সের অনেক নিচে। সে অর্থে যারা সর্বাপেক্ষা বেশিদিন বেঁচে ছিলেন বা সর্বোচ্চ বেশিদিন বেঁচে আছেন সমগ্র পৃথিবীতে তাদের কাছাকাছি চলে এসেছি প্রায়। এটি আমার এক সৌভাগ্য এবং অতিশয় আনন্দের ব্যাপার বটে। শুধু আমার নিজের নয়, আমার পরিবারের সব সদস্য, সব আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত-অপরিচিত সব শুভাকাঙ্ক্ষীর জন্যই তা আনন্দের আরও বেশি আনন্দের এ কারণে যে, আমি এখনো লাঠির ভর ছাড়াই হাঁটাচলা করতে পারি, বাজার-ঘাট করতে পারি, মানুষের জন্য কথাবার্তা, আদান-প্রদান করতে পারি, মঞ্চে দাঁড়িয়ে অল্প-স্বল্প বক্তৃতাও করতে পারি আর পারি ঘণ্টার পর ঘণ্টাব্যাপী লিখতে। যারা আমার বয়সী পাবনাতে আর যারা বেঁচে আছেন তারা অনেকে পারেন না। সেই ১৯৩৩ সালে ইংরেজ আমলে জন্ম। সেই সূত্রে অর্থাৎ জন্মসূত্রে আমি অবিভক্ত ভারতবর্ষের নাগরিক। অতঃপর এলো পাকিস্তান। যে মাটিতে জন্মেছিলাম তা পাকিস্তানের ভাগে পড়ায় জন্মসূত্রে আপনা-আপনি পাকিস্তানের নাগরিকও। ১৯৭১-এ পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশেরও জন্মসূত্রে নাগরিক বনে গেলাম দুই দফায় নাগরিকত্ব ত্যাগ বা গ্রহণের জন্য কারও কাছে কোনো দরখাস্ত করতে হয়নি।

মোদ্দা কথা- এই আটটি দশক ধরে তিন তিনটি দেশ, তিনটি দেশের সংস্কৃতি সভ্যতা, শিক্ষা-দীক্ষা, মানুষের আচার-আচরণ। সমাজ ও অর্থনীতিতে ঘটে যাওয়া সব পরিবর্তনকে নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ ঘটেছে। আর দেখার অভিজ্ঞতাগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করাই বর্তমান নিবন্ধের লক্ষ্য।

শৈশবে স্পষ্ট না বুঝতে পারলেও আমাদের গ্রাম ভুলবাড়ীয়া (পাবনা জেলার তৎকালীন সাঁথিয়া থানাধীন) গ্রামের সরকারি প্রাইমারি স্কুল ব্যতিরেকে ৩-৪ বর্গমাইল এলাকার কোনো গ্রামেই কোনো প্রাইমারি স্কুলের অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। তাই আশপাশের সব গ্রাম থেকেই শিক্ষার্থী শিশুরা (তখন প্রাইমারি স্কুলগুলোতে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো) ভুলবাড়ীয়ার প্রাইমারি স্কুলেই পড়তে আসত আশপাশ গ্রামগুলো থেকে পড়তে আশা শিশুদের সংখ্যাও বেশি ছিল না। শিশু, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি মিলে সাকুল্যে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ ছেলেমেয়েকে। কিন্তু বলা হতো ভুলবাড়ীয়া প্রাইমারি স্কুলেই গোটা থানার মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে।

কিন্তু স্কুলটিতে শিক্ষক ছিলেন মাত্র দুজন। পাঁচটি ক্লাসে তারাই পড়াতেন। কারও অসুখ-বিসুখ হলে একজন সুস্থ শিক্ষকই সব ক্লাসে পড়াতেন। অসুস্থ শিক্ষকের অনুপস্থিতির সুযোগে তারা ক্লাসগুলোকে ছুটি দেয়ার রেওয়াজ ছিল না। কোনো শিক্ষকই না পড়ানোর কোনো অজুহাত একদিনের জন্যও খুঁজতেন না। তারা ভাবতেন, শিক্ষাদানই তাদের ব্রত, ধ্যান, জ্ঞান। তাই তাতে বিরতির সুযোগ নেই।

