আজকের যায়যায়দিন

চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ছয় মাস না যেতেই পুরান ঢাকায় আবারও একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটল। যদিও ঈদের ছুটিতে কারখানাটি বন্ধ থাকায় হতাহতের আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এভাবে একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে থাকলে তার ভয়াবহতা আমলে নেয়ার বিকল্প নেই বলেই আমরা মনে করি। উলেস্নখ্য, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালবাগের পোস্তার চাঁদনীঘাট এলাকায় পস্নাস্টিক কারখানাটিতে আগুন লাগে। মুহূর্তেই আশপাশে ছড়িয়ে থাকা টায়ার ও পলিথিনে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে এই বিষয়টিও বলা দরকার যে, সরু রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলের কাছে যেতে পারেনি। তা ছাড়া আশপাশে পানির উৎস না থাকায় বেশ বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।

আমরা বলতে চাই, এর আগে গত ২০ ফেব্রম্নয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অন্তত ৬৯ জন নিহত হয়েছিল। পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই অগ্নিকান্ডে। আর ঘটনার পরপরই পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোর জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগও লক্ষণীয় ছিল, কিন্তু কার্যত কাজের কিছুই হয়নি এমনটি জানা যাচ্ছে। উল্টো রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে অভিযান পরিচালনা করতে যাওয়া কর্তাব্যক্তিদের। আবার যখন কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা সামনে এলো তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। একই সঙ্গে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগেও কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন লেগেছে মার্কেট ও গার্মেন্টসে। এমনকি অত্যাধুনিক ও ডিজিটাল বলে দাবিদার সুপার মার্কেটেও একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ের অগ্নিকান্ডের এমনটি সামনে এসেছে যে, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না; এমনকি পানিও নয়। এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল মূলত রাসায়নিক দ্রব্যের অপরিকল্পিত গুদাম ও পস্নাস্টিক কারখানার কারণে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনাও রয়েছে। আমরা মনে করি, একের পর এক যেভাবে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে তা আমলে নিয়ে এ ধরনের ঘটনা রোধে উদ্যোগী হতে হবে। বলা দরকার যে, এবারের ঘটনায় জানা গেছে লালবাগের পোস্তার চাঁদনীঘাট এলাকায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে টিনের ঘরের ওই কারখানায় আগুন দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় আশপাশের আরও কয়েকটি কারখানায় আগুন ধরে যায়। আগুনের লেলিহান শিখা দেখে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। এ ছাড়া এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ খবরে উঠে এসেছে যে, কারখানাটি অবৈধভাবে চলছিল।

সর্বোপরি, লালবাগের পোস্তার চাঁদনীঘাট এলাকায় পস্নাস্টিক কারখানায় আগুন লাগার এই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছে কমিটিকে। আমরা মনে করি, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়া অপরিহার্য। এ ছাড়া অগ্নিকান্ডের হাত থেকে রক্ষা পেতে আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোরও পদক্ষেপ নিতে হবে। আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম স্থানান্তর বাধ্যতামূলক করাসহ বাসাবাড়ি, অফিস, সবক্ষেত্রেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখা দরকার, বিভিন্ন সময়ে আগুনে যেভাবে প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটে তা অত্যন্ত পরিতাপের। সঙ্গত কারণেই বিষয়টিকে আমলে নিতে হবে। অগ্নিকান্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।