শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এ অভিযান অভিনন্দনযোগ্য
নতুনধারা
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রাজধানীতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছের্ যাব। এ অভিযানে বুধবার বিকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া গ্রেপ্তার হন। সাধারণ কর্মী থেকে এই খালেদ হয়ে উঠেছিলেন অপকর্মের গডফাদার, রাজধানীর উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে আধিপত্য ছিল তার।র্ যাব খালেদের বাড়ি থেকে তিনটি অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবাও উদ্ধার করেছে। একই সময়ে ফকিরাপুল এলাকায় খালেদের নিয়ন্ত্রিত ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৪২ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়র্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জব্দ করা হয় মাদকদ্রব্য ও জুয়ায় ব্যবহৃত নগদ টাকা। রাতে আরও তিনটি ক্লাব কাম ক্যাসিনোতে অভিযান চালায়র্ যাব। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, দল ও অঙ্গসংগঠনের ভেতর থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দেয়ার পর এ অভিযান শুরু হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের এ অভিযান অভিনন্দনযোগ্য।

গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, ইয়ংমেন্স ক্লাব থেকে আটক ১৪২ জনের মধ্যে ৩১ জনকে এক বছরের এবং ১১১ জনকে ছয় মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আটককৃতরা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এদের মদ পানের লাইসেন্স নেই। এই ক্যাসিনো থেকে জুয়া খেলায় ব্যবহার হওয়া ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকাও জব্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে থাকা 'গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ' ক্যাসিনোতে পরিচালিত অভিযানে ক্যাসিনোটি বন্ধ থাকায় জুয়া খেলার সরঞ্জাম জব্দ করে ক্যাসিনোটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম জব্দ করে এবং এটিও সিলগালা করে দেয়। এখান থেকে ২০ হাজার ৫০০ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গুলিস্তান এলাকার পীর ইয়েমেনি মার্কেটের পাশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের অবৈধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায়র্ যাব। সেখান থেকে ৪০ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়র্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এখান থেকে মাদক, নগদ অর্থ, কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ক্যাসিনোসামগ্রী জব্দ করা হয়।

তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ৬০টি স্পটে অবৈধ ক্যাসিনো (জুয়ার আসর) ব্যবসা চলছে। অভিযোগ আছে কেন্দ্রীয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের একশ্রেণির নেতা ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও মাঝেমধ্যে এখানে অংশ নেন। ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য নেপাল, থাইল্যান্ডসহ চারটি দেশ থেকে প্রশিক্ষিত নারীদের আনা হয়। ক্যাসিনোগুলোতে প্রতি রাতেই কোটি কোটি টাকার খেলা হয়। এই জুয়ার আড্ডাগুলো সম্পর্কে সম্প্রতি প্রমাণসহ গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়া হয়। এসব জেনে চরম ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে বুধবার অভিযানের পর অপকর্মের সঙ্গে জড়িত যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। যুবলীগের কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছেন এমন তথ্যও এসেছে গণমাধ্যমে।

আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী দলীয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিকব্যবস্থা নেয়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা প্রধানমন্ত্রীর 'ক্ষমতার অপব্যবহার, অপকর্ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স' নীতিরই বহির্প্রকাশ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারাই দাম্ভিকতা দেখাবে, মানুষকে কষ্ট দেবে, সরকারের সুনাম নষ্ট করবে তাদের এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। আমরাও লক্ষ্য করেছি, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নামে দুর্বৃত্তপনা ও নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ড মাতৃসংগঠন আওয়ামী লীগই শুধু নয়- সরকারের জন্যও বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে দল অঙ্গসংগঠনগুলো কলুষমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। প্রধানমন্ত্রী এর আগেও বহুবার বলেছেন, অপরাধীদের কোনো দল নেই, তারা অপরাধী। ফলে প্রত্যাশা থাকবে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত হবে। অন্যদিকে, দল ও অঙ্গসংগঠনের ভেতর থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থান অন্যদের শুধরে চলার ক্ষেত্রে সতর্কবাণী হিসেবে বিবেচিত হবে- এমনটিই আশা করা যায়। পাশাপাশি দলীয় দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে সঠিক ও সময়োচিত পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনমনে অভিনন্দিত হবেন- এমনটিই আমাদের বিশ্বাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67460 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1