তা হলে তখনকার মারাত্মকভাবে শিক্ষার সুযোগ নিয়ে যে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষকতাকে তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিতেন শিক্ষক স্বল্পতর সুবাদে ফাঁকি দেয়ার অবাধ এবং অজস্র সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা গ্রহণ করার বিন্দুমাত্র মানসিকতা তাদের দেখিনি। আবার পাঠদানের মানও ছিল উচ্চ এবং নিষ্ঠার কারণেই তারা তা করতে পারতেন- করতেন গভীর মনোযোগ ও আন্তরিকতার সঙ্গে। পাঠ্যবইগুলোর মানও ছিল উঁচু। সরকার তখন বিনামূল্যে বই সরবরাহ করতেন। কিন্তু কম করে হলেও অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের বই, খাতা-পেন্সিলসহ তাবৎ উপকরণ কিনে দিতেন সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া।

এত কিছু সত্ত্বেও কোনো কোচিং সেন্টার কোনো পর্যায়েই তখন দেখিনি। অর্ধ-বার্ষিক বার্ষিক এবং বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষার তিন মাস আগে থেকেই শিক্ষকরা স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীকেই স্কুলের অভ্যন্তরেই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ওই স্কুল ঘরেই কোচিং করাতেন। তার জন্য বাড়তি কোনো টাকা অভিভাবকদের গুনতে হতো না। আবার অতিশয় ভালো ছাত্রছাত্রী হলে তাদের নিজ বাড়িতে বা ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে কিছুকাল পড়িয়ে আসতেন অবসর মুহূর্তে। তার জন্য বিত্তবান অভিভাবকরাই শুধু টাকা দিতেন মাসে মাসে অন্যরা নন।

আর এটা শুধু প্রাথমিকপর্যায়ের কথা নয়, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করত। লেখাপড়ার মান ছিল উঁচু। ক্লাসে শিক্ষকরা প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে সংশ্লিষ্ট পুরোপুরি বুঝিয়ে পরবর্তী দিনের জন্য টাস্ক দিয়ে (আমরা যাকে বলতাম হোম টাস্ক) তবে ক্লাস ছাড়তেন। শিক্ষকদের সামাজিক সম্মানও ছিল লক্ষণীয়। যেখানেই যেতেন ছাত্রছাত্রী অভিভাবক নির্বিশেষে শিক্ষকদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম বা কদমবুছি করতেন- বাড়িতে গেলে চেয়ার জলখাবার ছিল নির্ধারিত।

জনপ্রতিনিধি, সরকারি উচ্চ ও নিম্ন কর্মকর্তারাও শিক্ষকদের প্রতি অনুরূপ সম্মান প্রদর্শন করতেন। অর্থাৎ সমাজে সর্বোচ্চ সম্মান শিক্ষকরাই পেতেন।

কিন্তু এখন? অনেক শিক্ষককেই দেখেছি জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আগে তারা উঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষককে সমাদর জানিয়ে সামনের চেয়ারে বসতে বলতেন। তিনি বসতে তারা নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতেন।

শিক্ষকদের বড় অংশই সে সম্মান আর পান না বলে অভিযোগ জানান। বলতে শুনেছি শিক্ষকের মর্যাদা না দেয়ার সমাজটা দিন দিন গোলস্নায় যাচ্ছে।

তাদের এ অভিযোগ মেনে নিয়েই পাল্টা তাদেরই অনেক কথা জিজ্ঞেস করতে চাই সম্ভবত তারাও প্রশ্নগুলোর কোনো সদুত্তর দিতে পারবেন না। বিষয়টি দুঃখজনক হলেও সত্য। তবে এ আলোচনায় পরে আসছি।

বস্তুতই, সবকিছু জীবনভর দেখেশুনে আজ বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় না যে আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ 'সব সম্ভবের দেশ'-এ পরিণতও হয়েছে। আগের যুগেও কখনো যখন এই কথা শুনেছি তবে একটি প্রবাদবাক্য হিসেবে। কিন্তু তা ছিল কথার কথা মাত্র।

