প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে পাহাড় ও সাগরঘেরা উন্নতমানের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ভেনু্য চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। ২০০৪ সালে আইসিসি অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ভেনু্যটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গণে যাত্রা শুরু। ২০০৬ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখে স্টেডিয়ামটি। ২০১১ বিশ্বকাপের জন্য প্রচুর সংস্কারও হয়। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক জায়ান্ট স্কিন, ইলেক্ট্রনিক স্কোর বোর্ড, প্রেসিডেন্ট বক্স, ফ্লাড লাইট, হসপিটালিটি বক্স, বিশাল ড্রেসিং রুম, ট্রাসটেল গেইট, মিডিয়া সেন্টারসহ আরও অনেক কিছু। এরই সঙ্গে পূর্বদিকে দ্বিতল গ্যালারি এবং পুরো গ্যালারিতে আছে বিভিন্ন রঙের চেয়ার। ২০১১ বিশ্বকাপে এবং ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ ভেনু্যতে। প্রতিবছর এখানে আন্তর্জাতিক বেশকিছু ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রামের মানুষের কাছে এ স্টেডিয়ামটি একটি আবেগও বটে। এখানে নাকি বাংলাদেশ বেশি জেতে। আর চট্টগ্রামের ক্রিকেটপ্রেমীরাও এটাকে বাংলাদেশের লাকি গ্রাউন্ড বলে। অথচ দর্শকদের মুখে স্টেডিয়ামের বেহাল দশা নিয়ে রয়েছে ক্ষোভ। বর্তমানে ভেনু্যটির বেহাল দশা নিয়ে সবাই চিন্তিত। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ক্রিকেট ভক্তরা এটা মানতেই পারছে না।
বেহাল দশার কথা যদি বলতেই হয়, তবে প্রথমেই বলতে হয় গ্যালারির ভাঙা চেয়ার নিয়ে। ১৫ হাজার চেয়ারের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজারই ভাঙা। সেটা আপনি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলেই দেখতে পাবেন। কোনো কোনো গ্যালারিতে দেখা যাবে চেয়ারের অবকাঠামো পর্যন্ত উঠে গেছে। এ ছাড়া ক্রিকেটারদের প্র্যাকটিসের ইনডোরে ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ে। ভারী বর্ষণ হলে বাদ যায় না হসপিটাল বক্সও। এরপর লক্ষ্য করতে পারেন ফ্লাড লাইটের ওপর। দেখবেন বেশকিছু লুমিনার ভাঙা।
এ ছাড়া যেটা সবচেয়ে নোংরা বিষয়, সেটা হচ্ছে টয়লেট। এ স্টেডিয়ামে বেশকিছু টয়লেট দুর্গন্ধময় ও ব্যবহার অনুপযোগী। যা নিয়ে ইতিপূর্বে অনেকেই অভিযোগ করেছে। এ সব মিলিয়ে একটি আন্তর্জাতিক ভেনু্যর যে অবস্থা থাকা দরকার তা নেই এতে। আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলে বিসিবি সংস্কার করে। কিন্তু বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন হলে তা বিসিবি ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অবহিত করে। ২০১১ সালের পর বড় ধরনের কোনো সংস্কার হয়নি। তবে ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে কিছুটা সংস্কার হয়েছিল।
২০১১ সালে আইসিসি বিশ্বকাপের ম্যাচে ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ দল। ২০১৪ সালে এখানে আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে জয় পায় টিম বাংলাদেশ। এ ছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে একটি জয় রয়েছে এ ভেনু্যতে বাংলাদেশ দলের। এ সব মিলিয়ে এ ভেনু্যতে বাংলাদেশ দলের টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ ম্যাচ নিয়ে ভালো করার পাশাপাশি তামিম-মুশফিকদের ব্যক্তিগত অনেক সুখস্মৃতিও রয়েছে। এ কারণে টাইগারদের লাকি গ্রাউন্ড বা পয়া মাঠ বলা হয় চট্টগ্রামের এই ভেনু্যকে। কিন্তু এই লাকি গ্রাউন্ডকে রক্ষা করতে হলে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের দর্শকরাও দেয়া ভেঙে ফেলে। তাই আমাদের স্টেডিয়াম রক্ষা করতে হবে আমাদের। স্টেডিয়ামের টয়লেট নোংরা রাখি আমরাই। তাই এসব সুন্দর রাখার দায়িত্বও আমাদের। এ ছাড়া চট্টগ্রামের মেয়র মহোদয়, বিসিবি এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এ স্টেডিয়ামের প্রতি নজর দেয়া উচিত। বড় পরিসরে সংস্কার করলে এটাও বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি স্টেডিয়াম করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু প্রশাসনের সুনজর। চট্টগ্রামে ক্রিকেট স্টেডিয়াম দু-চারটা নেই। আছে এই একটাই। বর্তমান সরকার চাইলে এটাকে আরও নন্দিত এবং সুসজ্জিত করতে পারে। চট্টগ্রামের মানুষ এবং ক্রিকেটপ্রেমীরা এটাই কামনা করছে।