শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে কর্মসংস্থান

ইতিবাচক এ ধারা অব্যাহত থাক
নতুনধারা
  ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিবেচিত। আর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রম রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ একদিকে যেমন বিপুল অঙ্কের রেমিট্যান্স অর্জন করছে, অপরদিকে দেশের বিপুল বেকারত্বও লাঘব হচ্ছে। সঙ্গত কারণে, বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব অপরিসীম। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে ৫৩ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। আর এক মাসে বিপুলসংখ্যক শ্রম রপ্তানির বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান বু্যরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী ১৯৭৬ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি লোক বিশ্বের ১৬০টি দেশে গেছেন। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৫৩ হাজার ১৮১ জন কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। এ সময়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন মোট চার লাখ ৭৭ হাজার কর্মী। ২০১৭ সালে ১০ লাখের বেশি এবং ২০১৮ সালে সাত লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছেন বলেও বিএমইটি-র তথ্যে জানা যায়। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। আর অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আমরা জানি, সরকার যেমন বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে, তেমনইভাবে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও ঈদ, পূজা এবং বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করেও প্রবাসীরা দেশে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। অন্যান্য বছরে ঈদের পরে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান থাকলেও এবার ঈদের পরেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপরও নানান সময়ে জনশক্তি রপ্তানিতে ধসসহ বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের নানান সমস্যার কথা উঠে আসে গণমাধ্যমে। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরও আন্তরিক হওয়া অপরিহার্য।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশি কর্মীরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। প্রবাসে তাদের সুনাম রয়েছে এবং সারা বিশ্বে তাদের চাহিদা বেশি। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী শ্রম রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে, এমন তথ্যও পাওয়া যায়। আমরা মনে করি, জনশক্তি রপ্তানিতে যে সব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূরীকরণে উদ্যোগী হতে হবে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, ভিসা বেচাকেনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিতে হবে। এতে অভিবাসন ব্যয় কমে আসবে। অভিবাসীদের ফাইল অনুমোদনে যেন সময়ক্ষেপণ না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের আরও যুগোপযোগী নীতিগ্রহণ করতে হবে। রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স প্রদানে সরকারকে অবশ্যই ওই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাচাই করতে হবে। তার অফিস আছে কি না, তার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে কি না! অন্তত দেশি প্রতিষ্ঠানে সহযোগী হিসেবে তার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। মূলত যারা দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারবে তাদেরই এ দায়িত্ব দেয়া উচিত। বিদেশে যাওয়ার সময় সাধারণ মানুষ যেন প্রতারিত না হন, সে জন্য নজরদারি জোরদারের পাশাপাশি ব্যাপক প্রচারণাও চালাতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, নিত্যনতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় প্রতিবছর চার-পাঁচ লাখ কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন এবং তাদের প্রেরিত অর্থে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে। আবার এটাও জানা যায় যে, নানান কারণে মধ্যপ্রাচ্য কিংবা মালয়েশিয়া থেকেও বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক ফেরত এসেছে। এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। নতুন নতুন শ্রমবাজারের সন্ধান করতে কূটনীতিক তৎপরতা জোরদার করা যেতে পারে। এটা স্পষ্ট যে, সরকার জনশক্তি রপ্তানি খাতকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অতীতের যে কোনো সময় থেকে পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। যেহেতু রেমিট্যান্স দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, সেহেতু এ খাতের দায়িত্বশীলরা আরও আন্তরিক হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<69925 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1