তখন শিক্ষকদের বেতন ছিল অত্যন্ত নগণ্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় তা ছিল নামমাত্র। কিন্তু তবু তারা সবাই পড়াতেন, গভীর আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়েই ক্লাসরুমেই পাঠদান করতেন-দেশে একটিও কোচিং সেন্টার ছিল না- কোনো ছাত্রছাত্রীই বা কোনো অভিভাবকই তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন না- শিক্ষকদের তো প্রশ্ন ওঠে না।

নৈতিকতার মান কত উঁচুতে থাকলে তা সম্ভব হয় আজ তা ভাবতেও বিস্ময় লাগে। নৈতিকতার অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নারীর সম্ভ্রম রক্ষার ক্ষেত্রে। তখনকার দিনে ছেলেমেয়েদের পৃথক পৃথক স্কুল-কলেজ যেমন থাকত তেমনই সেগুলোতে সহশিক্ষার ব্যবস্থাও থাকত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্ক ছিল ভাই-বোনের মতো। দু'একটি ক্ষেত্রে যে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠত না তা নয়; কিন্তু সে সম্পর্ক যৌন সম্পর্ক পর্যন্ত গড়াতো না। আজ যৌনতা একটি ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ইদানীংকালের ঘটনাগুলো সর্বাধিক ভয়াবহ। শিক্ষকদের একটা বড় অংশই তাদের কন্যাতুল্য ছাত্রীদের সঙ্গে নানাভাবে, নানা কৌশলে কেউ বা নিশ্চিতভাবে পাশ করিয়ে দেয়ার, কেউ বা বিয়ের আবার কেউ বা জোর করে ধর্ষণ করে তার ছবি নিয়ে ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে। তবে রোগ প্রায় মহামারীরূপে আবির্ভূত হলেও তা সম্ভবত শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকার ক্ষেত্রে সত্য নয় আজও। কিন্তু আজ যদি ৫ ভাগ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তা হলেও তা গভীর উদ্বেগের কারণ শিক্ষকদের সংখ্যাই তো লক্ষাধিক সব ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা লাখ লাখ। মাদ্রাসাগুলো আরও ভয়াবহ। বোরকা হেজাবেও ঠেকে না বরং তাকে আবরণ হিসেবে দেখিয়ে কুকর্ম আরও বেশি করা হয় বলে দিব্যি অভিযোগ। দ্রম্নতই সমাজ একে প্রতিরোধে এগিয়ে না এলে সমাজ সভ্যতা ধ্বংসের দিকে নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে যাবে। আইন-আদালত এ ব্যাপারে সর্বাধিক এগিয়ে না এলে সমাজ ও স্থবিরতামুক্ত হবে এমনটা অন্তঃ এ মুহূর্তে ভাবা যাচ্ছে না।

বেতন বেড়েছে সবারই। কি সরকারি কি বেসরকারি। কিন্তু ঘুষ-দুর্নীতির ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। সামান্য একটি পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগেও লাখ লাখ টাকা ঘুষের কাহিনী সবারই জানা। থানার মামলা নিতে টাকা, চার্জশিট দিতে টাকা, না দিতেও টাকা। কী ভয়াবহ ব্যাপার। বিচারিক দীর্ঘসূত্রতাও আর এক দুর্নীতি। আর বিচার বিলম্বিত হওয়ার ফলে যৌনসংক্রান্তসহ সব অপরাধই বিদু্যৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ঘুষ-দুর্নীতি-যৌনতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে যেন। আর এই ঘুষ নিম্নপর্যায়ে থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত একটা চেইয়ের মতো প্রসারিত হয়েছে যেন।

