আবারো পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ৭ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ১৫ টাকা। যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের গত শুক্রবারের বাজার দরের প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে। কোরবানির ঈদের পর হঠাৎ করেই নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়েছে দেশের স্বল্পআয়ের মানুষ। ধারণা করা হয়েছিল কোরবানির ঈদের সময় পেঁয়াজের দাম বাড়বে। বাজার বিশেষজ্ঞরাও এই ধরনের অভিমত দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল কোরবানির ঈদের সময় পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ঈদের পর হঠাৎ কেন পেঁয়াজের দাম এত বেড়ে গেল তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা হওয়ার কারণে পেঁয়াজের আমদানি কমে গেছে। তারা চাহিদা মতো পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কথা সত্য আমদানিকৃত পেঁয়াজ প্রায় পুরোটাই ভারতনির্ভর। এর আগে আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি ভারতে যদি পেঁয়াজের দাম থাকে ৮ টাকা তবে আমাদের এখানে ওই পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে আমদানিকৃত পেঁয়াজের এত মূল্য পার্থক্য থাকবে কেন? এখানে যে অতি মুনাফালোভী অসৎ ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
বাজারে প্রচুর সরবরাহ রয়েছে পেঁয়াজের, তারপরেও কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাজার ভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আসলে পণ্যের সরবরাহ বা সংকটের সঙ্গে দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা হচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীদের অতি লোভী মানসিকতা। অতীতেও আমরা লক্ষ্য করেছি, তারা একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কেটেছে এবং দুবছর আগে পেঁয়াজের কেজি হয়েছিল ১২০ টাকা। এটা হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি। এরা জনগণের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। এরা বাজারসন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রম্নত ধনী হবে এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। ফলে তাদের কাছে দেশের অসহায় জনগণ জিম্মি হয়ে পড়ে। ক্ষেত্র বিশেষ সরকারও তাদের কাছে জিম্মি। বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, আমরাও সম্পাদকীয় কলামে বহুবার লিখেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। জনগণকে অসহায়ত্বে বা জিম্মিদশায় ফেলে দেয়া কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ নয়। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে ভালো কথা, সেই উন্নয়নের সুফল যেন সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারে সেদিকে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সরকারের সেদিকে বিশেষ মনোযোগ আছে বলে মনে হয় না। তা হলে নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ বাড়বে কেন? যেভাবেই হোক পেঁয়াজের দাম কমানোসহ দ্রম্নত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।