বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় শোক দিবস

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে
নতুনধারা
  ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত বর্বরোচিত অধ্যায়। আমরা হারিয়েছি বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের মহাকাব্যিক বীর নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। হারিয়েছি তার দুই কন্যা ব্যতিরেকে পুরো পরিবারকে। যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট খুনিচক্র কেবল ব্যক্তি মুজিবকেই হত্যা করেনি। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির ওপর আঘাত হানে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে পিছিয়ে নিয়ে যায়। পঁচাত্তরের ক্ষমতাসীন সামরিক-বেসামরিক এলিটচক্র বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত অবস্থান ও লক্ষ্য থেকে সরিয়ে এনে একটি ধর্ম-সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে। রাষ্ট্রের ওপর জনগণের মালিকানা বেদখল করে এবং সংবিধানের কর্তৃত্ব ধ্বংস করে। দেশব্যাপী হত্যা, সন্ত্রাস, জোর-জবরদস্তি চলে। পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল তাহেরের হত্যাকান্ড, বিচার প্রহসনের নামে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও জোয়ানকে হত্যা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিবেচনায় আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ইত্যাদি এর নজির হয়ে ওঠে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি। উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদকে অর্থাৎ '৭১-এর সশস্ত্র আলবদর, আল শামস, রাজাকারদের রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাজনীতিতে যেমন দক্ষিণপন্থী ধারায় বিএনপি তথা জাতীয় পার্টি গড়ে ওঠে, তেমনি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সমাজ গঠনের মধ্য যে পরিবর্তনগুলো সাধিত হয়েছিল পূর্বোক্ত রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো ছিল তারই প্রতিফলন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর খুনিরাও প্রকাশ্যে পার্টির নামে সংগঠন গড়ে তুলে রাজনীতির অঙ্গ সক্রিয় হতে চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রধানত সামরিক শাসনের ছায়াতলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের স্স্নোগানের আড়ালে চরম দক্ষিণপন্থিসহ প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো সংগঠিত শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হয় শক্ত প্রতিরোধ। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। একদিকে ধর্মীয় পরিচয়ের ওপর জোর দিয়ে, এমনকি একপর্যায়ে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করে তারা যেমন নিজেদের প্রভাব দৃঢ়মূল করতে চেয়েছে তেমনি একই ধারায় অন্ধ ভারত বিরোধিতাকে পুঁজি করে নিজেদের রাজনীতি পরিচালনা করতে চেয়েছে সব সময়। বাংলাদেশের রাজনীতি বহুল পরিমাণে উথাল-পাতাল অবস্থার মধ্য দিয়ে কালাতিপাত করেছে।

অবশেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার স্থপতিকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের পথও সুগম হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হতে থাকে। দিনটিকে সরকারি ছুটির দিনও ঘোষণা করা হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে এ ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন বাতিল করে দেয়া হয়। এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি চূড়ান্ত অবমাননা ও অমর্যাদা। পরে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কারণ বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। টানা প্রায় ১১ বছর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, এগিয়ে যাচ্ছে গণতন্ত্রের পূর্ণতার পথে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, তার স্বপ্নকে পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশকে বলা হয় এশিয়ার বাঘ। উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা আশাবাদী। আমাদের এই অর্জনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হেবে। তবে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা এখনো শেষ হয়নি। এটা বাংলাদেশের অব্যাহত মুক্তিযুদ্ধেরই অংশ। বস্তুত, ১৯৭১, ১৯৭৫ ও ২০০৪-এর আগস্ট গণহত্যা ও হত্যা প্রচেষ্টার লক্ষ্য এক, শত্রম্ন এক কেবল তাদের চামড়ার রং ও মুখের ভাষা আলাদা। এ স্বদেশি পাকিস্তানিদের রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করতে না পারলে এবং বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ও সদাজাগ্রত রাখতে না পারলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ অসমাপ্তই থেকে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62237 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1