ইদানীংকালে ব্যাংক খাতের দুর্নীতিও ভয়াবহ রূপ পেয়েছে। হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সমাজের ধনিকগোষ্ঠী সেই টাকা দিব্যি বিদেশি ব্যাংকে জমা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে ফতুর করে দিচ্ছে। এরা সবাই সমাজে সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ও সম্মানিত। চিহ্নিত হলেও এই ঋণখেলাপি নামক অর্থনীতি ধ্বংসকারী অপরাধীরা যেন আইন-আদলাতের ঊর্ধ্বে। রাষ্ট্রীয় মদদেরও অভাব নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের সুরক্ষা দিয়ে চলেছে-সামান্য কিছু জমা দিয়ে বৃহদাকার লোন যাতে তারা পান তার জন্য তারা আইন প্রণয়ন করে ছেড়েছেন।

কিন্তু গরিব কৃষকদের হাতে হাতকড়া সামান্য লোন নিয়ে যৌক্তিক কারণে তা পরিশোধে সক্ষম না হওয়ার কারণে। শ্রমিকদের জন্য লোনের কোনো ব্যবস্াই নেই অথচ এই কৃষক শ্রমিকরাই জমিতে ও কলকারখানার ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে বহুমাত্রিক।

উৎপাদন করে দেশকে বাঁচিয়ে রাখছেন, যেটুকু অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হচ্ছে তাও তাদেরই কল্যাণে। অথচ সরকার ক্রেডিট নিচ্ছে ওই অর্থনৈতিক উন্নয়নের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে। এ ক্রেডিট তাদের নয়- ক্রেডিটের পুরোটাই হতদরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকদের প্রাপ্য।

বিশাল বিশাল বহুতল বিশিষ্ট দালান-কোঠা গড়ে তুলছেন মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণি তারাই গড়ে তোলেন চোখ ধাঁধানো ব্যবসা-বিপণি। তা দেখেও ক্রেডিটটা সরকার নিচ্ছে উন্নয়নের জোয়ার দেখছে তাতেও।

আর শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ যে দারিদ্র্যে ভুগছেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য যে আকাশচুম্বি হয়ে উঠে সব নৈতিকতার অবসান ঘটাচ্ছে তার কোনো উলেস্নখ পাওয়া যাবে না কোথাও। যাদের কারণে এমনটি ঘটছে তারা কিন্তু 'উচ্চ শিক্ষিত' ও 'সম্মানিত' এবং সে কারণে আইনের হাত তাদের প্রতি সম্প্রসারিত হয় না। সংবিধান বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের নিশ্চয়তা দিলেও রাষ্ট্র বিপরীতমুখী আইন আদলতও তাই।

বিশাল বিশাল বাজেট দেখে কার না চোখ ধাঁধায়। কিন্তু লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা অন্ধ। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে সাম্প্রতিক 'বালিশ কান্ড' যেটুকু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়; কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ার সব ক্রেডিট যে পত্রপত্রিকার সাংবাদিকদেরই প্রাপ্য সেদিক রাষ্ট্রের বা সমাজের খেয়াল নেই।

নিবন্ধটির ব্যাপ্তি আর বাড়িয়ে লাভ নেই। আজকের শিক্ষিত সমাজের অপরাধের ব্যাপকতা যে ভয়াবহ এবং তার জন্য দায়ী যে তথাকথিত সমাজ তার প্রতিই জোর দিতে চাই। মন্ত্রীরা শিক্ষিত, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষিত, শিক্ষক-শিক্ষিরা শিক্ষিত, ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ যারা দেন তারা শিক্ষিত- যারা নেন তারাও শিক্ষিত। তবুও কেন অপরাধের মাত্রা ক্রমবর্ধমান?

শিক্ষা তবে কী শেখাচ্ছে? না শিক্ষার বিরোধী আমি নই বরং তার আরও আরও প্রসার দাবি করি। কিন্তু আজ গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে, কী শিক্ষায় আমরা ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলছি যে শিক্ষিতরাই সমাজে দুর্নীতিবাজ ও অপরাধগুলোর সংগঠকে পরিণত হয়ে আমাদের রাষ্ট্রটিকে দিন দিন যেন অকার্যকর করে তুলছে এবং একাত্তরের বীর শহীদদের স্বপ্নকে ব্যর্থতায় পরিণত করছে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার কালবিলম্বের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।

রণেশ মৈত্র: সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<60931 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1