আজকের যায়যায়দিন

সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা নিয়ে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই এমন চিত্র পরিলক্ষিত হয় যে, প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। কেউ আবার পঙ্গুত্ব বরণ করছে, সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। সম্প্রতি 'বদলি' চালকসংক্রান্ত খবর সামনে এসেছে- যা ভয়ানক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ?গত ২৭ আগস্ট ট্রাস্ট সার্ভিসের যে বেপরোয়া বাস বাংলামটরের ফুটপাতে বিআইডাবিস্নউটিসির কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায়কে চাপা দিয়েছিল- সেটা চালাচ্ছিলেন একজন 'বদলি' চালক! পুলিশের কাছে ধরাপড়া চালক মোরশেদ স্বীকার করেছেন এ কথা। অর্থাৎ তিনি মূল চালকের পরিবর্তে 'বদলি' চালক হিসেবে গাড়িটি নিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে আরও ভয়ানক বিষয় হলো, ওই দিনই প্রথম বাসের স্টিয়ারিং ধরার অভিজ্ঞতা ছিল তার!

আমরা মনে করি, 'বদলি' চালকসংক্রান্ত এ ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হলে তখন তা আমলে নেয়া অপরিহার্য এবং সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতাকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ কথা ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে না পারলে সড়ক পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর উত্তরায় ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের যে বেপরোয়া বাস সংগীতশিল্পী পারভেজ রবকে ফুটপাত ঘেঁষে চাপা দিয়ে হত্যা করে, পরে জানা যায় সে বাসটিও চালাচ্ছিলেন 'বদলি' চালক। একই দিন মহাখালীতে ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের বেপরোয়া বাস বিদু্যতের খুঁটি ভেঙে ফুটপাতে তুলে হত্যা করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফারহা নাজকে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই বাসটি চালাচ্ছিল ১৫-১৬ বছরের এক কিশোর। এ ছাড়া গত সোমবার দুপুরে চেয়ারম্যানবাড়ি ক্রসিংয়ের কাছে ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের বাস একটি সিএনজি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এ বাসটিও চালাচ্ছিল ১৪-১৫ বছরের এক কিশোর। এর আগে গত ১৯ মার্চ রাজধানীর নদ্দায় সুপ্রভাত পরিবহনের যে বাসটি জেব্রা ক্রসিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরারকে চাপা দিয়েছিল, সে বাসটিও চালাচ্ছিলেন বদলি চালক!

আমরা বলতে চাই, এই ঘটনাগুলো আমলে নিলে এটা স্পষ্ট হয়, 'বদলি' চালকসংক্রান্ত সৃষ্ট পরিস্থিতি ভয়াবহতা কীরূপ। এমনটিও জানা গেছে, রাজধানীর বাস সার্ভিসে এখন 'বদলি' চালক প্রথা বেশ জনপ্রিয়। এসব বাস সার্ভিসের বাস আগের মতোই দিন চুক্তিতে চলছে। আর দিন চুক্তির চালকরা সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে গাড়ি তুলে দিচ্ছেন বদলি চালকের হাতে! এ ক্ষেত্রে এটাও আমলে নেয়া দরকার, খোদ পরিবহন নেতারা বলছেন, ঢাকায় এখন যেসব কোম্পানির বাস চলছে, সেগুলোর ওপর মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেই এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রম্নত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এমনিতেই অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, যত্রতত্র ওভারটেকিংসহ নানা কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ হচ্ছে না, আবার যদি 'বদলি' চালকসংক্রান্ত সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা দূর না হয় তবে তা আগামী দিনের জন্য আরও ভয়ানক হতে পারে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। সঙ্গত কারণেই যত দ্রম্নত সম্ভব বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সামগ্রিকভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তা রোধ করতে হলে সব ধরনের অনিয়ম দূর করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখার বিকল্প নেই।

চাণক্য শ্লোক