বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য

উদ্বেগজনক এ প্রবণতা রোধ করুন

নতুনধারা
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘদিন পর হলেও উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে অনেকদূর এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এ কারণে দেশকে প্রতিনিয়ত নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এরপর আয়বৈষম্য দিন দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসছে। আয়বৈষম্যের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে একটি উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশে পরিণত হবে, যা শুভ ফলদায়ক হতে পারে না। একটি দেশের গরিব শ্রেণি যদি আরও গরিব হয়ে পড়ে তাহলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কাদের স্বার্থে- এমন প্রশ্নও অমূলক নয়। 'বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য : সমাধান কোন পথে' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এমন প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট অবকাশ আছে বলে প্রতীয়মান হয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ নিজেদের শিল্প-ব্যবসায় উদ্যোগী করতে চায় একটা নিরাপদ পরিবেশ, অন্তত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, বিশেষভাবে সামগ্রিক অপরাধমুক্ত পরিবেশের। মারামারি, খুনোখুনি, নারী নির্যাতন, শিশু-কিশোর-কিশোরী-তরুণী নির্যাতন রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর হাতে দমন, ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনা, সার্বিকভাবে সুস্থ বিনোদনের সমাজ কায়েম ও অপসংস্কৃতি প্রতিরোধ। পুলিশসহ সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আইনানুগ আচরণ নিশ্চিত করা, বিচারব্যবস্থার সুষ্ঠুকরণ, অপহরণ, গুম, খুন, ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে হত্যাকান্ড বন্ধ- এসবই সুষ্ঠু অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে 'সুশাসন নিশ্চিত' এবং 'দারিদ্র্যের হার কমছে' এমন তথ্য উচ্চারণ করা হলেও চিন্তার বিষয় হচ্ছে, যখন 'আয়বৈষম্য, সম্পদবৈষম্য ও ভোগবৈষম্য' বিষয়টি বারবার আলোচনায় উঠে আসে তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক হতে পারে না।

অর্থনীতিশাস্ত্রে আয়বৈষম্য পরিমাপের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত পরিমাপক হলো, জিনি সহগ, যেটার মান ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছিল। জিনি সহগের মান বাড়লে তা মহাবিপদ সংকেত হিসেবে বিবেচিত হয় যে, দেশে আয়বৈষম্য বেড়েই যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে একটি উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। যেসব দেশের জিনি সহগ শূন্য দশমিক ৫ পেরিয়ে যায়, সেসব দেশকে উন্নয়ন তত্ত্বে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ হিসেবে অভিহিত করা হয়। বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশও এর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে; যা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকেই নির্দেশ করছে।

তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮.১৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে বলে সরকারিভাবে যে প্রাক্কলন হয়েছে তাতে বিশ্বের অন্যতম গতিশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আর আয়বৈষম্যের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের উচ্চবিত্ত কিছুসংখ্যক মানুষের মধ্যে কুক্ষিগত হয়ে আছে বেশির ভাগ সম্পদ। এখন মাত্র ২৫৫ জন ব্যক্তির কাছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ সম্পদ আটকে আছে। দেশে কোটিপতির সংখ্যা দ্রম্নত বাড়ছে। এর পেছনে ন্যক্কারজনক পন্থা হলো দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হওয়া। আর এ প্রবণতা যে কোনো উপায়ে রোধ হওয়া আবশ্যক।

অস্বীকারের উপায় নেই যে, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদের ১০ বছরে দারিদ্র্য বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। সাধারণ মানুষের মাথাপিছু গড় আয়ও বেড়েছে এই সময়ে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগে জাতীয় প্রবৃদ্ধি আগের তুলনায় বাড়লেও আয়বৈষম্য ক্রমেই ঊধ্বর্মুখী কেন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি বলেই আমরা মনে করি। দেশকে দ্রম্নত উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে হলে দ্রম্নত 'বৈষম্য নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি কৌশল' গ্রহণ করার বিকল্প থাকা উচিত নয় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি উন্নয়নের পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো শনাক্ত করে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, সামাজিক অসমতা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আয় বৈষম্য থেকে আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের সূচনা। বৈষম্যের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, কর্ম ও বিনিয়োগ থেকে যারা পিছিয়ে, তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে অক্ষম। কাউকে পিছিয়ে রেখে সুষম সামাজিক উন্নয়ন কি সম্ভব? মনে রাখা দরকার, সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত না হলে স্বাধীনতার তার মৌলিকত্ব হারাবে, এমনটি মনে হওয়া অযৌক্তিক নয়। সংগত কারণে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের কার্যকর উদ্যোগ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<65975 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1